চিয়া সিড এর উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম
চিয়া সিড বা চিয়া বীজ হল মরুভূমিতে জন্মানো সালভিয়া হিস্পানিকা উদ্ভিদের বীজ। চিয়া সিডে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, আয়রন ,পটাসিয়াম ,ওমেগা থ্রি ,ফ্যাটি এসিড ও ভিটামিন সি পাওয়া যায়। তাই একে সুপারফুড বলা হয়। সুপারফুড হওয়ার জন্য চিয়া সিডের অনেক উপকারিতা আছে । যেমন
ওজন কমাতে সাহায্য করে,
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে,
হজমশক্তি বৃদ্ধি করে,
ক্যান্সার প্রতিরোধ করে,
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে।
চিয়া সিড এর উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম |
আপনি যদি নিয়মিত চিয়া সিড খেতে পারেন তাহলে প্রচুর উপকারিতা পাবেন । কিন্তু আমাদের মধ্যে অনেকেই চিয়া সিড কিভাবে খেতে হয় তা সঠিকভাবে জানেন না । এর ফলে এর উপকারিতা থেকে আমরা বঞ্চিত হচ্ছি। আজকের এই লেখাতে আমরা জানবো চিয়া সিডের উপকারিতা কি? কেন আমাদের চিয়া সিড খাওয়া প্রয়োজন? কখন কিভাবে ও কতটুকু পরিমাণে চিয়া সিড খেলে সর্বোচ্চ উপকারিতা পাওয়া যাবে। এই সবকিছু জানতে লেখাটি শেষ অব্দি পড়তে থাকুন ।
চিয়া সিড কি ?
চিয়া সিড হলো সাদা ও কালো রঙের আকারে খানিকটা তিলের মত হয়ে থাকে । তবে চিয়া সিড ও তোকমা নিয়ে একটি ভুল ধারণা আছে। অনেকেই তোমাকে ভুল করে চিয়া সিড মনে করে । কিন্তু চিয়া সিড তোকমার চেয়ে আকারে ছোট। এই প্রসঙ্গে বলে রাখি তোকমারে ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো ব্যাসেল সিড। তাই চিয়া সিড ও তোকমা এক জিনিস নয়। চিয়া বীজ হল একটি সুপার ফুড । এর অনেক উপকারিতা আছে ।
ওজন কমাতে সাহায্য করে
যারা ওজন
কমাতে চান তাদের
জন্য চিয়া সিড বেশ
উপকারী। কারণ এতে
উচ্চমাত্রায় ফাইবার ও
প্রোটিন পাওয়া যায়।
চিয়া সিডে দ্রবণীয় ফাইবার পাওয়া
যায়। যা আমাদের
দেহের মেটাবলিজমকে বাড়িয়ে
দিতে সাহায্য করে
। এর ফলে
দেহের ওজন সহজেই
নিয়ন্ত্রণ করা যায়
। চিয়া সিডে
মিউসিলেজ নামক একটি
রাসায়নিক উপাদান থাকে
। এর জন্য
এটি ভেজানোর পর
চটচটে আঠাল রূপ
ধারণ করে এবং
দেহের বিপাক ক্রিয়ার
গতি কমিয়ে দেয়
। এর ফলে
খিদে কম লাগে।
এছাড়াও চিয়া সিডের
প্রোটিন আমাদের অতিরিক্ত
খাদ্য গ্রহণের ইচ্ছে
কমিয়ে দেয় ।
তাই যারা ওজন
কমাতে চান ।
তারা দুপুরে টক
দই বা অন্য
কোন খাবারের সাথে
চিয়া সিড খেতে
পারেন।
হজমশক্তি উন্নত করে
দ্রবণীয়
এবং অদ্রবণীয় ফাইবার
পাওয়া যায় যা
আমাদের অন্তরের জন্য
দারুন উপকারী। অদ্রবণীয়
ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য কমাতে
এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি
কমাতে সাহায্য করে
এবং দ্রবণীয় ফাইবার
হজমের উন্নতি করতে
সাহায্য করে। এছাড়াও
চিয়া সিড আমাদের
অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো
রাখতে সাহায্য করে।
এবং অন্ন্ত্রের একটি
গুরুত্বপূর্ণ প্রিবায়োটিক হিসেবে
কাজ করে ।
তাই যাদের কোষ্ঠকাঠিন্য
আছে তারা নিয়মিত
চিয়া সিড খেলে
অবশ্যই উপকার পাবেন।
ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমায়
চিয়া সিডে থাকে ফাইবার ও উপকারী এন্টিঅক্সিডেন্ট। এর প্রভাবে আমাদের দেহে ইনসুলিন হরমোনের ক্ষরণ বৃদ্ধি পায় । এর ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে । বিশেষ করে যারা টাইপ টু ডায়াবেটিস আক্রান্ত তাদের জন্য চিয়া সিড বেশ উপকারী। একটি কথা মনে রাখবেন রক্তে শর্করার মাত্রা বেড়ে গেলে আমাদের দেহের বিভিন্ন রোগের ঝুঁকি বাড়ে তাই। ডায়াবেটিসকে নিয়ন্ত্রণ করা খুব প্রয়োজন। এর জন্য আপনি নিয়মিত চিয়া সিড খেতে পারেন। এতে অবশ্যই সুফল পাবেন।
হৃদ রোগের ঝুঁকি কমায়
চিয়া সিডে
ওমেগা 3 ফ্যাটি এসিড
ও ফাইবার পাওয়া
যায়। যা আমাদের
হৃদযন্ত্রের জন্য বেশ
উপকারী।
চিয়া
সিডে থাকা ফাইবার
এলডিএল নামক কোলেস্টেরলের
মাত্রা কমাতে সাহায্য
করে। এছাড়াও ট্রাই
গ্লিসারাইড এবং অক্সিডেটিভ
স্ট্রেস কমাতে সাহায্য
করে । এর
ফলে আমাদের হৃদযন্ত্র
সুস্থ থাকে ।
এক্সপার্টদের মতে চিয়া
সিডে তিসি বীজের
থেকেও বেশি মাত্রায়
ওমেগা 3 ফ্যাটি এসিড
পাওয়া যায়। তাই
হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে
আমাদের অবশ্যই চিয়া
সিড খাওয়া প্রয়োজন।
অ্যানিমিয়া দূর করে
আমাদের দেশে
অনেক পুরুষ ও
মহিলাদের মধ্যে রক্তাল্পতা
দেখা যায় ।
দীর্ঘদিন ধরে এই
সমস্যায় ভুগলে নানা
রকম অসুখ দেখা
দিতে পারে। তাই
এই বিষয়ে আমাদের
অবশ্যই সচেতন হওয়া
প্রয়োজন। চিয়া সিড
হল আয়রনের একটি
ভালো উৎস ।
আপনি নিয়মিত চিয়া
সিড খেতে পারেন
তাহলে এই সমস্যা
থেকে সহজেই মুক্তি
পাবেন। এই প্রসঙ্গে
একটি কথা বলে
রাখি পৃথিবীর প্রায়
অর্ধেক মানুষের মধ্যে
ভিটামিন এ ,আয়রন
ও জিংক এর
অভাব দেখা যায়।
তাই সুস্থ থাকতে
হলে আমাদের অবশ্যই
চিয়া সিড খাওয়া
প্রয়োজন।
এছাড়াও চিয়া সিড এর
আরও অনেক উপকারিতা
আছে । যেমন:
এতে প্রচুর পরিমাণে
প্রোটিন পাওয়া যায়।
এটি ত্বকের জন্য
ভীষণ উপকারী ।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা
বৃদ্ধি করতে সাহায্য
করে এবং ক্যান্সার
প্রতিরোধ করে ।
এখন আমাদের জানা
প্রয়োজন চিয়া সিড
কিভাবে খাওয়া উচিত
এবং কতটুকু পরিমাণে
খাওয়া দরকার ।
এই বিষয়ে অনেকের
ভুল ধারণা আছে।
তবে সঠিক পদ্ধতি
অবশ্যই জানা প্রয়োজন
। চিয়া সিড
খাওয়ার অনেক নিয়ম
আছে। আপনি নানা
রকমভাবে
চিয়া
সিড খেতে পারেন।
চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম
প্রথমেই
যে বিষয়টি আমাদের
জানা প্রয়োজন চিয়া
সিডকে
আলাদা
করে রান্না করার
প্রয়োজন নেই ।
আপনি প্রতিদিন যেসব
খাবার খাচ্ছেন তার
সাথে
চিয়া
সিড মিশিয়ে খেতে
পারেন । যেমন:
ডাল, ওটস,টক
দই, পুডিং, জুস
ইত্যাদি।
চিয়া
সিড কখনো কাঁচা
বা রো খেতে
যাবেন না। এক
গ্লাস জলে 2 টেবিল
চামচ পরিমাণ চিয়া
সিড ভিজিয়ে রাখুন।
৪০ থেকে ৪৫
মিনিট পর চিয়া
সিড গুলো জল
শোষণ করে জেলির
মত চকচকে হয়ে
যাবে । এই
জলে ভেজানো চিয়া
সিড থেকে ২
টেবিল চামচ পরিমাণ
চিয়া সিড বিভিন্ন
খাবারের সাথে মিশিয়ে
খেতে পারেন ।
সারা দিনে এক
থেকে দুই টেবিল
চামচ পরিমাণ ভেজানো
সিড খেতে পারেন।
চিয়া সিড একটি
সুপার ফুড।
এর জন্য বেশি
পরিমাণে খেলে বেশি
উপকারিতা পাওয়া যাবে। এমন ধারণা
একেবারেই ভুল।
সঠিক পরিমাণে প্রতিদিন
খেলে প্রচুর উপকারিতা
পাবেন। তবে অতিরিক্ত
পরিমাণে চিয়া সিড
খেলে কিছু অসুবিধা
দেখা দিতে পারে।
যেমন: বদহজম হতে
পারে, রক্তের ঘনত্ব
কমে যেতে পারে,
রক্তে শর্করার মাত্রা
কমতে পারে এবং
এলার্জি দেখা দিতে
পারে। এখন প্রশ্ন
হলো আপনি চিয়া
সিড কোথায় পাবেন
। যেকোনো অর্গানিক
শপ্ বই ই-কমার্স সাইট থেকে
চিয়া সিড কিনে
নিতে পারেন। বর্তমানে
ভারত ও বাংলাদেশে
চিয়া সিড চাষ
করা হয় এবং
খুব সহজেই চিয়া
সিড পাওয়া যায়।