মেথি খেলে কি হয়? মেথি খাওয়ার উপকারিতা
মেথি
কি নিয়মে খেলে
উপকার পাবেন সেই
বিষয়টি অনেকের না
জেনে যে কোন
নিয়মে মেথি খাচ্ছেন।
আর তার ফলে
উপকার তো নয়
বরং ক্ষতির সম্মুখীন
হচ্ছেন। কারণ মেথি
এমন এক ধরনের
ঔষধ যা খেলে
অবশ্যই আপনার দেহে
উপকার হবে। তবে
ভুল ভাবে গেলে
উপকারের বদলে ক্ষতি
হবে। তাই আজকের
লেখাতে আমি তিনটি
বিষয় নিয়ে ধারাবাহিকভাবে
আপনাদের বলব। প্রথম
বিষয়টি হলো মেথি
খেলে দেহে কি
ঘটে? দ্বিতীয় হচ্ছে
আপনি মেথি খাবেন
কি নিয়মে? আর
তিন নম্বর মেথি ভুল ভাবে
খেলে কি ক্ষতি
হয়? এবং সেইসঙ্গে
কোন ধরনের মানুষ
কখনই মেথি খাবেন
না। আশাকরি এই
লেখাটি শিশু থেকে
বৃদ্ধ পর্যন্ত যেকোনো
মানুষের কাজে লাগবে।
মেথি খাওয়ার উপকারিতা
অনেক
পুরুষই
আছেন
যারা গোপন দূর্বলতায়
ভুগছেন। এই গোপন
দুর্বলতা বা পুরুষের
হার্নিয়া ,বন্ধ্যাত্ব ইত্যাদি
সমস্যা আছে তারা
মেথি খেয়ে দূর
করতে পারেন। আর
কিছু লাগবে না।
শুধুমাত্র পুরুষ নয়
নারীদেরও গোপন দুর্বলতা
বা অক্ষমতা রয়েছে
। এই সকল
নারী পুরুষ নিঃসন্দেহে
উপকার পাবেন। কি
নিয়মে খাবেন তা
কিন্তু অবশ্যই আপনাদেরকে
ভালোভাবে জেনে নিতে
হবে। এই বিষয়টি
লেখার অন্য আরেকটি
পর্যায়ে গিয়ে বলছি।
তার আগে বলি
যে মেথি খেলে
আর কি কি
উপকার হয়। বেশিরভাগ
পুরুষ ৩০ থেকে
৩৫ বছরে তাদের
হাটের গোলযোগ বাধিয়ে ফেলছেন
আজকাল। হয়তো আপনার
হাই ব্লাড প্রেসার
আবার কারো কারো
ক্ষেত্রে লিপিড প্রোফাইল
যেমন কোলেস্টরেল অর্থাৎ
এলডিএল বেড়ে যায়।
আবার কারো কারো
ক্ষেত্রে টিজি অর্থাৎ
ট্রাই গ্লিসারাইড বেড়ে
যায়। এই ধরনের
বিষয় যদি আপনার
সঙ্গে ঘটে তাহলে
অবশ্যই আপনি মেথি
খাবেন। মেথি নিঃসন্দেহে
আপনাকে এই ধরনের
রোগ গুলো থেকে
বাঁচাবে। যাদের হার্টের
সমস্যা রয়েছে তারা
মেথি খাবেন।
মেথি খেলে আপনার হার্ট সুরক্ষিত থাকবে। মেথিতে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা হার্টের ব্লকেজকে পর্যন্ত দূর করতে পারে। ব্লকেজ খুলে দিতে পারে। নিয়মিত খেতে হবে। অনেকে আছে যে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বেড়ে গেছে। অর্থাৎ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত আমাদের দেহের গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে মেথি এবং এর অ্যামাইনো এসিড অগ্নাশয় ইনসুলিনের ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয়। আমরা সবাই জানি যে ইনসুলিন ক্ষরণ যখন বারে তখনই আপনার ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে আসে আর। এই কাজটি মেথি খুব ভালোভাবে করতে পারে। যদি কোন মেয়ে তার শারীরিক অক্ষমতার জন্য মেথি সেবন করেন তাহলে তিনি একই সঙ্গে আরও কিছু উপকার পাবেন। তার শারীরিক শক্তি এবং তার শারীরিক সৌন্দর্য বেড়ে যাবে।
চুলের সৌন্দর্য ত্বকের সৌন্দর্য অন্য অনেকের চেয়ে বহুগুণ বাড়বে। একই বিষয় কিন্তু পুরুষদের ক্ষেত্রেও খাটছে পুরুষেরাও মেথি সেবন করলে শারীরিক এবং মানসিক প্রশান্তির পাশাপাশি নিজের দেহের সৌন্দর্য বাড়াতে পারবেন। যাদের 12 মাস ঠান্ডা কফ কাশির সমস্যা থাকে, গলা খুসখুস করে, টনসিলের সমস্যা থাকে বা যখন তখন গায়ে অল্প জ্বর থাকে, তারা অবশ্যই মেথি সেবন করবেন। মেথি সেবন করলে এই সকল সমস্যা দূর হয়ে যাবে।
যাদের হজমের সমস্যা রয়েছে তারা মেথি খাওয়ার কথা কখনোই ভুলে যাবেন না। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা দেহের বিষাক্ত উপাদান গুলোকে দেহ থেকে বের করে দেয়। তাই আপনি যখন করবেন তখন আপনার পেটের সমস্যা দূর হওয়ার পাশাপাশি কোষ্ঠকাঠিন্য কনস্টিপেশনের সমস্যা একেবারে বিদায় নেবে। একই সঙ্গে রক্ত পরিশুদ্ধ হবে। আর এই কারনেই আপনার দেহের ভিতর এলার্জি কিন্তু কমতে থাকবে। নিয়মিত সেবন করলে কোল্ড এলার্জি থেকে শুরু করে ত্বকের ওপরে র ্যাশ চুলকানি আর জীবনেও খুঁজে পাবেন না।
মেথিতে এমন কিছু
উপাদান রয়েছে যা
আপনার দেহের শারীরিক
শক্তি ক্ষমতাকে বহুগুণ
বাড়িয়ে দেয়। যাদের
শারীরিক শক্তি কম,
দুর্বল, শারীরিক অক্ষমতা
কমজোরি পেশির দুর্বলতা
ইত্যাদি সমস্যা রয়েছে
তারা নিঃসন্দেহে এটি
সেবন করবেন। মেথি
এই সকল সমস্যা
কি দূর করবে।
এতে রয়েছে প্রচুর
পরিমাণে আয়রন ,পটাসিয়াম,
প্রোটিন ,ফাইবার ভিটামিন
সি ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে।
এই সকল উপাদান
আপনার দেহের জন্য
অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। তাই
মেথি শুধুমাত্র ঔষধ
নয় এটা হচ্ছে
মহাঔষধ। মেথি আপনার
দীর্ঘস্থায়ী বার্ধক্যকে ঠেলে
সরিয়ে দিয়ে। তারুণ্যকে
ফিরিয়ে নিয়ে আসবে।
যারা অল্প বয়সে
বুড়ো হওয়ার দিকে
চলে গেছেন তারা
আজ থেকে মেথি
সেবন করুন। মেথি
আপনাকে সতেজ ও
প্রাণবন্ত করে তুলবে।
আপনার ঘুম ভালো
করবে।
যারা খুব বেশি স্থূলতা রোগের সমস্যায় ভুগছেন। অর্থাৎ ওবিসিটি আপনার রোগে পরিণত হয়েছে তারা কিন্তু মেথি সেবন করলে খুব ভালো উপকার পাবেন। মাত্র কিছুদিন সেবন করুন দেখবেন এর থেকে ভালো ঔষধ আপনি আর কখনো সেবন করেননি আগে। মেথি আপনার এই সকল উপকার করবে। কিন্তু তার জন্য আপনাকে মেথিটা অবশ্যই সঠিক নিয়মে সেবন করতে হবে।
মেথি খাওয়ার নিয়ম
মেথি সেবন আসলে এক এক রোগে একেক ভাবে করতে হয়। আমি কয়েকটি উপায় বলছি। আপনার দেহের রোগের সঙ্গে মিলিয়ে দেখুন। যে আপনি কোন নিয়মে সেবন করবেন। যারা ডায়বেটিস হার্টের গোলযোগ এলডিএল নিয়ন্ত্রণ অর্থাৎ আপনার দেহের খারাপ কোলেস্টরেল বের করে দেওয়ার নিয়ন্ত্রণ করা একই সঙ্গে ট্রাই গ্লিসারিন নিয়ন্ত্রণ করা এবং সেইসঙ্গে পেটের গোলযোগকে নিয়ন্ত্রন করার জন্য মেথি সেবন করবেন। তারা ২ চা চামচ পরিমাণ মেথি নেবেন। সেটা এক গ্লাস গরম পানিতে। গ্লাসের পানিটা কোনোভাবে প্লাস্টিকের মগ রাখবেন না এটা কাচের অথবা স্টিলের মগে রাখার চেষ্টা করবেন। এই ধরনের একটি পাত্রে আড়াইশো মিলি পানি নিয়ে তাতে ২ চা চামচ পরিমাণ মেথি দানা দিয়ে দিন। মেথিটা অবশ্যই আগে থেকে ভালো করে ধুয়ে শুকিয়ে কৌটায় রেখে দেবেন।
দোকান থেকে কিনে আনা মেথি সঙ্গে সঙ্গে কখনো সেবন করবেন না। প্রচুর পরিমাণে ধুলোবালি থাকে এটা সেবন করলে আপনার পেটের রোগ উল্টো বেড়ে যাবে এবং দেহের রোগ জীবাণু প্রবেশ করবে। কাজেই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন মেথি গ্লাসের পানিতে সারারাত ভিজিয়ে রেখে সকালবেলায় শুধুমাত্র পানিটা ছেঁকে আপনি পান করবেন। এভাবে পান করে যান যে কয়টি রোগের কথা বললাম এই রোগগুলো আপনার থাকবে না।
যারা ঠান্ডা, কফ, কাশি ইত্যাদি সমস্যার জন্য মেথি সেবন করতে চান। কোল্ড এলার্জি ,ত্বকের ওপরে এলার্জি তারা অন্যভাবে মেথি সেবন করবেন। সে ক্ষেত্রে আপনি মেথিটা হালকা করে ভেজে নেবেন। একদম হালকা ভাবে শুকনো করে ভেজে নেবেন ধুয়ে শুকানোর পরে। রোদে শুকিয়ে মেথিটা হালকা করে ভেজে। সেই মেথিটা আপনাকে গুড়ো করতে হবে। একদম হালকা ভাবে ভাজা মেথি গুড়ো করে তার থেকে মাত্র এক চা চামচ পরিমাণ একজন পূর্ণবয়স্ক ব্যক্তির সকালবেলায় এক গ্লাস হালকা গরম পানিতে গুলিয়ে তার সঙ্গে এক চামচ লেবুর রস এবং এক চামচ মধু মিশিয়ে সেবন করবেন। এই ভাবে সেবন করে যান। আপনার ঠান্ডা কফ কাশির সমস্যা সারা জীবনের জন্য বিদায় নেবে। দেহের অভ্যন্তরীণ এবং বাহ্যিক দুই ধরনের এলার্জি থেকে মুক্তি পাবেন।
যে সকল নারী বা পুরুষ নিজেদের গোপন দুর্বলতা অক্ষমতা কমজোরি ইত্যাদি দূর করার জন্য মেথি সেবন করবেন। তারা হালকা ভাজা মেথি পূর্বে যে নিয়মে বলেছি সেই নিয়মনীতি হালকা করে ভেজে গুঁড়া করে নেবেন এবং এক চামচ মেথি এক গ্লাস হালকা গরম পানিতে মিশিয়ে তার সঙ্গে শুধুমাত্র দুই চামচ মধু মিশিয়ে সেবন করবেন। মধু এইভাবে মেথি দিয়ে সেবন করলে দেহের সকল দুর্বলতা, অক্ষমতা দূর হয়ে যায়যাবে। এবং একই সঙ্গে পুরুষের টেস্টোস্টেরন হরমোন ও নারীর প্রোজেস্টেরোন এবং ইস্ট্রোজেন হরমোন বহুগুণে বেড়ে যায়। কাজে বন্ধ্যাত্ব অনায়াসে দূর হয়ে যায়। একই সঙ্গে যেসব নারী ঋতুচক্র এলোমেলো ভাবে চলতে থাকে। ঋতুচক্র ঠিকভাবে না চলে বা কখনো কখনো অতি স্রাব বা অল্প স্রাবের সমস্যায় ভোগেন। সারা জীবন যাদের সাদাস্রাব লেগেই থাকে কোন ভাবে ভালো হচ্ছে না। তারা এই নিয়মে মেথি সেবন করে দেখুন। এই সকল সমস্যা থেকে রেহাই পাবেন এবং এই সমস্যাগুলো একবার দূর হয়ে গেলে জীবনে আপনার কাছে আর ফিরবে না।
যে সকল চল্লিশোর্ধ মানুষ বাতের ব্যথায় অস্থির পেশির দুর্বলতা সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করতে পারেন না। এই তীব্র ব্যথা কমাতে এটি আপনি সেবন করুন। মেথি ভিজিয়ে রেখে সেবন করুন। শুধুমাত্র পানিটা সেবন করতে পারেন এবং মেথি চিবিয়ে খেয়ে আপনি একইসঙ্গে পানিটা পান করতে পারেন। যাদের প্রচুর পরিমাণে কোষ্ঠকাঠিন্য রয়েছে তারা কিন্তু এই নিয়মে সেবন করবেন। প্রথমে ভেজানো মেথিটা ভালো করে চিবিয়ে খেয়ে তার পরে মেথি ভেজানো পানিটা সকালবেলা পান করবেন। মেথি কিডনির কার্যক্ষমতা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয় বিশেষ করে ক্যালসিয়াম অক্সিলেট যে কিডনির পাথরের জন্য দায়ী সে বিষয়টি মেথি খেলে দূর হয়ে যায়। কাজেই কিডনি পরিষ্কার করবে ও কিডনির পাথর দূর করবে। মেথি যদি ভুল ভাবে খান বা কেউ যদি কাঁচা মেথি মুখে দিয়ে চিবিয়ে খেয়ে নেন। কাঁচা মেথি আপনিতে ভিজিয়ে রেখে খেলেন তাহলে কিন্তু উপকার হবে না। অনেকেই আছেন গরম পানিতে না দিয়ে ঠান্ডা পানিতে মেথি ভিজিয়ে খাচ্ছেন এতে কোন উপকার পাবেন না। মেথি অবশ্যই আপনাকে সঠিক নিয়মে খেতে হবে। তাহলে যেসকল উপকারে কথা বললাম সে সব কিছু আপনি পাবেন।