ভাবসম্প্রসারণ সুশিক্ষিত লোক মাত্রই স্বশিক্ষিত
ভাব-সম্প্রসারণ : প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা এবং বাস্তব জীবনের প্রেক্ষাপটে প্রকৃতি থেকে অর্জিত শিক্ষা এ- দুয়ের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। কারণ সীমাবদ্ধতার মধ্য দিয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শেষ হয়ে যায়, কিন্তু শিক্ষার কোনো সীমা বা পরিসীমা নেই। শিক্ষার পূর্ণতার দিকে অগ্রসর হতে হলে মানুষকে নিজস্ব প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে হবে এবং সুশিক্ষিত হওয়ার জন্যে মশিক্ষার মাধ্যমে আত্মসচেতন হতে হবে। কেননা শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হলো জ্ঞানশক্তি অর্জন করা। শিক্ষা সম্পূর্ণভাবেই অর্জনসাপেক্ষ। শিক্ষালাভের জন্যে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। ধাপে ধাপে এগিয়ে শিক্ষার্থিগণ সেসব প্রতিষ্ঠান থেকে ডিগ্রি অর্জন করে এবং শিক্ষিত হিসেবে পরিচিত হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একট সীমাবদ্ধতা আছে। নির্দিষ্ট ডিগ্রি প্রদানের মধ্যেই তার দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার মধ্য দিয়ে। আনের পূর্ণতা আসে না। জ্ঞানকে আত্মস্থ করার জন্যে আত্মপ্রয়াসের কোনো বিকল্প নেই। শিক্ষার পরিধি অনেক বড়। 'দোলনা থেকে কবর পর্যন্ত শিক্ষালাভের সময়। তাই যথেষ্ট জ্ঞান-অনুশীলন ব্যতীত কেউ সুশিক্ষিত হতে পারে না। আমাদের সমাজে এমন অনেকেই রয়েছেন যাদের উচ্চতর ডিগ্রি আছে, কিন্তু দেশ ও জাতির কল্যাণে তাঁরা কিছুই করতে পারেননি। তাদের প্রাতিষ্ঠানিক উচ্চতর ডিগ্রি থাকলেও তাঁরা স্বশিক্ষায় সুশিক্ষিত না হওয়ায় তাঁদের মধ্যে কখনোই মুক্তচিন্তার বহিঃপ্রকাশ ঘটে না, যা দিয়ে তাঁরা দেশ ও দশের উপকার করতে পারেন। পক্ষান্তরে, অনেক স্বশিক্ষিত ব্যক্তি প্রাতিষ্ঠানিক ডিগ্রি ছাড়াও দেশ ও জাতি তথা বিশ্বমানবের কল্যাণের জন্যে অনেক কিছু করে গেছেন। দৃষ্টান্তস্বরূপ- সক্রেটিস, এরিস্টটল, প্লেটো, নিউটন, গ্যালিলিও, কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, নজরুল ইসলাম প্রমুখের নাম উল্লেখ করা যেতে পারে। তাঁরা স্ব-শিক্ষায় সুশিক্ষিত ছিলেন বলেই মরেও অমর হয়ে আছেন। সুশিক্ষিত লোকের মন মুক্তবুদ্ধির আলোকে উদ্ভাসিত হয়, তিনি বিজ্ঞানমনস্ক যুক্তিবাদী দৃষ্টিভঙ্গির অধিকারী হন। পরিশীলিত কুচিবোধে তিনি হন উদার ও বিনম্র। সব মিলিয়ে সুশিক্ষিত মানুষ নিঃসন্দেহে হন আলোকিত মানুষ। তাই একটি দেশ ও জাতির সার্বিক উন্নতিকল্পে অশিক্ষিত ও সুশিক্ষিত লোকের কোনো বিকল্প নেই।
প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা শেষে যথার্থ জ্ঞানার্জনের জন্যে জ্ঞানের রাজ্যে বিচরণ করতে হয়। সুশিক্ষার জন্যে নিজের উদ্যোগের প্রয়োজন হয়। একমাত্র স্বশিক্ষার মাধ্যমেই সুশিক্ষিত হয়ে ওঠা সম্ভব। সেজন্যে সারা জীবন ধরে মানুষের জ্ঞানসাধনা চলে।