ভিটামিন সি এর উপকারিতা
শরীর সুস্থ রাখার জন্য যেসব পুষ্টিকর উপাদান গুলো প্রয়োজন সেগুলোর মধ্যে ভিটামিন সি'র বিশেষ ভূমিকা রয়েছে। এককথায় সুস্থ ও সুন্দরভাবে বেঁচে থাকতে চাইলে ভিটামিন সি'র গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। ভিটামিন-সি এসকরবিক এসিড মানুষ সহ বিভিন্ন প্রাণী ও উদ্ভিদের জন্য একটি প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান। ভিটামিন সি'র অভাবে শারীরিক দুর্বলতা, স্কার্ভি, ওজন কমে যাওয়া, এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যেতে পারে। এছাড়াও ভিটামিন সি'র অনেক উপকারিতা রয়েছে। যা আমাদের সবার জন্য খুব দরকার । তাই আজকের এই লেখাতে আমরা জানবো ভিটামিন সি এর উপকারিতা গুলো কি কি? কোন কোন খাবারে ভিটামিন-সি প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায় । এই সবকিছু জানতে লেখাটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন ।
শরীরের শক্তি যোগায়:
ভিটামিন সি'র প্রধান উপকারীতা হলো দেহের শক্তি
বাড়ানো। শরীরের ক্লান্তি দূর করতে ও শক্তি বৃদ্ধি করতে ভিটামিন-সি অনেক কার্যকরী অবদান
রাখে । যারা একটু বেশি পরিশ্রম করেন । রোদে,
বৃষ্টিতে ভিজে কাজ করতে হয় এবং অতিরিক্ত জার্নি করতে হয় তাদের শরীরের শক্তি ধীরে
ধীরে কমে যায় এবং ক্লান্তি চলে আসে। তাদের নিয়মিত ভিটামিন সি জাতীয় খাবার গুলো খাওয়া
উচিত। এতে যথেষ্ট উপকার পাবেন।
মন ভালো রাখে :
যাদের শরীরে অতিরিক্ত ভিটামিন সি এর অভাব দেখা দেয়।তাদের
যেকোনো কাজেই বিরক্তি চলে আসে। এর অভাবে মেজাজ খিটখিটে হয়ে যায় । কাজ করতে বসলে কাজে
মন বসে না। শরীরে অসহ্য লাগে ও বিভিন্ন ধরনের বিরক্তি অনুভব হয়। ভিটামিন সি আমাদের
মেজাজ ভালো রাখতে ও বিরক্তি ভাব দূর করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই আমাদের
নিয়মিত ভিটামিন সি জাতীয় খাবার গুলো খাওয়া উচিত।
ওজন কমায়:
ভিটামিন-সি ওজন কমাতে সাহায্য করে। ভিটামিন সি জাতীয়
খাবার গুলো রয়েছে যেমন কমলা, পেয়ারা, লেবু, আমলকি ইত্যাদি । এগুলো নিয়মিত পর্যাপ্ত
পরিমাণে খেলে ওজন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকে। পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি গ্রহণ করলে
শরীর থেকে ২৫ শতাংশ থেকে ৩০ শতাংশ চর্বি কমানো সম্ভব।
দাঁত সুস্থ রাখে:
আমরা অনেকেই বিভিন্ন কারণে দাঁতের সমস্যায় ভুগি।
এই সমস্যা থেকে কিছুটা বাঁচতে চাইলে ভিটামিন সি রয়েছে যেসব খাবারে। সেগুলো খেতে পারেন।
দাঁতের ব্যথা অনেক কারনেই হতে পারে। তবে ভিটামিন সি'র অভাবে দাঁতের মাড়িতে অনেক সমস্যা
হয় । তাই অবশ্যই ভিটামিন সি জাতীয় খাবার গুলোকে গুরুত্ব দিন এবং নিয়মিত খাওয়ার
চেষ্টা করুন ।
চুল ত্বক ভালো রাখে:
চুল
ও ত্বক শুষ্ক হয়ে যায় । ভিটামিন সি'র অভাবে। যদি চুলকে আরো সুন্দর করতে চান। চুলের
গোড়া শক্ত ও মজবুত করতে চান এবং ত্বকের স্বাস্থ্য ভাল রাখতে চান তাহলে নিয়মিত ভিটামিন
সি জাতীয় খাবার গুলো খাওয়ার চেষ্টা করুন। কারণ ভিটামিন সি'র একটি প্রয়োজনীয় ও কার্যকরী
উপকারিতা হচ্ছে চুল ও ত্বকের স্বাস্থ্য ঠিক রাখা।
পেশীর ব্যথা দূর করে:
যাদের জয়েন্ট বা পেশীতে ব্যথা সমস্যা হয় । তাদের
নিয়মিত ভিটামিন সি জাতীয় খাবার গুলো খাওয়া উচিত । কারণ এই ভিটামিনের অভাবে শরীরের
জয়েন্টে ও পেশিতে সমস্যা হয় । কমলালেবু,
কাঁচামরিচ, আমলকি ও লেবুতে যথেষ্ট পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়:
মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় ভিটামিন সি
জাতীয় খাবার। ভিটামিন-সি অন্যান্য উপাদানের মতো অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। দেহে
যতটুক ভিটামিন-সি দরকার তা যদি পর্যাপ্ত পরিমাণে থাকে। তাহলে দেহের অনেক উপকারের পাশাপাশি
শরীরের গঠন বৃদ্ধি করে এবং অনেক ধরনের ছোটখাট রোগ থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া যায়। তাই
আমাদের অবশ্যই ভিটামিন সি জাতীয় খাবার গুলো খাওয়া উচিত। বিশেষ করে যারা বৃদ্ধ ও বাড়তি
বয়সে ছেলে মেয়ে এবং যারা অতিরিক্ত পরিশ্রম করে।
ভিটামিন সি জাতীয় খাবার
যায় সবার কথা চিন্তা করে এমন কিছু ভিটামিন সি জাতীয় খাবারের উৎস
সম্পর্কে আলোচনা করা হবে যা সকলেই খুব সহজেই চিনতে পারবেন, সংগ্রহ করতে পারবেন এবং
গ্রহণ করতে পারবেন।
কমলা: ভিটামিন
সি এর উৎস গুলির মধ্যে প্রধান খাবার হচ্ছে কমলালেবু । এতে বিটা ক্যারোটিন ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
রয়েছে এবং এর রসে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি ও ক্যালসিয়াম আছে। যাদের অতিরিক্ত পরিমাণে
ভিটামিন সি দরকার তারা কমলালেবু খেতে পারেন।
আঙ্গুর: আঙ্গুর এর পুষ্টিগুণ অনেক এবং অনেক পুষ্টি উপাদানের পাশাপাশি পর্যাপ্ত পরিমাণে ভিটামিন সি পাওয়া যায়। এছাড়াও এতে ফসফরাস, আয়রন ,পটাসিয়াম থিয়ামিন ইত্যাদি রয়েছে।
কাঁচামরিচ:
কাঁচামরিচে রয়েছে যথেষ্ট পরিমাণে ভিটামিন সি । এছাড়াও এতে আছে ডায়েটারি ফাইবার
,সোডিয়াম ,নিয়াসিন, ক্যালসিয়াম ,ফসফরাস ,পটাশিয়াম ইত্যাদি। যারা ঝাল খেতে পছন্দ
করেন তাদের কাছে ভিটামিন সি'র একটি ভালো উৎস হলো কাঁচামরিচ।
আনারস:
আনারস পুষ্টির একটি বড় উৎস। আনারসের রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। এটি যেহেতু
সব সময় পাওয়া যায় না। তাই যখনই পাওয়া যায় তখনই খাওয়ার চেষ্টা করুন। এতে রয়েছে
ভিটামিন সি ভিটামিন, ভিটামিন এ, ক্যালসিয়াম ,পটাশিয়াম ,ফসফরাস নানান পুষ্টিকর উপাদান।
শাকসবজি:প্রায়
প্রতিটি শাকসবজিতে নানান রকমের ভিটামিন পাওয়া যায়। লালশাক, পালংশাক, গাজর, মুলা এগুলোতে
ভিটামিন সি'র পাশাপাশি আরো অন্যান্য উপাদান রয়েছে। ভিটামিন সি'র ঘাটতি দেখা দিলে বেশি
পরিমাণে সবুজ শাকসবজি খেতে পারেন।
লেবু:
লেবুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি। ভিটামিন সি দেহে রোগ প্রতিরোধকারী কোষগুলোর
কার্যক্ষমতা বাড়িয়ে দেয় । একটি মাঝারি আকৃতির লেবু থেকে যে পরিমাণে ভিটামিন সি পাওয়া
যায় তা একজন মানুষের দৈনিক চাহিদা পূরণের জন্য যথেষ্ট। এছাড়া পেয়ারা ,ব্রকলি, স্ট্রবেরিতে
প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি পাওয়া যায়। তাহলে বুঝতেই পারছেন ভিটামিন সি জাতীয় খাবার
খাওয়া কতটা প্রয়োজনীয় এবং ভিটামিন সি এর উৎস কোনগুলি ।