জাম খাওয়ার উপকারিতা
জাম যে কয়দিন বাজারে পাওয়া যায় প্রতিদিন কষ্ট করে একটু কিনে আনুন। একজন মানুষের জন্য মাত্র ১০০ গ্রাম। আপনি পরিবারের সবার জন্য কিনতে চাইলে তো খুবই ভালো কোন কথা নেই । কিন্তু যদি একাই খেতে চান ১০০ গ্রাম কিনে আনুন । জামের যেহেতু অনেক দাম আপনার মনে হতে পারে আমি এত টাকা দিয়ে কেন এই ফলটি খাবো, কি এমন আছে। এতে কিছু আছে যে এর তুলনা হয় না । জাম অবশ্যই খাবেন। অবহেলা করবেন না। বিশেষ করে আপনার যদি এই দশ ধরনের রোগ থাকে। যে দশটি রোগের কথা আমি বলব তাহলে জাম একদমই অবহেলা করা যাবেনা । প্রকৃতি আমাদের যেহেতু সারা বছরেই ফল খাওয়ার সৌভাগ্য দিচ্ছে না তাই যতদিন পাওয়া যায় এই সৌভাগ্য থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখবেন না প্লিজ।
জাম কেন খাবেন?
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে:
জাম আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করবে। অনেকে জানেন যে জাম ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে আবার জামের বীজের পাউডার পাওয়া যায় বাজারে। যেটা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে। তারপরেও অনেকে এটাকে অবহেলা করে। কারণ আপনি তো ডায়াবেটিসের জন্য ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ খাচ্ছেন,আপনি তো ইনসুলিন নিচ্ছেন,অনেক বড় বড় ডাক্তার দেখাচ্ছেন, অনেক বেশি বেশি ভিস্টি দিয়ে। আপনি কি জামের গুড়ো খাবেন তো জামের গুড়ো নয় আমি জাম খাওয়ারই কথা বলছি । জামের বীজের গুড়ো থাক আপনি জামটাই খান। জামের ভেতরে রয়েছে anti-diabetic প্রপার্টিস যার কারণে রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে থাকে। আর এর স্টার্চ অথবা চিনিকে নিয়ন্ত্রন করার ক্ষমতা রয়েছে। গবেষণা বলছে যে জামের বীজ যদি কেউ খেতে পারেন তাহলে রক্তে শর্করার মাত্রা ৩০% এর নিচে কমে আসে। জামের বীজের গুঁড়ো করে খেতে পারেন আমার জামের বীজ চিবিয়েও খেয়ে ফেলতে পারেন।
|
জামের উপকারিতা |
প্রতিদিন তিন থেকে চারটি জামের বীজ চিবিয়ে খেয়ে নিন দেখবেন উপকার হয়ে গেছে। কষ্ট করে জামের বীজ রোদে দিয়ে গুঁড়ো করে এটা আপনাকে খেতে হচ্ছে না। এক্ষেত্রে আমার একটা সাজেশন আছে প্লিজ অবহেলা করবেন না সেটা হচ্ছে জাম খাওয়ার পরে বীজগুলোকে ফেলে দেবেন না । ধুয়ে রেখে দিন এবং খুব কড়া রোদৌয় রোদ-ছায়া এমন জায়গাতে বীজগুলোকে শুকিয়ে মচমচে করে একটি পাউডার তৈরি করে রেখে দিন। যখন জাম পাওয়া যাবেনা তখন কি করবেন? তখন এই জামের গুড়োটা খাবেন। এক চামচ করে এক কাপ হালকা গরম পানিতে মিশিয়ে সকালে একবার করে খেয়ে ফেলবেন। এর থেকে বড় কোন ঔষধ ডায়াবেটিসের আপনি আর টাকা দিয়ে কিনতে পারবেন না। বিনা টাকায় জামের বীজ ফেলেই দিচ্ছিলেন সেটা দিয়ে কি চমৎকার ঔষধ হয়ে গেল। এই জামের বীজের কথা এখন থাক। এবার আসি জাম খেলে আপনার দেহের আর কি কি উপকার হবে। দশটা উপকারের কথা বলেছিলাম বা দশ রোগ দূর হওয়ার কথা বলেছিলাম। দ্বিতীয়টা হচ্ছে জাম ক্যালসিয়াম, আয়রন ,পটাসিয়াম ,ভিটামিন সি সমৃদ্ধ। ক্যালসিয়াম এবং আয়রন হাড়ে বৃদ্ধির জন্য খুব দরকারি। হাড়ের ক্ষয় রোধ করে এবং বয়স্ক মানুষদের জন্য এটা খুব দরকারী ।
শরীরের ভেতরে থাকা টক্সিক উপাদান দূর করে:
জাম রয়েছে ম্যালিক এসিড , গ্যালিক অ্যাসিড, অক্সালিক অ্যাসিড এবং ট্যাংস রয়েছে যা এর যৌগ উপাদান একই সঙ্গে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি প্রপার্টিস হয়ে যায় এবং এই প্রপার্টিজের কারণেই শরীর থেকে টক্সিন এলিমেন্টস এবং ইনফেকশন দূর হয়ে যায় । কথা গুলো একটি কঠিন কঠিন হয়ে গেল কি? কঠিন নয় সহজ কথা । অর্থাৎ কথা হলেও জাম খেলে পরে আপনার দেহের যেকোনো ইনফেকশন দূর হবে এবং শরীরের ভেতরে থাকা টক্সিক উপাদান দূর হয়ে যাবে।
জন্ডিস এবং এনিমিয়ার নিরাময়ে:
জাম জন্ডিস এবং এনিমিয়ার নিরাময় করে। জামের উপাদানের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে। যাদের দেহে আয়রন কম তাদের অবশ্যই জাম খেতে হবে এতে এনিমিয়া প্রতিরোধ হবে। আর জন্ডিস যাদের হয়েছে তারা কিন্তু অবশ্যই জানাবেন জাম খাবেন। জাম খেলে পরে জন্ডিসের প্রকোপ কমবে এবং একসময় আপনি বিলিরুবিন টেস্ট করলে দেখতে পাবেন যে আপনার জন্ডিস একদম নিয়ন্ত্রণে
চলে এসেছে। তার মানে এই নয় জন্ডিস হলে আপনি কেবল জামই খাবেন । জন্ডিসের অন্যান্য যে নিয়মকানুনগুলো রয়েছে সেটা তো অবশ্যই মানতে হবে।
ক্যান্সার প্রতিরোধে:
বেশ কয়েকটা গবেষণাপত্র পড়ে দেখলাম যে জাম ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। এতে ক্যান্সার প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে। যেটি জ্যাগাটিয়া ও তার সহকর্মীদের একটা গবেষণা হচ্ছে এরকম যে এর নির্যাসে প্রটেক্টিভ বৈশিষ্ট্য আছে। যা প্রমাণ করে এই ফলের নির্যাস ক্যান্সার কোষকে প্রিভেন্ট করে এবং এতে থাকা উপাদান ফ্রিরেডিকেলসকে নিউট্রলাস করতে ভূমিকা রাখে।
ইমিউনিটি বিল্ডআপ করে:
ইমিউনিটি বিল্ডআপ করে।ইমিউনিটি সিস্টেমকে নতুনভাবে তৈরি করে ।শরীরের যাদের ইমিউনিটি সিস্টেম ভেঙে পড়েছে তাদের ইমিউনিটি সিস্টেমকে একদম মজবুত এবং নতুনভাবে তৈরি করতে জাম খুব ভালো কাজ করে । এই সময় যাদের ঘনঘন এই ধরনের সমস্যা হয় ভিটামিন সি এর ঘাটতি জনিত -সর্দি, কাশি ,বুকে কফ বা ভাইরাল ফ্লু তাদের জন্য তো জাম খুব দরকার। কারণ তাদের দেহে তো ইমিউনিটি সিস্টেম ভালো বা যাদের ইমিউনিটি সিস্টেম খুব ডেভলপ তাদের কিন্তু এই ঘন ঘন সর্দি কাশি হয় না। হলে পরেও ভালো হয়ে যাবে জাম খেলে । জামের এই ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সাধারণত সিজানাল ফ্লু এর বিরুদ্ধে খুব ভালো কাজ করে। বলতে পারেন যে ইমিউনিটি সিস্টেমকে বুস্ট আপ করার একটা ভালো জিনিস হল জাম।
হার্টের সুস্থায়:
জাম হার্টের সুস্থতা বজায় রাখে । হার্টের রোগ হলে পরে যে কেবল আপনি হার্ট নিয়ে ভাববেন তা নয় । হার্টে সুস্থতা বজায় রাখাটা একটা গুরুত্বপূর্ণ কাজ ।
রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে:
জামের মধ্যে এঞ্জেলিক এসিড বা এঞ্জেস্টিন রয়েছে যা অ্যান্থোসায়ানিন ও অ্যান্থোসায়ানিন এর মত পুষ্টি সমূহ যার রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে আর এই যৌগ গুলি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ হয় যা আপনার হৃদযন্ত্রকে সব সময় সুস্থ রাখে । হৃদযন্ত্র আক্রান্ত যেসব ব্যক্তি তাদের যে শুধুমাত্র জাম খেতে হবে তা নয় সারা জীবন যদি নিজের হার্টকে ভালো রাখতে চান তাহলে যতদিন জাম পাওয়া যায় প্লিজ অবহেলা করেন না ।জাম খান মাত্র ১০০ গ্রামই তো খাবেন। খুব অল্প পরিমাণ । ঘরে নিয়ে আসুন ভালো করে ধুয়ে খেয়ে নিন ।আর যাদের জাম গাছ রয়েছে তারা তো আরো বেশি অবহেলা করেন আমার দেখা মতে। যে বাড়িতে যামু আছে অথচ খাইনা। পাড়া-প্রতিবেশী এসে কুড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে । আপনিও খান সবাই সুস্থ থাকুন আপনিও থাকেন।
ত্বক এবং চোখের জন্য:
জামের মধ্যে আছে ভিটামিন এ, ভিটামিন সি এই কারণে এটা ত্বক এবং চোখের জন্য খুব ভালো ।যাদের চোখে সমস্যা রয়েছে দৃষ্টি শক্তির স্বল্পতা আছে তারা অবশ্যই জাম খাবেন । জাম খেলে পরে এই সমস্যাটা কিন্তু আপনার একদম চলে যাবে এবং বলা ভালো যে যাদের চোখের ঘনঘন ইনফেকশন হয় তারা অবশ্যই জাম খাবেন। চোখ দিয়ে পানি পড়া চোখ চুলকানো এই সমস্যাগুলো কিন্তু চলে যাবে। জাম খেলে যখন এত উপকার পাওয়া যাচ্ছে তখন নিশ্চয়ই আপনি জাম খাবেন অবশ্যই খাবেন ।
যেকোন সময় খেতে পারেন তবে রাতের বেলায় না খাওয়াই ভালো । এই ধরনের ফলগুলো দিনের বেলায় খেলে সব থেকে ভালো হয় এটা পেটের জন্য। এমনিতেই জাম আপনার পরিপাকতন্ত্রকে উন্নত করে তার পরেও বলব রাতে না খেয়ে দিনের বেলায় খান । আর খালি পেটে জাম বেশি পরিমাণে খেলে অনেক সময় পেট ভার বোধ হতে পারে এই কারণে যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত তাদের বলব জামের গুড়ো আপনি যখন খাবেন জাম বিচির পাউডার তখন সেটা আপনি খালি পেটে খান । তখন কিন্তু যখন আপনি সরস ফলটাকে খাচ্ছে তখন খালি পেটে না খেয়ে খাবারের আধাঘন্টা থেকে এক ঘন্টা পরে খান। তাহলে উপকার সব থেকে ভালো হবে ক্ষতি হবে না। তবে সব উপকারী জিনিস কিন্তু মাত্রা বুঝে খেতে হয় । তাই বারবার বলছি প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি জাম খাবে অবশ্য ১০০ গ্রাম পরিমাণ। আর যাদের বয়স কম তারা এর থেকে একটু কম পরিমাণ খাবেন বাচ্চারা। অতিরিক্ত খাওয়ার কোন দরকার নেই বরং নিয়মিত খান ।একদিনে বেশি খেয়ে পরের দিন না খাওয়ার চেয়ে প্রতিদিন খান নিয়মিত খান সুস্থ থাকবেন ভালো থাকবেন ।