গরমে গা জ্বলা এবং ঠোঁট ফাটা
চলতি বছর গ্রীষ্মের শুরুতে খানিকটা ভিন্ন ধরনের গরম অনুভূত হচ্ছে। এই গরমে গা ঘামছে কম কিন্তু মনে হচ্ছে গায়ের চামড়া পুড়ে যাচ্ছে। শরীর জলার মত এমন অনুভূতি অতীতের গরমে খুব কমই হয়েছে। এমনকি এই গরমে গাঁড় ফেটে যাচ্ছে। চিকিৎসক ও আবহাওয়াবিদরা বলছেন বাতাসের আর্দ্রতা কমে যাওয়ার কারণে এবারের চৈত্র মাসে এমন ব্যতিক্রমী গরম অনুভূত হচ্ছে। বাতাসের আর্দ্রতা কমে গিয়ে বাতাস শুষ্ক হয়ে উঠেছে ।এই শুষ্ক বাতাসের সাথে অধিক তাপ আমাদের শরীরে পানি শুষে নিচ্ছে। সেকারণেই শরীর জ্বালাপোড়া করছে এবং ঠোঁট শুকিয়ে যাচ্ছে।
আবহাওয়া
অধিদপ্তরের তথ্য মতে
বিগত ৩০ বছরের
হিসেব অনুযায়ী এপ্রিল
মাসে দেশের সকল
জেলায় বাতাসের আদ্রতা
থাকে ৭০ থেকে
৮২ শতাংশ। কিন্তু
বর্তমানে সেই আদ্রতা ৪০
থেকে ৫০ শতাংশ নেমে এসেছে।
এমনকি এই আর্দ্রতার পরিমাণ ৩২% নেমে
গিয়েছিল। বাতাসে আর্দ্রতা
কম থাকার কারণ
হিসেবে আবহাওয়াবিদরা বলছেন
শীতকালে বাংলাদেশের ঊর্ধ্ব
আকাশে উত্তর থেকে
পশ্চিম দিকে বায়ু
প্রবাহিত হয় ।
আর্দ্রতা কম থাকায়
এই বাতাস হয়
শুষ্ক। ফলে শীতকালে
মানুষের ঠোঁট ফাটে
এবং ঘাম কম
হয় । অন্যদিকে
গ্রীষ্ম এবং বর্ষাকালে
বাংলাদেশের উপর দিয়ে
দক্ষিণ থেকে পশ্চিম
দিকে বাতাস প্রবাহিত
হয় । এই
বাতাসের সঙ্গে বঙ্গোপসাগর
থেকে প্রচুর জলীয়
বাষ্প আসে ফলে
এই বাতাসে আর্দ্রতার
পরিমাণ থাকে বেশি
। তখন অল্প
তাপমাত্রা
বাড়লে
মানুষ ঘামতে থাকে।
এছাড়া জলীয়বাষ্প সমৃদ্ধ
বায়ু নিঃশ্বাসের সাথে
শরীরে প্রবেশ করার
কারণে শরীর ঘামালেও
খুব বেশি ক্লান্ত
লাগে না এবং
ত্বক জ্বালাপোড়া করে
না।
গরমে গা জ্বলছে এবং ঠোঁট ফাটছে কেন |
অনেকের মনেই প্রশ্ন আসতে পারে এবছর কেন এমন ব্যতিক্রম হলো । প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে তৈরি হওয়া এক বিশেষ ধরনের জলবায়ু পরিস্থিতি এর জন্য দায়ী। আমাদের পৃথিবীর জলবায়ু একটি বাটিতে থাকা পানির মতো । পৃথিবীর এক প্রান্তে কোন ধরনের পরিবর্তন আসলে সারা পৃথিবীতেই তার প্রভাব পরে। সাধারণত প্রশান্ত মহাসাগরের উপর দিয়ে পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে বাতাস প্রবাহিত হয় । বিস্তৃত এই অঞ্চল জুড়ে নিরবচ্ছিন্নভাবে চলা এই বায়ুপ্রবাহকে বলে ট্রেড উইন্ড। ট্রেড উইন্ডের সাথে সাগরের উপরিভাগে উষ্ণ জল এশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়ার দিকে বয়ে যায়। সাগরের উপরের উষ্ণ জল সরে যাওয়ার কারণে মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকার দিকে সাগরতলের শীতল জল উপরে উঠে আসে ।এই প্রক্রিয়াকে বলে আপওয়েলিং। এভাবে প্রশান্ত মহাসাগরে অস্থিতিশীল আবহাওয়া সৃষ্টি হয় । যার ফলে এশিয়া অঞ্চলে প্রচুর মেঘ ও বৃষ্টি হয় । এই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া তীব্রতা যদি অনেক বেড়ে যায় তাহলে তাকে বলে লা নিনা । কিন্তু বিভিন্ন কারণে যদি প্রশান্ত মহাসাগরীয় বায়ুর স্বাভাবিক গতির উল্টো দিকে প্রবাহিত হয়। তাহলে সেই অবস্থাকে বলে এল নিনো । যে বছর এল নিনো ঘটে সে বছর এসে বছর এশিয়া অঞ্চল থেকে দক্ষিণ আমেরিকা অঞ্চলে শীতল বায়ু প্রবাহিত হতে থাকে। এল নিনো বছরে সারা বিশ্বের তাপমাত্রা অনেক বেড়ে যায় ।প্রতিটি এল নিনো এবং লা নিনা ইফেক্টটি ভিন্ন । তাই প্রশান্ত মহাসাগরে একেকবার একেক রকমের আবহাওয়া দেখতে পাওয়া যায়।
কয়েক দশক ধরে এল নিনো এবং লা নিনা বাংলাদেশের জলবায়ুকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করছে। চলতি বছর লা নিনা প্রভাবের কারণে প্রশান্ত মহাসাগর থেকে ভারত মহাসাগর হয়ে বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত অঞ্চল জুড়ে বাতাস প্রবাহের স্বাভাবিক গতি বদলে গেছে। সে কারণে বাংলাদেশের উপর দিয়ে দক্ষিণ থেকে পশ্চিম দিকে বাতাস প্রবাহিত না হয়ে উত্তর থেকে পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হচ্ছে। এর ফলে চলতি বছরের গরমে ব্যতিক্রমী পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে।