অশ্বগন্ধা খাওয়ার উপকারিতা

অশ্বগন্ধার উপকারিতা ও অপকারিতা


প্রাচীন আয়ুর্বেদ চিকিৎসা একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো অশ্বগন্ধা । স্বাস্থ্য সুরক্ষায় অশ্বগন্ধার উপকারিতা অপরিসীম । মানসিক চাপ কমানোর ঔষধি হিসেবে এটি সর্বাধিক পরিমাণে ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও অনিদ্রা দূর করতে, ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে, ডায়াবেটিস ও থাইরয়েড সমস্যায় এবং পুরুষের প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে অশ্বগন্ধা দারুন ভাবে কাজ করে । কারণ এতে বিভিন্ন ভেষজ উপাদান পাওয়া যায় যেমন অ্যালকালয়েড, টেনিস, স্যাপোনিন্স ইত্যাদি । এছাড়াও বিভিন্ন বায়োএক্টিভ  উপাদান যেমন উগান্ডা, উইথাফেরিন এতে উপস্থিত রয়েছে । তাই আপনি যদি সঠিক পরিমাণে অশ্বগন্ধা সেবন করতে পারেন তাহলে প্রচুর উপকারিতা পাবেন । আজকের এই লেখাতে আমরা জানবো অশ্বগন্ধার উপকারিতা কি কখন কীভাবে ও কতটুকু পরিমাণে  এটি গ্রহণ করা উচিত। এছাড়াও জানবো  কোন কোন পরিস্থিতিতে অশ্বগন্ধা সেবন করা উচিত নয়। এই সবকিছু জানতে লেখাটি শেষ অব্দি দেখতা থাকুন। 


অশ্বগন্ধার উপকারিতা ও অপকারিতা,অশ্বগন্ধার উপকারিতা,অশ্বগন্ধা গাছের উপকারিতা,অশ্বগন্ধার কাজ কি,আশ্চর্য ভেষজ অশ্বগন্ধা,অশ্বগন্ধা খেলে কি হয়,অশ্বগন্ধা খাওয়ার নিয়ম
অশ্বগন্ধা খাওয়ার উপকারিতা



অশ্বগন্ধা নামটি মূলত এসেছে এই গাছের শেকড় থেকে। অশ্বগন্ধা গাছের মূল থেকে ঘোড়ার মতো এক ধরনের গন্ধ পাওয়া যায় । তাই অর্শ বা ঘোড়ার সাথে মিল রেখে এই গাছের নামকরণ করা হয়েছে অশ্বগন্ধা । অশ্বগন্ধা গাছের বৈজ্ঞানিক নাম হল Withania Somnifera । সাধারণত এই গাছটি প্রজাতির হয়ে থাকে জংলি ও সাধারণ অশ্বগন্ধা। মূলত অশ্বগন্ধার সাধারণ প্রজাতি আমরা ওষুধ হিসেবে ব্যাবহার করি । এই গাছের উপকারিতা আছে যেমন:

 

 

অনিদ্রা ও মানসিক চাপ  নিয়ন্ত্রণ করে:  

মানসিক চাপের কারণে আমাদের দেহে নানারকম সমস্যা হতে পারে। তাই মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করা খুব প্রয়োজন। এক্ষেত্রে অশ্বগন্ধা দারুন ভাবে সাহায্য করে । অশ্বগন্ধার এনজায়টোটিক উপাদান মানুষের স্নায়ুতন্ত্রের উপর কাজ করে মানসিক চাপ কমাতে সক্ষম । এছাড়াও এটি আমাদের ক্লান্তি দূর করতে সাহায্য করে । এর ফলে খুব সহজেই ঘুম আসে । আমাদের মধ্যে অনেকেরই অনিদ্রার মতো সমস্যা আছে। এই সমস্যা দূর করতেও অশ্বগন্ধা দারুন ভাবে সাহায্য করে। তাহলে বুঝতেই পারছেন শুধুমাত্র অশ্বগন্ধা সেবনের মাধ্যমে আপনি অনিদ্রা দূর করতে পারবেন এবং মানসিক চাপকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।

 

 

 

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে:

বর্তমান সময়ে প্রায় ঘরে ঘরেই টাইপ টু ডায়াবেটিস রোগের নাম শোনা যায়। আমাদের লাইফস্টাইল অখাদ্য পাশের কারণেই টাইপ টু ডায়াবেটিস  ভয়ংকর আকার ধারণ করছে । এক্ষেত্রে অশ্বগন্ধা আপনাকে দারুন ভাবে সাহায্য করতে পারে। অশ্বগন্ধার মূল ও পাতার রসে থাকে অ্যান্টি ডায়াবেটিক উপাদান যা ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে। এছাড়াও অশ্বগন্ধার মূল ও পাতার কোষে  ফ্লাবানয়েটস্ নামক একটি উপাদান থাকে যা ডায়াবেটিস রোগীর দেহে ইনসুলিনের পরিমাণ বাড়াতে সাহায্য করে। তাই অশ্বগন্ধা নিয়মিত সেবন করলে আপনি খুব সহজেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন।

 

 

হৃদযন্ত্র ভালো রাখে:

অশ্বগন্ধা কোলেস্টোরেল এবং ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কমাতে দারুন ভাবে সাহায্য করে। এই স্নেহ পদার্থ গুলি আমাদের হৃদযন্ত্র নানারকম অসুখের জন্য দায়ী । অশ্বগন্ধার অ্যান্ড্রোজেনিক উপাদানসমূহ চাপ কমাতে সাহায্য করে । কিছু গবেষক দাবি করেন যে হৃদপেশীর শক্তি বাড়াতে উদ্ভিদের অনেক কার্যকরী ভূমিকা নেয় এবং হৃদপেশীর উপর চাপ কমাবার জন্য এটি একটি উপযুক্ত উপাদান । তাই আপনার হৃদযন্ত্র সুস্থ রাখতে চাইলে আপনি অংশগ্রহণ করতে পারেন।

 

যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি করে:

অশ্বগন্ধা পুরুষ ও নারীদের যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। মানুষের দেহে টেস্টোস্টেরন ও প্রজেস্টেরন হরমোনের পরিমাণ বাড়াতে অশ্বগন্ধা গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। এই হরমোন বৃদ্ধির ফলে মানুষের যৌন আকাঙ্ক্ষা ও যৌন ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে যে অশ্বগন্ধা পুরুষদের প্রজনন ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে এবং নিয়মিত অশ্বগন্ধা সেবন করলে শুক্রাণুর সংখ্যা বৃদ্ধি হয়।

 

থাইয়েড সমস্যা দূর করে:

অশ্বগন্ধা সেবন করলে থাইরয়েড গ্রন্থির ক্ষরণ বৃদ্ধি হয় । আমাদের মধ্যে অনেকেরই হাইপোথাইরয়েডিজমের সমস্যা আছে। এর ফলে থাইরয়েড গ্রন্থির হরমোন ক্ষরণ কম পরিমাণে হয় । গবেষণায় দেখা যায় যে নিয়মিত অশ্বগন্ধা সেবন করলে থাইরয়েড গ্রন্থির হরমোন ক্ষরণ বৃদ্ধি হয়। তাই হাইপোথাইরয়েডিজমের সমস্যা থাকলে আপনি অশ্বগন্ধা সেবন করতে পারেন।

 

ত্বক ভালো রাখে:

অশ্বগন্ধা ত্বকের অকালবার্ধক্য প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। আমাদের দেহে বয়স নেমে আসার সবচেয়ে প্রধান কারণ হচ্ছে ফ্রিরেডিকেল। যা আমাদের দেহের নানারকম বিপাকীয় কাজের ফলে উৎপন্ন হয় । অশ্বগন্ধার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য থাকায় এই ফ্রিরেডিকেলস্  বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে। এর ফলে ত্বক কুচকে যাওয়া ,ত্বক বুড়িয়ে যাওয়া এবং অকাল বার্ধক্যের হাত থেকে আমাদের রক্ষা করে । তাহলে ত্বক ভালো রাখতে চাইলে আপনি নিয়মিত অশ্বগন্ধা সেবন করতে পারেন।

 

 

ক্ষতস্থান নিরাময় করে:

আয়ুর্বেদ শাস্ত্র মতে ক্ষত নিরাময়ের অশ্বগন্ধা একটি চমৎকার উপাদান।ক্ষতস্থানে অশ্বগন্ধার প্রলেপ লাগালে ক্ষতস্থান দ্রুত নিরাময় হয় এবং এটি আমাদের দেহের সংক্রমণের বিরুদ্ধে দারুণভাবে কাজ করে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এছাড়াও যারা নিয়মিত অশ্বগন্ধা সেবন করেন তাদের ক্ষতস্থান দ্রুত নিরাময় হয় এবং দেহের মধ্যে ইমুনিটি ক্ষমতা বৃদ্ধি পায় ।

 

চুলের জন্য উপকারী :

অশ্বগন্ধার এন্টিঅক্সিডেন্ট বৈশিষ্ট্য থাকায় এটি একটি আদর্শ কেসটনিক  হিসেবে কাজ করে । এটি চুলের গোড়ায় পুষ্টি যোগায় ও চুল শক্ত করে এবং চুল পড়া কমাতে দারুন ভাবে সাহায্য করে । আপনার যদি চুলের কোন সমস্যা থাকে তাহলে আপনি অশ্বগন্ধা সেবন করতে পারেন ।

 

মহিলাদের জন্য উপকারী :

সমীক্ষায় জানা যায় যে হরমোনের সমতা আনতে এবং মহিলাদের মানসিক চাপ কমানোর জন্য অশ্বগন্ধা খুবই কার্যকরী । মহিলারা যদি নিয়মিত অশ্বগন্ধা সেবন করেন তাহলে শরীর থেকে টক্সিন বের হতে শুরু করে। এর ফলে দেহের কার্যকলাপ আরো ভালো মত হয় এবং  রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি হয় । এছাড়া অশ্বগন্ধা মহিলাদের যৌন ইচ্ছা বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে থাকে।

 

অশ্বগন্ধা সেবন করার নিয়ম  :

প্রথমেই বলি আপনার আয়ুর্বেদ চিকিৎসক আপনাকে যেভাবে ডোস সেবন করতে বলবে  তা অনুসরণ করা প্রয়োজন। তবে অশ্বগন্ধার সাধারণ ডোস হল এক কাপ চা বা দুধের সঙ্গে এক থেকে দু চা-চামচ অশ্বগন্ধা পাউডার মিশিয়ে গ্রহণ করতে পারেন । অথবা দিনে দুবার অশ্বগন্ধা ক্যাপসুল সেবন করতে পারেন। এছাড়া অশ্বগন্ধার মূল দুধ বা মধুর সঙ্গে মিশিয়ে টনিক হিসেবে গ্রহণ করতে পারেন। আর ক্ষতস্থানে অশ্বগন্ধার পাতা পেস্ট করে লাগালে ক্ষত দ্রুত নিরাময় হয়। অশ্বগন্ধার প্রচুর উপকারিতা আছে তবে কিছু বিষয়ে আমাদের সচেতন হওয়া প্রয়োজন । যেমন গর্ভবতী মহিলাদের ক্ষেত্রে এটির ব্যবহার নিরাপদ নয় । তাই এটি একদম করবেন না । দীর্ঘদিন অশ্বগন্ধা সেবন করলে গ্যাস্ট্রিক আলসার ডায়রিয়া ও বমি বমি ভাব দেখা দিতে পারে । অশ্বগন্ধা সেবন করার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন