দেশপ্রেম
দেশ এবং দেশের মানুষের জন্যে যে ভালোবাসা তাই দেশপ্রেম। জন্মসূত্রে জন্মভূমির সঙ্গেই গড়ে ওঠে মানুষের নাড়ির যোগ। স্বদেশের জন্য তার মনে জন্ম নেয় নিবিড় ভালোবাসা। এই অনন্য ভালোবাসাই হচ্ছে স্বদেশপ্রেম। জন্মভূমির মাটি, আলো-বাতাস, অন্ন জনের প্রতি মানুষের মমত্ব অপরিসীম। জন্মভূমির ভৌগোলিক ও সামাজিক পরিবেশের প্রতি থাকে তার একধরনের আবেগময় অনুরাগ। জন্মভূমির ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, ঐতিহ্যের সঙ্গে গড়ে ওঠে তার শেকড়ের বন্ধন। যদেশের প্রকৃতি ও মানুষের প্রতি এই অনুরাগ ও বন্ধনই দেশপ্রেম। দেশপ্রেমের মধ্য দিয়েই মা, মাতৃভূমি আর মাতৃভাষার প্রতি গভীর ভালোবাসার আবেগময় প্রকাশ ঘটে। দেশপ্রেম মানুষের অন্তরে সদা বহমান থাকে। একজন দেশপ্রেমিক নিজ দেশ এবং দেশের জনগণের স্বার্থকে নিজের স্বার্থ বলে বিবেচনা করেন। দেশপ্রেমিক নাগরিক শোষণ বঞ্চনা অন্যায়, অবিচার, ঘুষ, দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকেন। দেশকে পরাধীনতার শৃঙ্খল থেকে মুক্ত করার সংগ্রামে অবতীর্ণ হন। আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে সমগ্র জাতির ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামে স্বদেশপ্রেমের চূড়ান্ত অভিব্যক্তি ঘটেছে। দেশপ্রেম দেশ ও জাতির অগ্রগতির লক্ষ্যে জ্বলন্ত প্রেরণা হিসেবে কাজ করে। জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সবাইক একপ্রাণ হয়ে মহৎ লক্ষ সাধনে ব্রতী করে। দেশকে ভালোবাসার মধ্য দিয়ে মানুষ বিশ্বকে ভালোবাসতে পারে। অনন্য দেশপ্রেমের অনেক উজ্জবল দৃষ্টান্ত রয়েছে দেশে দেশে। সারা বিশ্বের মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় সিক্ত তাঁরা। বিশ্বের দেশের দেশে বহু রাষ্ট্রনায়ক দেশ ও জাতিকে নবচেতনায় উদ্বুদ্ধ করেছেন। আমেরিকার জর্জ ওয়াশিংটন, রাশিয়ার লেনিন, চীনের মাও সে তুং, ভিয়েতনামের হো চি তুরস্কের মোস্তফা কামাল পাশা, ইতালির গ্যারিবাল্ডি, ভারতের মহাত্মা গান্ধী এবং বাংলাদেশের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান প্রমুখ রচনা করেছেন দেশেপ্রেমের অমরগাথা। দেশপ্রেম এক জ্বলন্ত মহৎ প্রেরণা। সে প্রেরণায় উজ্জীবিত হয়ে আমরা ব্যক্তিগত স্বার্থচেতনার উর্ধ্বে উঠি। যুক্ত হই সমষ্টির কল্যাণচেতনায়। দেশের সংকটে ঐক্যবদ্ধ হই। সর্ব অনজান থেকে দেশ ও দেশবাসীকে রক্ষা করতে সচেষ্ট হই। দেশের উন্নতি ও অগ্রগতিতে সাধ্যমতো অবদান রাখি। দেশপ্রেমের ভেতর দিয়েই আমরা বিশ্বপ্রেমের সেতুবন্ধন রচনা করতে পারি।