১৫ আগস্ট সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বক্তৃতা
যদি রাত পোহালে শোনা যেত,
বঙ্গবন্ধু মরে
নাই।
যদি রাজপথে আবার মিছিল হতো,
বঙ্গবন্ধুর মুক্তি
চাই।
তবে বিশ্ব পেত এক মহান নেতা,
আমার পেতাম
ফিরে জাতির পিতা।
১৫ ই আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আজকের এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রধান অতিথি, বিশেষ অতিথি, সম্মানিত আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ শিক্ষক শিক্ষার্থী ও সুধীমন্ডলী আসসালামু আলাইকুম। আজ স্বাধীনতার মহান স্থপতি, মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক, সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদত বার্ষিকী। আজকের এই দিনে গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করছি ৭৫ এর কালো রাতের সকল শহীদদের। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাৎ বার্ষিকীতে বিনম্র শ্রদ্ধায় তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। স্মরণ করছি মুক্তিযুদ্ধে শহীদ হওয়া ৩০ লাখ শহীদদের সরণ করছি ২ লক্ষ্য মা বোনদের। আজ শোকাবহ ১৫ই আগস্ট। জাতীয় শোক দিবস। বাঙালি জাতির ইতিহাসে বেদনাবিধুর ও বিভীষিকাময় একটি দিন।ইতিহাসের জঘন্যতম, নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটে ১৯৭৫ সালের এই কালরাতে। এ দিন গোটা বাঙালি জাতিকে কলঙ্কিত করেছিল সেনাবাহিনীর উচ্ছৃঙ্খল কিছু বিপথগামী সদস্য।দেশি-বিদেশি নানা ষড়যন্ত্রে বাংলার ভাগ্যাকাশে আবারও নেমে আসলে দুর্যোগের ঘনঘট। ১৫ই আগস্ট, তখনও ভোর হয়নি, আজানের ধ্বনিও উচ্চারিত হয়নি, ৩২নং সড়কের ৬৭৭নং বাড়িতে বঙ্গবন্ধু সহপরিবারের ঘুমন্ত। পরিকল্পনা মাফিক কিছু সংখ্যক দুষ্কৃতকারী সামরিক আমলা, ক্ষমতালোভী চক্র বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে আক্রমণ চালায়। ঘাতকের দল ট্যাংক, কামান, মেশিনগানসহ অত্যাধুনিক মাড়াস্ত্র নিয়ে একযোগে তাঁর বাসভবন লক্ষ করে বৃষ্টির মাতা গুলি চূড়াত থাকে। হঠাৎ বাইরে চিৎকার ও হট্টগোল আর গুলির শব্দে ঘুম ভেঙে যায় বঙ্গবন্ধুর পরিবারের। কিছু বুঝে ওঠার আগেই ঘাতকেরা চালায় পৃথিবীর সবচেয়ে নারকীয় হত্যাকাণ্ড। এদিন ঘাতকরা শুধু বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করেনি,একে একে হত্যা করে পরিবারের প্রতিটি সদস্যকে। নিষ্পাপ শিশু রাসেলও রক্ষা পায়নি। একজন ঘাতক রাসেলকে উপরতলা থেকে নিচে নিয়ে আসে। ভয়ে কাতর, বিহ্বল হয়ে পড়ে ৮ বছরের শিশু রাসেল। মায়ের কাছে যাবার জন্য কাঁদতে শুরু করে। কিন্তু ঘাতকের কাছে এই ছোট্ট শিশুর আকুতিতেও পাষাণ গলেনি বরং উপরে নিয়ে গুলি করে নির্মমভাবে হত্যা করে। এবার স্টেনগান থেকে বঙ্গবন্ধুর ক লক্ষ করে গুলি করে ঘাতকের দল।অকুতোভয় বঙ্গবন্ধু ঘাতকের বুলেটের সামনে দাঁড়িয়েও খুনিদের কাছে জানতে চেয়েছিলেন 'তোরা কী চাস? আমাকে কোথায় নিয়ে যাবি?' বঙ্গবন্ধুকে দেখেও হাত কাঁপেনি খুনিদের।গুলি চালিয়েছে খুনে চাহনীতে।ঘাতকের নির্মম বুলেট বিদ্ধ করে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বুকে। তাঁর বুক বিদীর্ণ করে ১৮টি গুলি। তাদের হাতে একে একে প্রাণ হারিয়েছেন বঙ্গবন্ধুর সহধর্মিনী বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছা মুজিব, বঙ্গবন্ধুর সন্তান শেখ কামাল, শেখ জামাল ও পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজি জামাল। পৃথিবীর এই জঘন্যতম হত্যাকাণ্ড থেকে বাঁচতে পারেননি বঙ্গবন্ধুর অনুজ শেখ নাসের, ভগ্নিপতি আবদুর রব তার ছেলে আরিফ, মেয়ে বেবি ও সুকান্ত, বঙ্গবন্ধুর ভাগ্নে যুবনেতা ও সাংবাদিক, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক শেখ ফজলুল হক মণি, তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মনি এবং আবদুল নাঈম খান রিন্টু ও কর্নেল জামিলসহ পরিবারের ১৬ জন সদস্য ও ঘনিষ্ঠজন। ৩২ নম্বর থেকে যেন সেই রক্তস্রোত বাংলার সবুজ-শ্যামলকে রাঙিয়ে গড়িয়ে পড়ে বঙ্গোপসাগরে। এ সময় বঙ্গবন্ধুর দু'কন্যা শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা বিদেশে থাকায় প্রাণে রক্ষা পান। যে কাজটি বর্বর হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীও করার সাহস করেনি, সেটিই করল এ দেশের কিছু কুলাঙ্গার। আবহমান বাংলার সমস্ত ঐতিহ্যকে পদদলিত করে এসব কুলাঙ্গার বাঙালিরা নামে এনে দেয় কলঙ্কের তিলক আর সুযোগের সদ্ব্যবহার করে পরাজিত শক্তি, স্বাধীনতা বিরোধীরা। স্বাধীনতাবিরোধী দেশি- বিদেশি চক্রের ষড়যন্ত্রের শিকার হলেন স্বাধীনতা আন্দোলনের মহানায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি যখন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে গঠন করতে দিনরাত নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছিলেন তখনই ঘটানো হয় এ নৃশংস ঘটনা। পরিসমাপ্তি ঘটে একটি ইতিহাসের।
প্রিয় সুধীবৃন্দ,
ঘাতকেরা বঙ্গবন্ধুকে সহপরিবারের হত্যার মধ্য দিয়ে সোনার বাংলা গড়ার স্বপ্নকে ধূলিসাৎ করতে চেয়েছিলো । কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে মুছে ফেললেও তাঁর অবদান জাতি কখনোই ভুলতে পারে না।পৃথিবীতে বাঙালি জাতি যতদিন থাকবে ততদিনই থাকবে বঙ্গবন্ধুর নাম, তার কর্ম। কারণ বাঙালি জাতির সমস্ত সত্তা জুড়ে বঙ্গবন্ধু।বঙ্গবন্ধু শুধু ব্যক্তি নন, বঙ্গবন্ধু এক অনুপ্রেরণার নাম, তিনি স্বাধীন বাংলার স্থপতি, তিনি আমাদের জাতির পিতা। আমাদের ভাবনায় অনুভবনের প্রতিনিয়ত তার দীপ্ত উপস্থিত। আমার বঙ্গবন্ধু একটি চেতনার নাম যিনি জাগ্রত আছেন প্রতিটি বাঙালির হৃদয়ে। আজ আমার বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে বলতে গেলে হয়তো মহাকাব্য হয়ে যাবে কিন্তু কথা ফুরাবে না।
আজ শোকাবহ ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস।বাঙালি জাতির শোকের দিন। ইতিহাসের কলঙ্কিত কালো দিন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট রাতে সংঘটিত হয়েছিল এ কলঙ্কিত অধ্যায়। বাঙালির মুক্তির মহানায়ক স্বাধীনতা সংগ্রাম শেষে যখন ক্ষত-বিক্ষত অবস্থা থেকে দেশটির পুনর্গঠন ও অর্থনৈতিক মুক্তি নিশ্চিত করতে চেয়েছিলেন তখনই ঘটানো হয় ইতিহাসের নির্মম এ ঘটনা। স্বাধীন বাংলাদেশে কোনও বাঙালি তাঁর নিরাপত্তার জন্য হুমকি হতে পারে বলে দৃঢ়বিশ্বাস করতেন না বঙ্গবন্ধু। সেজন্য তিনি গণভবনের পরিবর্তে থাকতেন ধানমণ্ডির ৩২ নম্বরের নিজ বাসভবনে।
আজ সরকারি ছুটি। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় আসার আগে রাষ্ট্রীয়ভাবে চরম অবহেলিত থাকতো জনক হারানোর দিনটি। দিনটি সরকারিভাবে শোক দিবস হিসেবে পালিত হবে। আজ জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে। সরকারি ও বেসরকারি ভবনে উড়বে কালো পতাকা।
পাকিস্তান
থেকে বাংলাদেশে প্রতিষ্ঠিত
করতে বঙ্গবন্ধু সময়
পেয়েছিলেন ২৩ বছর।
আর স্বাধীন বাংলাদেশের
নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মাত্র
সাড়ে তিন বছর।
ফলে ২৩ বছরের
নেতৃত্বে গড়া স্বদেশকে
তিনি সমমহিমায় সাজাতে
পারেন নি। বঙ্গবন্ধুর
সোনার বাংলা গড়ার
যে স্বপ্ন দেখেছিলেন
তা সফল করে
তুলতে পারলেই তার
প্রতি শ্রদ্ধা জানানো
সার্থক হবে। আসুন
সবাই মিলে মিশে
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের অসাম্প্রদায়িক
ক্ষুধা ওদারিদ্র্যমুক্ত সোনার
বাংলা গড়ে তুলি।
জাতীয় শোক দিবসে
এই হোক আমাদের
অঙ্গীকার ।সবাইকে অসংখ্য
ধন্যবাদ জাতীয়
শোক দিবসের আলোচনায়
আমাকে কিছু বলার
সুযোগদানের জন্য। বাংলাদেশ চিরজীবী হোক
জয় বাংলা জয়
বঙ্গবন্ধু ।