আদা খাওয়ার উপকারিতা
প্রায়
দুই হাজার বছর
ধরে পৃথিবীর বিভিন্ন
দেশে ঔষধ ও
খাদ্য হিসেবে আদা
ব্যবহার হচ্ছে। ভারত
ও বাংলাদেশের রান্নাঘরে
আদার উপস্থিতি অপরিহার্য। আদায়
আছে জিনজারাল নামে
একটি গুরুত্বপূর্ণ বায়োঅ্যাক্টিভ
যৌগ। যা আদার
ঔষধি গুনের জন্য
দায়ী। জিনজারাল অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও
অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি হিসেবে
কাজ
করে।
বিজ্ঞানীদের মতে এতে
আছে কিছু ফিনাল যৌগ
যা হজমে সাহায্য
করে।
মুখের
লালা গ্রন্থির ক্ষরণ
বাড়ায় এবং বাহির
নিঃসরণ করে। এছাড়া
ওজন কমাতে ও
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে
আদা ভালো কাজ
করে থাকে। তাই
আজকের এই লেখাতে
আমরা জানবো আদার
উপকারিতা সম্পর্কে যা
আপনার অনেক সমস্যার
সমাধান করে দিতে
পারে। আপনি ভাবতেও
পারবেন না যে
আদার এত গুণ
রয়েছে। এই সবকিছু
জানতে লেখাটি শেষ
অব্দি
পড়তে।
বদহজম থেকে মুক্তি
অতিরিক্ত
খাওয়া-দাওয়া হলেই
তার সঙ্গে যুক্ত
হয় বদহজমের সমস্যা।
আর এই বদহজমের
সমস্যা থেকে মুক্তি
পেতে কিন্তু এক
কুচ আদাই যথেষ্ট। বদ
হজম
বা
পেট ফাঁপা ভাব
দূর করতে আদা কাজ
করে ম্যাজিকের মত।
মসলাজাতীয় খাবার খাওয়ার
পর এক কুচি
আদা খেয়ে এক
গ্লাস জল পান
করুন
হাতেনাতে
ফল পাবেন।
আদা খাওয়ার উপকারিতা |
খারাপ কোলেস্টেরল কমায়
অনিয়ন্ত্রিত
জীবনযাপন ও খাদ্য
অভ্যাসের জন্য শরীরে
খারাপ কোলেস্টেরল বেড়ে
যেতে পারে। যা
পরোক্ষভাবে হৃদরোগের ঝুঁকি
অনেকটাই বাড়িয়ে দেয়।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা
গিয়েছে যে শরীর
থেকে খারাপ কোলেস্টেরল
এলডিএল দূর করতে
আদার ভূমিকা কিন্তু
অনস্বীকার্য। তাই প্রতিদিনের
খাদ্যতালিকায় আপনার সঙ্গী
হোক আদা।
লিভারের সুরক্ষা আদা
লিভার ভালো রাখতে আদা একটি অনবদ্য উপকরণ। তাই খাদ্যতালিকায় যদি প্রতিদিন আদা রাখেন তাহলে নন-অ্যালকহোলিক ফ্যাটি লিভারের সমস্যা দূর করতে আর কোনো অসুবিধা হবে না। এছাড়া লিভার পরিষ্কার থাকবে ও লিভার জনিত কোন সমস্যা আপনার শরীরে দেখা যাবে না।
ওজন কমায় আদা
দেহের অতিরিক্ত ওজনের কারণে নানা রকম সমস্যা হতে পারে ।তাই বর্তমান সময়ে সকলের একটাই চিন্তা যে ওজন কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করা যায়। সেক্ষেত্রে আপনার সমস্যার সমাধান হতে পারে আদা। আদা যেমন একদিকে হজমে সাহায্য করে অন্যদিকে খিদে কমাতেও বিশেষভাবে সাহায্য করে থাকে ।তাই ওজন কমাতে মুখে রাখুন এক কুচি আদা। তাহলে দেখবেন খুব সহজেই ওজন নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে।
হৃদরোগের সম্ভাবনা কমায়
আদা সব সময় রক্তকে তরল রাখতে সাহায্য করে ।এছাড়া এতে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম ও জিংক। যা শরীরে রক্ত প্রবাহ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে। যা পরোক্ষভাবে হৃদরোগের সম্ভাবনা দূর করতে সাহায্য করে থাকে। তবে আপনার রক্ত যদি আগে থেকেই পাতলা হয়ে থাকে ।তাহলে আদা খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন ।
এলার্জি নিয়ন্ত্রণ করে
অনেকে হয়ত জানেন যে আদা এলার্জি নিরাময়ে বিশেষভাবে সাহায্য করে। গবেষকরা জানান আদা শরীরে হিমোগ্লোবিন ই কম করার মাধ্যমে এলার্জি প্রতিক্রিয়া কম করতে সাহায্য করে। এছাড়া আদার রস শ্বাসনালির সংক্রমণ কমাতে সাহায্য করে।
ক্যান্সার প্রতিরোধ করে
গবেষণায় দেখা গিয়েছে শরীরে বিভিন্ন রকম ক্যান্সার সৃষ্টি হওয়ার হাত থেকে বাঁচাতে সাহায্য করে আদা। আদার মধ্যে থাকে জিনজারাল নামে একটি উপাদান। যা ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে। তাই বুঝতেই পারছেন খাদ্যতালিকায় আদা থাকাটা কতটা জরুরী ।রোজ এক কুচি নিয়ম করে খান । তাহলে ক্যান্সারের মতো মারণ রোগ থেকে নিজেকে অনেকখানি দূরে রাখতে পারবেন ।
রক্তে শর্করার পরিমাণ কমায়
বর্তমানে ডায়াবেটিস একটি জ্বলন্ত সমস্যা ।অনেকেই এমন রয়েছেন যারা ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ।বিশেষ করে টাইপ টু ডায়াবেটিস। দীর্ঘদিন ধরে ওষুধ খেয়েও যদি কোনো সুরাহা না হয় ।তাহলে আপনার সমস্যার সমাধান হতে পারে আদা। বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেখা গেছে আদাতে রয়েছে এন্টি ডায়াবেটিস প্রপার্টি যা রক্তে শর্করার মাত্রা কমিয়ে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে । বমি বমিভাব দূর করে। অনেকেই এমন রয়েছেন যাদের গাড়িতে উঠলে বা পাহাড় বা সমুদ্রে ঘুরতে গেলে বমি বমি ভাব দেখা দেয়। তাদের জন্য আদা চা হলো সবচেয়ে ভালো সমাধান। তবে এক্ষেত্রে প্রেগনেন্ট মহিলার আদা চা খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করে নেওয়া উচিত।
ঋতুকালীন যন্ত্রণা কমায়
এমন
অনেকে মহিলাই
আছেন যারা ঋতুকালীন
সময়ে অসম্ভব
যন্ত্রণা অনুভব করেন। এক্ষেত্রে আদাকে কিন্তু ঋতুকালীন
যন্ত্রণা উপশমের এক
অব্যর্থ টোটকা হিসেবে
ব্যবহার করা হয়
। তাই ঋতুকালীন
যন্ত্রণা থেকে মুক্তি
পেতে আদা চা
তৈরি করে খেতে
পারেন। তাহলে অবশ্যই
উপকার পাবেন।
অস্টিওআর্থাইটিস নিরাময় করে
আদা
অস্টিওআর্থাইটিস এর মত সমস্যা
দূর করতে বিশেষ
হবে উপকারী। উষ্ণ
গরম জলে আদা
টুকরো দুই মিনিট
ফুটিয়ে সপ্তাহে তিনদিন
খান তাহলে ভালো
ফল পাবেন। এছাড়া
আদার তেল বানিয়ে
ব্যথার জায়গায় লাগাতে
পারেন ।এতে আরাম
পাবেন ।
আরও পড়ুন - চিয়া সিড এর উপকারিতা ও খাওয়ার নিয়ম
স্কিনের তারুণ্য বজায় রাখে
সব
সময় ব্যয় বহুল
ফেসিয়াল করলে যে
আপনার স্ক্রিন সুস্থ
ও সুন্দর থাকবে
এমনটা নয় ।
স্কিনের তারুণ্য ধরে
রাখতে আদা বিশেষভাবে
সাহায্য করে। কারণ
আধার মধ্যে থাকা
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ত্বকের দূষণ ও
সূর্যের ক্ষতিকর আল্ট্রাভায়োলেট রে
থেকে বাঁচাতে সাহায্য
করে। তবে স্কিনকে
সুস্থ ও সুন্দর
রাখতে নিয়মিত ভাবে
সঠিক পরিমাণে জল
পান করতে হবে
।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
আদার মধ্যে থাকা অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল ও অ্যান্টি ফাঙ্গাল প্রোপার্টি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে । এর জন্য গরম জলে দুই চামচ গ্রেট করা আদার সঙ্গে লেবুর রস ও মধু মিশিয়ে তা প্রতিদিন খান। ফল পাবেন একদম হাতেনাতে।
মাথা ব্যথা কমায়
আমাদের
মধ্যে অনেকেই মাথাধরা
সমস্যায় ভোগেন। খুব
মাথা ধরলে আদা
চা খেলে অনেকটা
আরাম পাওয়া যায়।
এছাড়া কোন রকম
পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই আপনাকে আরাম
দেবে আদা।
জটিল আমাশা দূর করে
জটিল
আমাশা হলে আদা
শুকিয়ে গুড়ো করে
এক গ্রাম পরিমাণ
হালকা গরম জলে
মিশিয়ে প্রতিদিন দুবার
পান করলে উপকার
পাওয়া যায়। এছাড়া
আদা হজম শক্তি
বৃদ্ধি করে ও
কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে
সাহায্য করে ।