কোমরের ব্যথা দূর করার উপায়
কোমর ব্যথা বা ব্যাকপেইন এই ধরনের রোগ যাদের আছে, এই ধরণের সমস্যায় যারা পড়েছেন তাদের জন্য আজকের লেখাটি বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছে। আজকের লেখাতে আমরা বিশেষ কিছু টিপস কিছু ব্যায়াম এবং ঘরোয়া রেমিডি জানবো যে কোমর ব্যথা সমস্যা থেকে আমাদের দূরে রাখবে।
কোমরের ব্যথা দূর করার উপায় |
কোমর ব্যথা আসলে একটি বিরক্তিকর সমস্যা। কোমর ব্যথা হলে আপনি ঝুঁকে কোন কাজ করতে পারছেন না বা একবার বসলে উঠে দাঁড়াতে গেলে কোমরে প্রচন্ড ব্যথা হয়, টান লাগে ,ঘুমাতে গেলে অসুবিধা হয় কিংবা ঘুম থেকে ওঠার সময় হঠাৎ করেই কোমরে ব্যথা হয়। শুধুমাত্র যে বয়স্ক ব্যক্তিদের এমন সমস্যা হচ্ছে তা নয় ।অল্প বয়সীরাও এরকম কোমর ব্যথার সমস্যায় ভুগছেন এবং বয়স যত বাড়ছে এই ব্যথার তীব্রতা তত বাড়ছে । যাদের কোমরের ব্যথা আছে তারা অবশ্যই আজকের লেখাটি সম্পূর্ণ পড়ার চেষ্টা করুন কয়েকটা মিনিট ব্যয় করে এই লেখাটি পড়লে বন্ধু সারা জীবন আপনি এইধরনের কোমরের ব্যথার বিরক্তিকর অবস্থা থেকে দূরে থাকতে পারবেন, সুস্থ থাকতে পারবেন । তাহলে বন্ধু চলুন দেরী না করে আমরা জেনে নেই যে কি কি নিয়ম কি কি হোম রেমিডি আমাদের ফলো করতে হবে।
কোমর ব্যথার কারণ কি
কোমর
ব্যাথার বিভিন্ন কারণেই
হতে পারে। সাধারণভাবে
দেখা যায় মেরুদন্ডের
মাংসপেশি লিগামেন্ট মচকানো
বা আংশিক ছিড়ে
যাওয়া, দুই কশেরুকার
মধ্যবর্তী ডিস্কের সমস্যা
, কশেরুকার অবস্থান পরিবর্তনের
কারণে কোমর ব্যথা
হয়ে থাকেন। ভুল
ভাবে বসে দীর্ঘ
সময় চেয়ারে বা
কম্পিউটারের সামনে বসে
থাকা, ঝুঁকে দীর্ঘক্ষন
কাজ করা, উঁচু
হিলের জুতা পরা
এবং ভুল পদ্ধতিতে
ভারী জিনিস ওঠানামা
করার কারণে কোমর
ব্যথা হয়ে থাকে,
একটানা দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে
কাজ করা ,কোন
কারণে মেরুদন্ডে আঘাত
পাওয়া সর্বোপরি কোমরের
অবস্থানগত ভুলের জন্যই
এই কোমরের ব্যথা
প্রথমে শুরু হয়ে
থাকে।
অন্যান্য
কারণেও কোমর ব্যথা
হয় । বিশেষত
বয়স্ক ব্যক্তিদের দীর্ঘদিন
ধরে অ্যাথাইটিস বা
গেঁটেবাত , অস্টিওপোরেসিস বা
হাড়ের ক্ষয়, বোন
ক্যান্সার ,টিউমার বা
দীর্ঘদিন ধরে কোন
রোগে ভুগে এই
ধরনের কোমর ব্যথা
হয়ে থাকে। আর
অল্প বয়সীদের ক্ষেত্রে
কোমরের অবস্থানগত ভুলের
জন্যই সাধারণত কোমর
ব্যথা হয় ।
এতগুলো কারণের মধ্যে
আপনার কোমর ব্যথার
যে কারণে হয়ে
থাকে না কেন
আজকের লেখা ফলো
করলে আশা করি
কোমর ব্যথা থেকে
চিরদিনের জন্য আপনি
মুক্তি পাবেন।
কোমর ব্যথা নিরাময়
প্রথমেই আমরা কিছু জেশ্চার পশ্চারের ব্যাপারে জানবো।
১. যখন বসে কাজ করতে হবে, দীর্ঘক্ষণ কোন চেয়ারে বা কম্পিউটারে আপনি দীর্ঘক্ষন কাজ করবেন। তখন অবশ্যই সোজা হয়ে বসে কাজ করার চেষ্টা করবেন। আধাঘন্টা থেকে ৪৫ মিনিট পরপর ৫ মিনিটের জন্য একবার করে উঠতে হবে । উঠবেন কিছুক্ষণ হাঁটবেন এবং এসে আবারও বসে কাজ করবেন। একটানা এক ঘন্টা, দেড় ঘন্টা, দুই ঘন্টা যদি বসে কাজ করতে থাকেন তাহলে এরকম কোমরের ব্যথার ধীরে ধীরে বাড়তেই থাকবে।
২. কোমর ব্যথা দীর্ঘদিন ধরে হতে থাকলে নিচু বালিশে ঘুমানোর অভ্যাস করুন। সবচেয়ে ভালো হয় যদি দিনে আধাঘণ্টা থেকে এক ঘন্টা করে আপনি বালিশ ছাড়া সোজা হয়ে শুয়ে থাকতে পারেন। এই অভ্যাস আপনি যেকোনো সময় করতে পারেন। রাতে ঘুমাতে যাওয়ার সময় প্রথমেই আধাঘণ্টা থেকে এক ঘন্টা বালিশ ছাড়া সোজা হয়ে শুয়ে থাকতে পারেন। অথবা দিনেও এরকম যেকোন সময় করতে পারেন। এছাড়া সবসময় নীচু বালিশে ঘুমানোর অভ্যাস করা, সোজা হয়ে শোয়া কোমর ব্যথা দূর করতে আপনাকে দ্রুত সাহায্য করবে।
৩. কোমরে ব্যথা হলে যদি আপনার সুইমিং করার কোন ধরনের সুবিধা থাকে, তাহলে দিনে ৩০ মিনিট করে সুইমিং করার চেষ্টা করুন। প্রতিদিন না হলেও সপ্তাহে তিনদিন সুইমিং করুন। এতে খুব দ্রুত কোমর ব্যথা চলে যাবে।
৪. সকালে ঘুম থেকে
উঠে সোজা হয়ে
পদ্মাসনে বসে ১৫
মিনিট প্রাণায়ম করুন।
প্রাণায়ম ধীরে ধীরে
আপনার বডিকে রিল্যাক্স
করবে এবং কোমরের
ব্যাথাসহ সকল ধরনের
ব্যথা থেকে সারাদিনের
জন্য রিলিফ পাবেন।
প্রাণায়ম করবেন অনুলোম
,বিলোম এবং কপালভাতি
এই তিন ধাপে
। অনুলোম ,বিলোম
,কপালভাতি যদি আপনি
না জেনে থাকেন
তাহলে আপনি যেকোন
গুগল অথবা ইউটুবে
সার্চ করে জেনে
নিতে পারেন। যদি আমি আপনাদের
বলতে চাই তাহলে
হয়তো লেখা বেশি হয়ে যাবে
এতে আপনারাই বিরক্ত
হতে পারেন। এই
জন্যই নিজে দেখে
নিয়ে করতে পারেন।
৫. এবারে
আমরা
কোমর ব্যথা দূর
করার জন্য একটি
অভ্যাস তৈরি করব। যে
অভ্যাস আপনাকে সবসময়
সুস্থ রাখবেন। সকালে
ঘুম থেকে উঠে
খালি পেটে অবশ্যই
পর্যাপ্ত পরিমাণে হালকা
গরম পানি পান
করার চেষ্টা করুন
। একজন প্রাপ্তবয়স্ক
ব্যক্তি হিসেবে যদি
আপনার কিডনি বা
হার্টের রোগ না
থাকে তাহলে আপনি
এক লিটার পরিমাণ
হালকা গরম পানি
পান করার চেষ্টা
করুন।
এই
অভ্যাস আপনাকে সবসময়
সকল ধরনের ব্যাখ্যাসহ
কোমর ব্যথা থেকে
দূরে রাখতে সাহায্য
করবে।
কোমরের ব্যথা দূর করার ম্যাসাজ
কোমর ব্যথা হলে তেলের ম্যাসাজ আপনাকে খুব দ্রুত কোমর ব্যথা থেকে রেহাই পেতে সাহায্য করবে। এর জন্য আপনি বাজারে অনেক রকম তেল পাবেন কিন্তু আমরা একটি কার্যকরী আয়ুর্বেদিক তেল প্রস্তুতির বিষয়ে জানবো। এর জন্য আমাদের প্রথমেই লাগবে তিন ধরনের তেল। সরিষার তেল ,খাঁটি নারিকেল তেল এবং তিলের তেল এই তিন তেল সমপরিমাণ নিতে হবে এবং তার সাথে নিতে হবে রসুন কুচি। যদি আপনি তিন ধরনের তেল ১০০ গ্রাম করে নিয়ে থাকেন তাহলে ৩০০ গ্রাম হবে এবং এর সাথে আপনাকে গোটা রসুন ছোট করে কেটে নিতে হবে ১০০ গ্রাম অর্থাৎ এক ভাগ পরিমাণ নিতে হবে রসুন । এবারে এই সবগুলো উপাদান খুব হালকা আচেঁ পাঁচ থেকে সাত মিনিট ফুটিয়ে নিন। আপনার তেল প্রস্তুত হয়ে গেল। এই তেল অবশ্যই দিনে একবার করে কোমর সহ সারা দেহে মাসাজের চেষ্টা করুন । এতে করে কোমরের ব্যথার সরে গিয়ে আপনার দেহের অন্য কোন অংশে থাকতে পারবে না। অনেক সময় হয় আমাদের ব্যথা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে চলে যায়। যদি আপনি সারা দেহে এই তেল ম্যাসাজ এর চেষ্টা করেন বা করতে থাকেন তাহলে কিন্তু মাত্র তিন দিনের মধ্যেই সব ধরনের ব্যথা থেকে রিলিফ পাবেন।
আরও পড়ুন - পাথরকুচি পাতা খাওয়ার উপকারিতা
কোমরের ব্যথা দূর করার কি কি রেমিডিস সেবন করব
আমরা
তিনটি রেমিডিস জানবো
এবং খুব সহজ।
প্রথম রেমিডি
আমাদের এই রসুন
তেল মাসাজের সাথে
সাথে কাঁচা রসুন
খেতে হবে ।
কাঁচা রসুন প্রতিদিন
সকালে যে নিয়মে
পানি পান করার
কথা বলেছি এই
নিয়মে পানি পান
করে , ৩০ মিনিট পরে দুই
কোয়া কাঁচা রসুন
খেয়ে নিন। যারা
কাঁচা রসুন চিবিয়ে
খেতে পারেন না
তারা রসুন গ্রেট
করে বা থেঁতো করে এক
গ্লাস পানিতে ডুবিয়ে
রাখুন। পানিসহই রসুন
খেয়ে নিতে পারেন
অথবা রসুন ছেঁকে
শুধুমাত্র পানিটি পান
করতে পারেন ।
বন্ধু কাঁচা রসুন যখন
খাবেন তখন খোসাসহ
ধুয়ে নেবেন এবং
খোসা ছাড়ানোর পরেই
৫ থেকে ১০
মিনিট অপেক্ষা করবেন। তারপরে
এই রসুনটি খাবেন।
যাদের
গ্যাস,এসিডিটি ও বদহজম
হয় তারা পানিতে
মিশিয়ে খেলে কখনোই
কাঁচা রসুন খাওয়ার
কারণে গ্যাস এসিডিটি
ও বদহজম হবে
না এবং আপনার
কোমরের ব্যথা দূর
হয়ে যাবে ।
দ্বিতীয় রেমিডি
দ্বিতীয়টি হলো আমাদের
একটিমাত্র উপাদানই সেবন
করতে হবে ,তা
হলো জোয়ান দানা। জোয়ান
বা আজোয়াইন যারা
দেশের বাইরে থাকেন
তারা আজোয়াইন বলে
যেকোনো সুপারশপে পাবেন।
দেশে যারা আছেন
তারা যেকোনো মুদি
দোকান থেকে আজোয়াইন বা
জোয়ান দানা বলে
এই মসলাটি বা
এই ভেষজ উপাদান
টি কিনতে পারেন।
বন্ধুরা এটি আপনাকে
প্রতিদিন এক চামচ
করে সেবন করতে
হবে। প্রাপ্ত
বয়স্ক ব্যক্তিদের জন্য
এক চামচ ।
এক চামচ করে
আপনি দিনে দুই
বারে খাবেন। অর্থাৎ হাফ চামচ
করে আপনাকে খেতে
হবে।
সকালে
বা রাতে, দুপুরে
বা
রাতে
যেকোনো সময় খাবার
খাওয়ার একঘন্টা পরে
আজোয়াইন দানা চিবিয়ে
খেয়ে নিন।
এই আজোয়াইন স্বাদ
কিন্তু একটু ঝাল
হয়।
যারা
ঝাল খেতে পারেন
না তারা এটি
গুড়ো করে রাখুন
এবং হাফ চা
চামচ পরিমাণ আজোয়াইনের গুড়ো
খেয়ে নিন এবং
তারপরে এক গ্লাস
হালকা গরম পানি
পান করুন ।
এভাবে যদি করতে
থাকেন তাহলে আপনার
কোমর ব্যথা তো
দূর হবেই সেই
সাথে দেহের অন্যান্য
আরো অনেক রোগ
দূর হয়ে যাবে।
আপনি একদম সুস্থ
সবল এবং একজন
শক্তিশালী মানুষ হিসেবে
নিজেকে দেখতে পারবেন।
তৃতীয় রেমিডি
এই রেমিডি পান করতে হবে খাঁটি দুধের সঙ্গে। গাভীর খাঁটি দুধ নিন এক গ্লাস পরিমাণ। যাদের হার্টের রোগ হাই ব্লাড প্রেসার রয়েছে তারা দুধ জ্বাল করে উপর থেকে সরটা তুলে ফেলুন। এই সর বা ফ্যাট ফ্রি মিল্ক আপনি গ্রহণ করুন। এর সাথে আপনাকে মিশাতে হবে এক চা চামচ কাঁচা তিলের গুড়া বা আপনি তিল হালকা করে ভেজে গুড়ো করে রাখতে পারেন। সাদা তিল, লাল তিল বা কালো তিল যেকোন তিল আপনি খেতে পারেন।খুব ভালো হয় যদি আপনি খোসা সহ তিল গুড়ো করে আস্ত দুধের সাথে মিশিয়ে খেয়ে নেন। দুধের সাথে মিশিয়ে নিলে আপনাকে অবশ্যই তিল চিবিয়ে খেতে হবে। সেটা একটু ঝামেলা হবে তাই আপনি গুড়ো করে দুধের সাথে মিশিয়ে রাতে ঘুমোতে যাওয়ার ঠিক ৩০ মিনিট আগে পান করুন। এভাবেই আপনি টানা ২১ দিন পান করবেন। তাহলে বন্ধু একেবারে চিরদিনের জন্য আপনার কোমরে ব্যথা দূর হয়ে যাবে।
এই
লেখার প্রতিটি নিয়ম
আপনাকে সাহায্য করবে
আপনার কোমরে ব্যথা
দূর করতে।