১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস অনুচ্ছেদ
১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস অনুচ্ছেদ |
বিজয় দিবস অনুচ্ছেদ
বিজয় দিবস বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি স্মরণীয় দিন। বাঙালি জাতির হাজার বছরের শৌর্যবীর্য এবং বীরত্বের এক অবিস্মরণীয় গৌরবময় দিন। ১৯৭১ সালে দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের পর ১৬ই ডিসেম্বর অর্জিত হয় কাঙ্ক্ষিত বিজয়। আমরা পেয়েছি স্বাধীন সার্বভৌম একটি দেশ , একটি নিজস্ব মানচিত্র ও পতাকা। তাই এই দিনটিকে বিজয় দিবস বলা হয়। ১৯৭২ সাল থেকে বাংলাদেশে বিজয় দিবস রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা হয়। গর্ব ও আনন্দের সাথে এই দিনটিকে আমরা প্রতি বছর গভীর শ্রদ্ধার সাথে উদযাপন করি। এ বিজয়ের গৌবর ও আনন্দ অম্লান হয়ে থাকবে চিরদিন। কিন্তু এ বিজয় সহজে আসেনি। দীর্ঘপথ অতিক্রম করে অনেক ত্যাগ তিতিক্ষার ফলে এ বিজয় লাভ সম্ভব হয়েছে। বাহান্নর ভাষা আন্দোলনের রক্তাক্ত ইতিহাসের মধ্য দিয়ে বাঙালির ভাষাভিত্তিক জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ ঘটে। পরে দীর্ঘ দুই দশক ধরে চলে পাকিস্তানি স্বৈরাচারী জঙ্গিবাহিনীর বিরুদ্ধে আন্দোলন-সংগ্রাম। বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার জন্য চূড়ান্ত যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে তোলেন। ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) সমবেত জনসমুদ্রে জাতির উদ্দেশে ঐতিহাসিক ভাষণ দেন বঙ্গবন্ধু। তাঁর এই ভাষণ জাতিকে অনুপ্রাণিত করে স্বাধীনতার জন্য সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তান সরকার গভীর রাতে পূর্ব পাকিস্তানের (বর্তমান বাংলাদেশ) নিরীহ জনগণের উপর হামলা চালায়। ঢাকার বিভিন্ন স্থানে গোলাবর্ষণ করা হয়, অনেক স্থানে নারীদের উপর পাশবিক নির্যাতন চালানো হয় এবং অনেক স্থানে পরিকল্পিতভাবে হত্যাকাণ্ড চালানো হয়। এমতাবস্থায় বাঙালিদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার অবস্থা সৃষ্টি হয় এবং অনেক স্থানেই আনুষ্ঠানিক ঘোষণার অপেক্ষা না করেই অনেকে যুদ্ধের প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। সেই রাত থেকেই সশস্ত্র প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল বাঙালি। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্য রাতে শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে গ্রেপ্তার হন। গ্রেপ্তার হবার একটু আগে ২৫শে মার্চ রাত ১২টার পর (২৬শে মার্চের প্রথম প্রহরে) তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রে স্বাক্ষর করেন যা চট্টগ্রামে অবস্থিত তৎকালীন ই.পি.আর এর ট্রান্সমিটারে করে প্রচার করার জন্য পাঠানো হয়। পরবর্তিতে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা পাবার পর আপামর বাঙালি জনতা পশ্চিম পাকিস্তানি জান্তার বিরুদ্ধে যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে এবং ভারতের অবিস্মরণীয় সমর্থনের দীর্ঘ ৯ মাস ধরে চলে মুক্তিসেনাদের সেই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ। যুদ্ধে প্রায় ত্রিশ লক্ষ বাঙালি জীবন বিসর্জন দেয়। অবশেষে ১৯৭১-এর ১৬ই ডিসেম্বর বাঙালির বিজয় সৃষ্টি হয়। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান পাকিস্তানিবাহিনীর প্রায় ৯১,৬৩৪ জন সদস্য বাংলাদেশ ও ভারতের সমন্বয়ে গঠিত যৌথবাহিনীর কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্ম-সমর্পণ করে। এর ফলে পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশের নামে নতুন স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। পৃথিবীর মানচিত্রে নতুনভাবে চিহ্নিত হয় লাল- সবুজের এই প্রিয় ব-দ্বীপ। এ কারণেই প্রতি বছর আমরা ১৬ই ডিসেম্বরকে বিজয় দিবস হিসেবে পালন করি এবং ডিসেম্বর মাসকে বিজয়ের মাস বলি। ১৯৭২ সালের ২২ জানুয়ারি প্রকাশিত এক প্রজ্ঞাপনে দিনটিকে বাংলাদেশে জাতীয় দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয় এবং সরকারিভাবে ছুটি ঘোষণা করা হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে যারা নিহত হয়েছেন তাদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের অংশ হিসেবে ঢাকার সাভারে অবস্থিত জাতীয় স্মৃতিসৌধে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মী, বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ সর্বস্তরের মানুষ পুষ্পস্তবক অর্পণ করে থাকেন। ১৬ই ডিসেম্বর এই দিন উপলক্ষে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজের আয়োজন করে থাকে। এছাড়া, দেশের প্রতিটি উপজেলায় বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজ, বিশেষ আলোচনা অনুষ্ঠান, মতবিনিময় সভা, দেশের অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এদিন বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। আয়োজন করা হয়। দেশের প্রধান সড়কগুলো জাতীয় পতাকা দিয়ে সাজানো হয়। এই দিনে ঢাকার সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে বিশেষ সম্মান প্রদর্শন করা হয়।
আর পড়ুন - মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে বক্তব্য
বাংলাদেশ রেডিও, বাংলাদেশ টেলিভিশন ও অন্যান্য বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলও এদিন বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে৷ দীর্ঘ ৯ মাস চলাকালীন যুদ্ধে দেশের অনেক বীর সাহসী মানুষ তাদের জীবন উৎসর্গ করেন, এবং তাদের এই আত্মত্যাগের মাধ্যমেই দেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়েছিল তাদের আমার কখনও ভুলবো না। তাই আমাদের জাতীয় জীবনে বিজয় দিবসের চেতনা ছড়িয়ে। স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে দেশের জন্যে কাজ করলে বিজয় দিবসের মাহাত্ম্য আরও বৃদ্ধি পাবে।