থাইরয়েডের সমস্যার ঘরোয়া সমাধান
আজ
এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ
বিষয় নিয়ে আলোচনা
করব লেখাটি সম্পূর্ন
না দেখলে আপনি
বুঝতেই পারবেন না
বিষয়টি আপনার জন্য
কতখানি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ
আজ জানাবো থাইরয়েড সম্পর্কে। এমন
অনেক মানুষ আছেন
যারা বুঝতেই পারেন
না তাদের থাইরয়েড
আছে কিনা।
কারণ থাইরয়েড ভেতরে
ভেতরে আপনার সমস্ত
অরগ্যান কে ধ্বংস
করে ফেলে। এই
জন্যই থাইরয়েডকে বলা
হয় নীরব ঘাতক। যতদিনে
আপনি বুঝতে পারবেন
আপনার থাইরয়েড হয়েছে
ততদিনে মারাত্মক ক্ষতি
হয়ে যাবে।
তাই বলছি আজকের লেখাটি
অবশ্যই সম্পূর্ণ দেখুন
তাহলেই বুঝতে পারবেন
লেখাটি আপনার জন্য
কতখানি গুরুত্বপূর্ণ। লেখাটি
দেখলে জানতে পারবেন
থাইরয়েড থেকে মাত্র
১৫ দিনে মুক্তি
পাওয়ার উপায়। আজ
যে রেমেডি দুটি
বানিয়ে দেখাবো তার
নিয়মিত সেবন করলে
আপনার থাইরয়েডের সমস্যা
দূর হয়ে যাবে
। আর সেইসাথে
আরো জেনে নিন
থাইরয়েড কি? আপনি
বুঝবেন কিভাবে আপনার
থাইরয়েড হয়েছে ? থাইরয়েড
কাদের বেশি হয়
পুরুষ না মহিলা?
কোন বয়সে থাইরয়েড
হয়? এবং থাইরয়েড
কেন হয়?
থাইরয়েড সমস্যা সমাধান |
থাইরয়েড কি?
আমাদের
শরীরের শ্বাসনালীর সামনের
দিকে অবস্থান করা
ছোট একটি গ্রন্থি
হল থাইরয়েড গ্রন্থি।
এই গ্রন্থি থেকে
নিঃসৃত হরমোন শরীরের
নানা কাজে লেগে
থাকে। যেমন বিপাকক্রিয়া,
বাচ্চাদের স্বাভাবিকভাবে বেড়ে
ওঠা ,বয়সন্ধিপ্রভৃতি নিয়ন্ত্রিত
হয় থাইরয়েড নিসৃত
হরমোনের প্রভাবে ।
থাইরয়েড মূলত দুই
প্রকার হয়ে থাকে
প্রয়োজনে
ট্রাইয়োডো
থাইরোনিন
ট্রি
৩,থাইরক্সিন ট্রি-৪ এই দুই
হরমোনের প্রভাবে শরীরের
মেটাবলিজম রেগুলেট হয়ে
থাকে । এই
দুই
হরমোন দুটি শরীরের একটি নির্দিষ্ট
পরিমাণে দরকার পড়ে
। এর থেকে
পরিমাণ বেড়ে গেলে
বা কোন জিনিস
সৃষ্টি হয় সমস্যার
।
থাইরয়েড
বেড়ে গেলে কমে
গেলে যে দুটি
রোগ হয় ।
তাদেরকে বলা হয়
হাইপার থাইরয়েডিজম এবং
হাইপোথাইরয়েডিজম। থাইরয়েড থেকে পর্যাপ্ত
পরিমাণে বেশি হরমোন
নিঃসৃত হলে যে
কন্ডিশন হয় তাকে
বলা হয় হাইপার
থাইরয়েডিজম এবং প্রয়োজনের
তুলনায় যদি কোন
হরমোন নিঃসৃত হয়
তবে সেই কন্ডিশনকে
বলা হয় হাইপোথাইরোডিজম। দুই
ক্ষেত্রেই শরীরে তৈরি
হয় নানান সমস্যা।
এবার শুনে নিন
আপনি বুঝবেন কি
করে আপনার থাইরয়েড
হয়েছে । হাইপোথাইরিজমের
ক্ষেত্রে অর্থাৎ হরমোন
নিঃসরণ কমে গেলে
দুর্বলতা বেড়ে যায়
,ওজন বেড়ে যায়
,ঠান্ডা বেশি লাগে
,হাত পায়ে বিশেষ
করে জয়েন্ট গুলোতে
অত্যধিক ব্যথা অনুভূত
হয় ,ত্বক শুষ্ক
হয়ে যায় ইত্যাদি
সমস্যাগুলো দেখা দেয়।
অন্যদিকে আপনার যদি
হাইপারথাইরয়ডিজম অর্থাৎ হরমোন ক্ষরণ
বেড়ে যায়। তাহলে
ক্লান্তি হয়, চুল
পড়ে যায়, আপনার
স্মৃতিশক্তি অত্যন্ত দুর্বল
হয়ে পড়ে। স্বরের
পরিবর্তন হয় এবং
আপনার শরীরের ওজন
ধীরে ধীরে কমে
যেতে থাকে।
থাইরয়েড কাদের বেশি হয় পুরুষ নাকি মহিলা আর কোন বয়সে থাইরয়েড বেশি হয়ে থাকে?
একথা সত্যি যে মহিলাদের থাইরয়েডের সমস্যা বেশি হয় । বেশি হওয়ার কারণ হিসেবে বলা যেতে পারে মেয়েদের শারীরিক গঠন ,হরমোনের প্রভাব, অর্গানিক মেটাবলিজম প্রভৃতি । এই সমস্যার কারণে মেয়েদের ওজন বেড়ে যেতে থাকে ,অসহ্য শীত লাগে আবার কখনও কখনও অসহ্য গরম অনুভূত হয়, শরীরে ব্যথা হতে পারে, চুল পড়ে যেতে পারে, প্রচন্ড দুর্বলতা অনুভূত হতে পারে ,মাসিক অনিয়মিত হবে, গলা খুলে যাবে এবং পরবর্তী সময়ে বাচ্চা উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস পাবে তো বারবার গর্ভপাতের মতো বিষয়ও ঘটতে পারে । মেয়েদের মানসিক ও শারীরিক ভারসাম্যহীনতার ঘটতে পারে যদি থাইরয়েড হয়ে থাকে এবং স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পেতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা হলো মেয়েদের গর্ভকালীন সময়ে থাইরয়েডের সমস্যা বেশি দেখা দেয় । তাই আপনি গর্ভবতী হওয়ার সাথে সাথেই অবশ্যই আপনার থাইরয়েড টেস্ট করিয়ে নিন । একটি জরিপে দেখা গিয়েছে মোট জনসংখ্যার ১৫ শতাংশ লোক থাইরয়েড রোগে ভুগছেন। যার মধ্যে আমাদের দেশের শতকরা ৬.২ ভাগ শিশু এবং ১১.৭ ভাগ মহিলা । অর্থাৎ বুঝতেই পারছেন শিশুকাল থেকেই এই রোগের সূচনা হয়। শুধুমাত্র বয়স্কদেরই নয় শিশুদের জন্য হুমকি থাইরয়েড। কেন না থাইরয়েড হলেই তার বুদ্ধির আসতে থাকে এবং তার শারীরিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়। তাই আপনার থাইরয়েড হয়েছে কিনা এই ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া খুব জরুরি ।
থাইরয়েড কেন হয় ?
কারণ
হিসেবে প্রাথমিক ভাবে
বলা যায় শরীরে
আয়োডিনের অভাব ।
শরীরের চাহিদা অনুযায়ী
পর্যাপ্ত পরিমাণে আয়োডিন
না খাওয়াই থাইরয়েড
হওয়ার প্রাথমিক কারণ।
তবে অনেকের ক্ষেত্রেই
বংশগত হতে পারে।
তবে থাইরয়েড হলে
ভয় পাবেন না।
আপনি যে দুটি
রেমিডি প্রস্তুত করে
দেখাবো যদি সঠিক
নিয়মে সেবন করতে
পারেন তাহলে আপনার
থাইরয়েডের সমস্যা একদম
নির্মূল হয়ে যাবে
।
জেনে নেই সেই রেমিডি দুটি:
প্রথম উপায়
প্রথম রেমিডি বানাতে লাগবে তিসি। তিসিকে নিশ্চয়ই অনেকেই চেনেন। ইংরেজিতে তিসিকে বলা হয় ফ্লেক্স। তিসি হচ্ছে আঁশসমৃদ্ধ ,প্রোটিন, ক্যালসিয়াম ,অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ওমেগা থ্রি, ফ্যাটি আসিড এবং মিনারেলসের এক অসাধারণ সমন্বয় । তিসিরওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড ।আপনার হরমোনের গ্রোথকে অর্থাৎ থাইরয়েড হরমোনের নিঃসরণকে নিয়ন্ত্রণ করে। এতে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স ,ম্যাঙ্গানিজ ও ম্যাগনেসিয়াম প্রচুর পরিমাণে থাকে । তিসি আমাদের শরীরে এন্টিঅক্সিডেন্ট এর কাজ করে এবং তিসি শুধুমাত্র আপনার দেহে থাইরয়েড হরমোনের নিঃসরণ ঠিক রাখে তাই নয় । তিসি আপনার শরীর থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয় । তিসি ব্লাড ক্যান্সার এবং বেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধ করে । গ্যাস্ট্রিক আলসার এবং অ্যাজমা বা শ্বাসকষ্টের মতো সমস্যা দূর করে । যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তাদের জন্য তিসি খুব ভালো । তিসি সেবন করলে আপনার ডায়বেটিস একদম কন্ট্রোলে চলে আসবে। এই তিসি আমরা থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণ করতে কিভাবে কাজে লাগাবো? তিসি প্রথমে হালকা তাপে ভেজে নিতে হবে । তবে মনে রাখবেন একদম তেল দিয়ে ভাজা যাবে না। হালকাভাবে এই তিসি আপনাকে ভেজে নিতে হবে এবং তারপরই তিসি গুড়ো্যকরে নিতে হবে । আপনি একটা মিক্সার গ্রাইন্ডার অথবা পাঠায় যে কোনভাবেই হোক । তিসি গুড়ো করে নিন । এই গুড়াটি এক গ্লাস উষ্ণ গরম পানিতে মেশাতে হবে। খুব ভালো করে গুলিয়ে নিন। ১ চা চামচ পরিমাণ তিসি প্রতিদিন এক গ্লাস জলে গুলে আপনাকে সেবন করতে হবে সকালে । খালি পেটে অথবা রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে ।রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে তিসি খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায়। এই ভাবে আপনাকে খেতে হবে টানা ১৫ দিন। মাত্রা যদি বেশি হয়ে থাকে তাহলে আপনি ১৫ দিন থেকে শুরু করে দেড় মাস পর্যন্ত খেতে পারবেন । এতে আপনার থাইরয়েড একদম কন্ট্রোলে চলে আসবে ।
আরও পড়ুন - উচ্চ ক্যালসিয়াম যুক্ত খাবার
দ্বিতীয় উপায়
দ্বিতীয় উপায়টি জন্য লাগবে ধনেপাতা ধনেপাতা। একদম টাটকা ধনেপাতা আপনাকে ব্যবহার করতে হবে। হাইপোথাইরয়েডের কারণে যাদের অতিরিক্ত ওজন হয়ে গেছে এবং যাদের সারাদিনই খুব্য ক্লান্ত লাগে। তারা অবশ্যই ধনেপাতাকে খেয়ে আপনার থাইরয়েডকে কন্ট্রোলে আনতে পারবেন । তবে শুধু থাইরয়েড কন্ট্রোল নয় । ধনেপাতা একইসাথে আপনাকে অনেক ধরনের উপকারিতা দেবে যেমন : আপনার ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে রাখবেন ,আপনার গলার ইনফেকশন থাকলে তা দূর করবে ,সর্দি-কাশি শ্বাসকষ্টের সমস্যা দূর করবে। ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখবে। আপনার স্কিনের যেকোনো সমস্যা হলে তা থেকে আপনাকে রক্ষা করবে ধনেপাতা। থাইরয়েডের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে হলে ধনেপাতা দিয়ে রেমিডি প্রস্তুত করার জন্য প্রথমে এই পরিমাণ ধনেপাতা নিয়ে এগুলো খুব ভালো করে ধুয়ে নিয়ে তারপরে এগুলোকে পেস্ট করতে হবে । আপনি যেকোন ব্লেন্ডার অথবা পাতায় এটাকে এইরকম ভাবে পেস্ট করে নিন । এবার এই ধনেপাতার পেস্ট প্রতিদিন এক চামচ করে আপনাকে সেবন করতে হবে । ১ চা চামচ পরিমাণ আপনি দিবেন এক গ্লাস উষ্ণ গরম পানিতে। এই ধনেপাতা রেমিডি আপনাকে পান করতে হবে অবশ্যই সকাল বেলায় খালি পেটে । আপনি যদি তিসি সেবন করে থাকেন । তাহলে আপনার ধনেপাতা সেবন না করলেও চলবে । আপনি যেকোনো একটি উপায় গ্রহণ করুন । তিসি অথবা ধনেপাতা যেকোনো একটি রেমিডি আপনি ১৫দিন থেকে শুরু করে দেড় মাস পর্যন্ত সেবন করতে পারেন । তারপরে আপনি থাইরয়েড টেস্ট করে দেখুন আপনার থাইরয়েড লেবেল কোন অবস্থানে আছে । তবে এই সময় আপনি একদম চিনিজাতীয় কোন জিনিস খাবেন না। অর্থাৎ আপনাকে চিনি সম্পূর্ণ বর্জন করতে হবে এবং সেইসাথে আপনাকে সয়াবিনের সমস্ত প্রোডাক্ট খাওয়া বন্ধ করতে হবে। অর্থাৎ আপনি সয়াবিন তেল খেতে পারবেন না ,সয়ামিল খেতে পারবেন না এবং সয়াবিন খেতে পারবেন না। থাইরয়েড এর জন্য সয়াবিন মারাত্মক ক্ষতিকর একটি খাবার । আপনি সয়াবিন খাবেন না এবং চিনিজাতীয় কোন জিনিস খাবেন না । পারলে আপনি অবশ্যই দিনে আধাঘন্টা করে ব্যায়াম করতে থাকবেন। কেননা থাইরয়েড হলে ব্যায়াম করা খুব জরুরি। এছাড়া আপনি ডিম খাবেন। ডিম সেদ্ধ করে খাবেন সেই সাথে আপনি প্রচুর পরিমাণে মাছ খাবেন। আপনি দুধও খেতে পারেন। এ খাবারগুলো আপনাকে মেইনটেইন করতে হবে এবং সেই সাথে ব্যায়াম করতে হবে। আপনি হাঁটতে পারেন সকালবেলায় অথবা হালকা ফ্রি-হ্যান্ড এক্সারসাইজ করতে পারেন। যদি আপনি এই নিয়মগুলো মেনে চলার সাথে এই দুটি রেমেডি সেবন করতে থাকেন তাহলে আপনার থাইরোড একদম কন্ট্রোলে চলে আসবে আর থাইরয়েড হওয়ার ফলে আপনার শারীরিক যে সমস্যাগুলো ছিল সেই সমস্যাগুলো আর হবে না।