স্বল্প পুঁজির পাঁচটি ব্যবসা আইডিয়া
বাংলাদেশের শিক্ষার হার প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পেলেও সে তুলনায় পর্যাপ্ত কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হচ্ছে না। ফলে দেশের জনসংখ্যা একটি বড় অংশ এখনো বেকার রয়েছে গিয়েছে। ২০২২ সালে বাংলাদেশে তরুণদের মধ্যে মোট বেকারত্বের হার ১০.৬%। এই বেকার জনসংখ্যার মধ্যে অনেকেই ব্যবসায় আগ্রহী হলেও পর্যাপ্ত ক্যাপিটালের অভাবে নিজে থেকে ব্যবসা শুরু করতে পারে না। যদিও ব্যবসা শুরু করতে সব সময় যে বড় ইনভেস্টমেন্ট প্রয়োজন এমন না। বর্তমান সময়ে স্বল্প পুঁজি নিয়ে বিভিন্ন ধরনের ব্যবসা করার সুযোগ রয়েছে। আজকের লেখাতে আপনাদের এমনই পাঁচটি বিজনেস আইডিয়া সম্পর্কে জানাবা।
স্বল্প পুঁজির পাঁচটি ব্যবসা আইডিয়া
১.ফুড কোর্ট/ কফি শপ্/ জুস্ বার:
স্বল্প
পুঁজিতে ব্যবসার ক্ষেত্রে
শহরের যেকোনো জনবহুল
এলাকা থেকে শুরু
করে মফস্বল শহরের
জুস বার কফিশপ
এবং ফুড কার্ট
বেশ লাভজনক একটি
ব্যবসা হতে পারে।
এ ধরনের ব্যবসা
স্থাপন করতে খুব
বেশি পুঁজি কিংবা
লোকবলের দরকার হয়
না। ফিজিক্যাল শপ্
ছাড়া একটি ভ্যান
কিংবা একটিয়ছোট জায়গা
ভাড়া নিয়ে স্বল্প
ইনভেসমেন্টে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি
কিনা সহজে ব্যবসা
শুরু করা যায়।
এছাড়া জুস বার,
কফি শপ্ কিংবা ফুড কোর্টের মত
বিজনেস পরিচালনায় রো
ম্যাটেরিয়াল থেকে শুরু
করে বিভিন্ন ইনগ্রেডিয়েন্টস খুব
সহজেই সোর্সিং করা
যায় । যেমন:
জুসের
ক্ষেত্রে কাস্টমারা মৌসুমি
ফলকে বেশি প্রাধান্য দেয়। যা
মৌসুম চলাকালীন বাজারে
পাওয়া যায়। ফুড
কোর্টের ক্ষেত্রে বার্গার,
চাওমিন, মোমের মতো
আইটেমগুলো কাস্টমারের কাছে
বেশ জনপ্রিয় ।
কফি কার্ট কিংবা
ফুড কার্টের জন্য
প্রয়োজনীয় জিনিস গুলো
এখন দেশের যেকোনো
প্রান্ত থেকে সোর্সি
করে নিয়ে যাওয়া
সম্ভব এবং অনেক ক্ষেত্রেই নিজে থেকেই
তৈরি করা যায়।
এ ধরনের বিজনেসের জন্য যেসব জিনিসের প্রয়োজন পড়ে সেগুলোর দাম তেমন বেশি হয় না। যার কারণে জুস বার, কফিশপ এবং ফুড কোর্টের মতো বিজনেস থেকে বেশি পরিমাণে মার্জিন রেখে লাভ করা সম্ভব। তাছাড়া বর্তমানে ফুডপান্ডা, পাঠাও ফুডের মতো বিভিন্ন ফুড ডেলিভারি অগ্রিগেটররা রেস্টুরেন্টের পাশাপাশি ফুড কোর্টেও স্ট্রিটফুড গুলোকেও প্ল্যাটফর্মগুলোতে এন্ড হওয়ার সুযোগ দিচ্ছে। যার কারণে এক্সিলেন্স ফিজিক্যাল শপে্র পাশাপাশি অনলাইন ফুড এগরিকেটরদের সাথে যুক্ত হয় হোম ডেলিভারি প্রভাইড করায় এক্সট্রা রেভিনিউ স্ট্রিং হতে পারে।
২.ক্যাটারিং সার্ভিস/ ক্লাউড কিচেনে:
চাকরিজীবীদের
জন্য অন্যতম একটি
সমস্যা হচ্ছে দুপুরে
লাঞ্চ। আপনার যদি
ফুড সেক্টরে বিজনেস
করার আগ্রহ থাকে।
কিন্তু পর্যাপ্ত ক্যাপিটালের
অভাবে বিজনেস স্টার্ট
করতে পারছেন না
। সে ক্ষেত্রে
স্বল্প পুঁজির মধ্যে
মধ্যে ক্যাটারিং সার্ভিস
ও ক্লাউড কিচেন
ব্যবসা একটি লাভজনক
অপশন হতে পারে
। যে কেউ
চাইলে নিজের বাসা
থেকে কিংবা ছোট্ট
একটি জায়গা ভাড়া
নিয়ে খুব সহজেই
ক্যাটারিং বা ক্লাউড বিজনেস শুরু
করতে পারে। বাংলাদেশে গত
এক দশকে ব্যবসা-বাণিজ্যের ব্যাপক প্রসার
হয়েছে এবং প্রতিনিয়ত
নতুন প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম
শুরু করেছে । যার
কারণে ক্যাটারিং সার্ভিসের
জন্য প্রতিনিয়ত বেড়েই
চলেছে। ফলশ্রুতিতে অফিস-আদালতের সুস্বাদু ও
স্বাস্থ্যসম্মত খাবার রিজনাবল
প্রাইসে ডেলিভারি দেওয়ার
সলিড ইনকাম সোর্স
হতে পারে। অফিস-আদালত ছাড়াও ছোটখাটো
পার্টি কিংবা সোশ্যাল
গেদারিংও
ক্যাটারিং
সার্ভিস দেয়া যেতে
পারে। এছাড়া এক্সিস্টিং
কিচেনের একটা অংশকে
কিছুটা মডিফাই করে
সেখান থেকে ক্লাউড
কিচেনে রান করা
সম্ভব । এতে
করে অফলাইনে ক্যাটারিং
সার্ভিস দেওয়ার পাশাপাশি
ফুডপান্ডা ,পাঠাও ফুডের
মতো ফুড ডেলিভারি
সার্ভিস প্রোভাইডার এর
মাধ্যমে নিজের রেস্টুরেন্ট পরিচালনায়
সম্ভব।
ফলশ্রুতিতে
রেভিনিউ
স্ট্রিম
ড্রাইভারসিফাই
করা
যাবে। ঠিক তেমনি
রেস্টুরেন্টের মতো ইনভেসমেন্ট
প্রয়োজন না হওয়াতে
এবং বাড়তি ওভারহেড
কস্ট না থাকাতে
রেস্টুরেন্ট এর চেয়েও
বেশি পরিমাণে প্রফিট
মার্জিন রাখা সম্ভব
। এছাড়া খাবারে
কোয়ালিটি ,স্বাদ ওৎ
ইউনিয়নের বজায় রাখতে
পারলে সেখান থেকে
একটি রেস্টুরেন্ট ব্র্যান্ড
চেইনও
ক্রিয়েটিভ
করা সম্ভব।
৩. ফুল ও গিফট শপ্:
বাংলাদেশের
মানুষের মধ্যে জন্মদিন,
অ্যানিভার্সারি থেকে শুরু
করে বিভিন্ন অকেশানে
ফুল ও গিফট
দেয়ার প্রচলন বেড়েছে
। এছাড়া বসন্তবরণ,
ভ্যালেন্টাইন ডে থেকে
শুরু করে বিভিন্ন
জাতীয় দিবসকে ঘিরে
দেশে ব্যাপক চাহিদা
রয়েছে। বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার
সোসাইটির মতে বিভিন্ন
দিবস কে কেন্দ্র
করে সারা দেশে
বাণিজ্যিকভাবে ফুলের চাষ
হচ্ছে। যার মার্কেট
ভ্যালু প্রায় ১৬০০
কোটি টাকা। যার
কারনে স্বল্প পুঁজিতে
ফ্লাওয়ার এন্ড গিফট
শপ বেশ লাভজনক
একটা ব্যাবসা হতে
পারে। যেহেতু দেশে
প্রচুর পরিমাণে ফুলের
চাষ হচ্ছে তাই
খুব সহজে চাষিদের
থেকে পাইকারি দরে
ফুল সংগ্রহ করে
শহরের যেকোনো এলাকাতেই
ছোট পরিসরে ফুল
ও
গিফটের
ব্যবসা করা যেতে
পারে । গিফট আইটেম এক্ষেত্রে
দেশীয় হ্যান্ডিক্রাফট থেকে শুরু
করে বিভিন্ন চাইনিজ
মেড গিফট আইটেম
সেল করা সহজ।
গিফট আইটেমস সোর্স
করার ক্ষেত্রে চায়না
থেকে
কোন
রকম এলসি বা
পেপার ওয়ার্ক ছাড়াই
প্রডাক্টটি
ইমপোর্ট
করার জন্য অলরেডি
বেশকিছু সার্ভিস রয়েছে। দোকান
ভাড়া ও কোনরকম
ডেকোরেশনের মিনিমাম ইনভেস্টমেন্ট
করে ফ্লাওয়ার গিফট
শপ স্থাপন করা
সম্ভব।
ফিজিক্যাল
শপে্র পাশাপাশি ফেসবুক
কিংবা ইনস্টাগ্রামের মাধ্যমে
পাশাপাশি অনলাইন থেকে
অর্ডার নিয়ে ডেলিভারি
সার্ভিস ব্যবহার করে
ব্যবসা পরিচালনা করা
যায়।এতে করে ব্যবসার রেভিনিউ স্ট্রিম
ড্রাইভারসিফাই
করার
পাশাপাশি রেভিনিউ বাড়ানো
সম্ভব হবে ।
৪. প্যাকেজিং:
বাংলাদেশে
বিগত কয়েক বছরে
ই-কমার্স এবং এফ-কমার্স ভিত্তিক ব্যবসার
ব্যাপক জনপ্রিয়তা ও
প্রসার বেড়েছে। ই-ক্যাবের তথ্যসূত্রে দেশে
আড়াই হাজারেরও বেশি
ই-কমার্স এবং
ফেসবুকে ভিত্তিক আড়াই
লাক্ষ
অ্যাক্টিভ
বিজনেস রয়েছে। এসব
বিজনেসর জন্য অত্যন্ত
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে
প্যাকেজিং। স্বল্প পুঁজিতে
ব্যবসার ক্ষেত্রে ভিন্ন
ধরনের প্যাকেজিং ম্যাটারিয়াল
সাপ্লাই দেওয়া বেশ
লাভজনক হতে পারে।
এক্ষেত্রে পণ্যে স্বল্প
খরচে
কয়জন
করে ভাড়া করে
তৈরি করা যায়
এবং এ ধরনের
প্রোডাক্টের জন্য প্রয়োজনীয়
ম্যাটেরিয়াল খুব সহজেই
সোর্সিং করা যায়।
বাংলাদেশের ট্রাডিশনাল মাধ্যম
থেকে প্রিন্টিং এন্ড
প্যাকেজিং এর বিভিন্ন
ম্যাটেরিয়ালস সোর্স গেলেও
অনেক ক্ষেত্রেই সেগুলো
কাস্টমাইজ করা যায়
না । আবার
বড় প্রিন্টিং এন্ড
প্যাকেজিং প্রতিষ্ঠানগুলোর ছোট
আকারের অর্ডার নিতে
চায় না। এক্ষেত্রে
কাস্টমাজ
প্রিন্টং
সার্ভিসের দেওয়ার মাধ্যমে
বিজনেসে বিভিন্ন f-commerce উদ্যোক্তাদের আকর্ষিত করা সম্ভব । আবার
ছোট বিজনেস গুলো
থেকে বেশ কয়েকটি অর্ডারে এগ্রিগেট
করে তা বড়
কোন প্রিন্টিং প্রেস
থেকে স্বল্প মূল্যে
করে নিতে পারেন।
এভাবে বিজনেস করতে
ফিজিক্যাল লোকেশন ছাড়াই
শুধুমাত্র ফেসবুক পেজের
মাধ্যমে একটি সলিড
বিজনেস রান করা সম্ভব।
৫. স্পাইস এন্ড ড্রাই ফ্রুট:
বর্তমান সময়ে মানুষের মধ্যে হেলথ কনসাস বাড়ায় খাঁটি এবং স্বাস্থ্যসম্মত খাবার আইটেমের চাহিদা বেড়েছে। স্বাস্থ্যসম্মত খাবার তৈরি ক্ষেত্রে খাবারে ব্যবহৃত বিভিন্ন উপাদানের প্রতিও মানুষের সচেতনতা বেড়েছে। যার কারণে প্যাকেটজাত মসলার বদলে মানুষ স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ে প্রক্রিয়াজাত করা খাঁটি মসলা ,তেল ও রান্নার জন্য প্রয়োজনীয় অন্যান্য উপাদান কেনার প্রতি আগ্রহী হচ্ছে। স্বাস্থ্যসম্মত খাবার প্রতি আগ্রহ থেকে মানুষ যাদের নিয়মিত খাদ্যাভাসে বিভিন্ন প্রকার নাটস্ এবং ড্রাই ফ্রুট আইটেমও রাখছে। যার কারণে খাঁটি এবং অর্গানিক মসলা ও ড্রাই ফ্রুটের একটি মার্কেট তৈরি হয়েছে যা প্রতিনিয়ত বড় হচ্ছে । দেশের প্রান্তিক পর্যায়ের চাষিদের থেকে অল্প দামে কিনে স্বাস্থ্যসম্মত প্রক্রিয়ার প্রসেস করাই হলুদ-মরিচ থেকে শুরু করে বেশ কয়েক ধরনের মসলা এবং তেল কাস্টমাইজ সাপ্লাই দেয়া সম্ভব। এছাড়া ঢাকার নিউমার্কেট, কাপ্তানবাজার, সোয়ারীঘাট , মতিঝিল ও মিরপুরের বিভিন্ন পাইকারদের থেকে খুব সহজে বিভিন্ন ধরনের মসলা ড্রাই ফ্রুটস, নাটস্ ,সীড সোর্সি করে তার সঠিকভাবে প্রক্রিয়াজাত এবং প্যাকেজিং করার মাধ্যমে বিজনেস করা যায়। ফিজিক্যাল শপ্ ছাড়া অনলাইন পেইজ এবং ই-কমার্স মাধ্যমে সারাদেশে ডেলিভারী দেয়ার মাধ্যমে থেকে বর্ধমানের লাভ করার পাশাপাশি কোয়ালিটি মেন্টেন করতে পারলে অর্গানিক ফুডের বান্ডও করা সম্ভব।
আরও পড়ুন - শেয়ার বাজারে বিনিয়োগ করার নিয়ম