রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ি
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ি |
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ি কুষ্টিয়া কুমারখালী উপজেলার শিলাইদহ ইউনিয়নের খোরশেদপুর গ্রামে অবস্থিত কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহাসিক এই বাড়িটি। যাকিনা শিলাইদহ রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি হিসেবেও পরিচিত। কুষ্টিয়া শহর থেকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ি দূরত্ব ১৫ কিলোমিটার। প্রায় ৩৩ বিঘা আয়তনের রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি মূল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে আড়াই বিঘা জমিতে। তিনতলাবিশিষ্ট রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ি সর্বমোট আঠারোটি কক্ষ আছে। ভবনের তৃতীয় তলায় ছিল কবিগুরুর লেখা ঘর। আর কুঠিবাড়ির ছাদ থেকে কবিগুরু সূর্যোদয় সূর্যাস্ত এবং জোসনা উপভোগ করতেন। ১৮০৭ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পিতামহ প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর এ অঞ্চলে জমিদারি লাভ করেন। পরবর্তীতে ১৮৮৯ সালে থেকে ১৯০১ সাল পর্যন্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অনিয়মিত বিরতিতে এখানে আসতেন এবং সেই সময় তিনি জমিদারির কাজে পরিচালনা করতেন। সেই সময় এই কুঠিবাড়ি থেকেই তিনি সোনার তরী, চিত্রা, চৈতালি গ্রন্থ লিখেন এবং গীতাঞ্জলি কাব্যের ইংরেজি অনুবাদ শুরু করেন। ১৯৫৮ সাল থেকেই শিলাইদহে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ি প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে ছিল। বর্তমানে এটি শিলাইদহ রবীন্দ্র কুঠিবাড়ি জাদুঘর হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আর এই জাদুঘরে স্থান পেয়েছে কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিভিন্ন বয়সের ছবি, ব্যবহার্য জিনিসপত্র যেমন চঞ্চলা, চপলা নামে দুটি স্পিডবোর্ড, আটটি বেহারার পালকি, টি-টেবিল, কাঠের চেয়ার , পালঙ্ক এবং কবি আঁকা বিভিন্ন চিত্রকর্ম।
কুঠিবাড়ি |
কুঠিবাড়ির সময়সূচী ও প্রবেশ মূল্য
গ্রীষ্মকালীন সময়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ি জাদুঘর প্রতিদিন সকাল ১০ টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত খোলা থাকে । আর শীতকাল সময়ে প্রতিদিন সকাল ৯ টা থেকে বিকাল ৫ টা পর্যন্ত খোলা থাকে। তবে প্রতিদিন বেলা ১টা থেকে ১:৩০ পর্যন্ত সাময়িকভাবে জাদুঘরটি বন্ধ করা থাকে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ি এই জাদুঘরটি সপ্তাহে প্রতি রবিবার পূর্ণদিবস বন্ধ থাকে এবং সোমবার বেলা দুইটা থেকে খোলা হয়ে থাকে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কুঠিবাড়ি জাদুঘরে প্রবেশমূল্য জনপ্রতি ১৫ টাকা, মাধ্যমিক পর্যায়ে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য প্রবেশ মূল্য ৫ টাকা, সার্কভুক্ত দেশের দর্শনার্থীদের জন্য ৫০ টাকা এবং অন্যান্য সকল বিদেশী পর্যটকদের জন্য টিকেট মূল্য ১০০ টাকা।
শিলাইদহ কুঠিবাড়ি |
কুঠিবাড়ি যাওয়ার উপায়
ঢাকা থেকে কুষ্টিয়া। ঢাকা থেকে যেতে চাইলে বাস-ট্রেনে দুইভাবে যেতে পারবেন। বাসে গেলে কল্যাণপুর বাস স্ট্যান্ড থেকে বাসে কুষ্টিয়া মজমপুর গেট এ নেমে যেতে হবে বাসের ভাড়া ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা। ট্রেনে যেতে চাইলে সুন্দরবন এক্সপ্রেস, চিত্রা এবং বেনাপোল এক্সপ্রেসে যেতে পারবেন। সুন্দরবন এক্সপ্রেস সকাল ৮:১৫ মিনিটে, চিত্রা সন্ধ্যা সাতটায় এবং বেনাপোল এক্সপ্রেস রাত ৮:১৫ মিনিটে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে ছেড়ে যায়। ট্রেনের আসন ভেদে টিকিটের মূল্য ৩৬০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা। ট্রেনে যেতে চাইলে আপনাকে পোড়াদহ বা ভেড়ামারা স্টেশনে নামতে হবে। ভেড়ামারা বা পোড়াদহ থেকে বাস বা সিএনজিতে করে কুষ্টিয়া শহরে আসতে হবে। কুষ্টিয়া থেকে অটোরিকশা বা সিএনজি করে সহজেই শিলাইদহ রবীন্দ্র কুঠিবাড়িতে যেতে পারবেন।
কোথায় থাকবেন?
কুষ্টিয়া শহরে মোটামুটি মানের বেশকিছু আবাসিক হোটেল পেয়ে যাবেন। আপনাদের পছন্দমত যেকোন হোটেলে থাকতে পারবেন আপনি। একটু ভালো মানের হোটেল খুঁজতে চাইলে রিভার ভিউ , হোটেল নূর ইন্টারন্যাশনাল, এছাড়া মজমপুর ও নএস রোডে বেশকিছু ভালো মানের হোটেল পেয়ে যাবেন। আপনার বাজেট এবং সুবিধামতো আপনি সেইসব হোটেলগুলোতে থাকতে পারেন।