সকলেরই ইচ্ছা থাকে একটা নিজের বাড়ি থাক। কিন্তু সবার তো আর সাধ্য থাকে না বাড়ি করার। এর জন্যই রয়েছে সিটি ব্যাংক হোম লোন। সিটি ব্যাংক হোম লোন আপনার স্বপ্নের বাড়িটিকে বাস্তবে পরিণত করুন। সিটি ব্যাংক হোম লোন শুধু বাড়ি বানানোর জন্যই নয় বরং রেডি অপর্টমেন্ট রেনোভেশন এবং সেমি পাকা বাড়ির জন্য আপনি চাইলে লোন নিতে পারবেন এবং সিটি ব্যাংকের হোম লোন চাই আপনি খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে নিতে পারবেন। আজকের লেখাতে আমি আপনাদেরকে জানাবো সিটি ব্যাংকের হোম লোন সম্পর্কে সম্পূর্ণ তথ্য।
আপনি কোন কোন ক্ষেত্রে সিটি ব্যাংক থেকে হোম লোন নিতে পারবেন
প্রথমত হচ্ছে আপনি যদি নতুন বাড়ি করার কথা চিন্তা করেন তাহলে আপনি নতুন বাড়ি করার ক্ষেত্রে আপনি হোম লোন নিতে পারবেন। সেক্ষেত্রে আপনি পাঁচ লাখ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২ কোটি টাকা পর্যন্ত হোম লোন পাবেন। আপনি দেশের যেকোনো স্থানে বাড়ি করেন না কেন আপনি সেখান থেকে চাইলে সিটি ব্যাংকের হোম লোনের জন্য আবেদন করতে পারবেন। দ্বিতীয়ত হচ্ছে নতুন ফ্ল্যাট ক্রয় করা ক্ষেত্রে আপনি যদি চিন্তা করেন আপনি নতুন কোনো অ্যাপার্টমেন্ট বা কোন ফ্ল্যাট ক্রয় করবেন সেখানে আপনি চাইলে আপনার ফ্লাইট ভ্যালুসিটি ৭০℅ পর্যন্ত লোন নিতে পারবেন। যেটার পরিমাণ হবে সর্বোচ্চ ২ কোটি টাকা পর্যন্ত। তৃতীয়ত আপনি যদি সেমি পাকা বাড়ি করতে চান সেক্ষেত্রে আপনি চাইলে সিটি ব্যাংক থেকে হোম লোন নিতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ৫০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হোম লোন পাবেন এবং এটিও দেশের যেকোন স্থানে আপনি তৈরি করেন না কেন আপনি সিটি ব্যাংকের হোম লোনের জন্য আবেদন করতে পারবেন। সর্বশেষ হচ্ছে হাউজ রোনোভেশন করার ক্ষেত্রে আপনি চাইলে সিটি ব্যাংক থেকে হোম লোন নিতে পারেন। সে ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ আপনি ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত হোম লোন পাবেন।
সিটি ব্যাংক হোম লোন |
সিটি ব্যাংকের হোম লোনের জন্য কারা কারা আবেদন করতে পারবে
প্রথমত হচ্ছে বেতনভুক্ত ব্যক্তি। বেতনভুক্ত ব্যক্তি সরকারি চাকরিজীবী হতে পারে অথবা বেসরকারি চাকরিজীবী হতে পারে। দ্বিতীয়ত হচ্ছে পেশাদার। পেশাদার যেমন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার বা আরকিটেক এধরনের প্রফেশনাল যারা আছেন তারাও চাইলে সিটি ব্যাংকের হোম লোনের জন্য আবেদন করতে পারবেন। তৃতীয়ত হচ্ছে বাড়িওয়ালার বা ল্যান্ড লর্ড। যাদেরকে বলে থাকি আমরা আপনার যদি কোন বাড়ি থাকে আপনি যদি প্রতিমাসে সে বাড়ি থেকে ভাড়া পান তাহলে আপনি লোকের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এবং চতুর্থ হচ্ছে ব্যবসায়ী। আপনি যদি কোন বিজনেস পার্সোনা হন। হতে পারে সেটা আপনার প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি অথবা লিমিটেড কোম্পানি অথবা পার্টনারশিপ বিজনেস। তাহলে আপনি এই লোনের জন্য আবেদন করতে পারবেন এবং বিশেষ কিছু ক্ষেত্রে চাইলে প্রবাসীরাই লোনের জন্য আবেদন করতে পারবেন। যেসব প্রবাসী ভাইয়েরা দেশের বাইরে থাকেন। তারা চাইলেই সিটি ব্যাংকের এই হোম লোনের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
যদি সিটি ব্যাংকে গিয়ে হোম লোনের জন্য আবেদন করেন তাহলে আপনি সর্বোচ্চ কত পরিমান লোন নিতে পারবেন এবং ইন্টারেস্ট রেট কত হবে আর কতদিন সর্বোচ্চ আপনি মেয়াদ পাবেন?
সিটি ব্যাংক থেকে যদি আপনি লোন নেন আপনি লোন এর সর্বনিম্ন হচ্ছে আপনি পাঁচ লাখ টাকা লোন নিতে পারবেন এবং সর্বোচ্চ হয়েছে ২ কোটি টাকা পর্যন্ত আপনি হোম লোন পাবেন। মেয়াদ হবে এক থেকে পঁচিশ বছরের জন্য। ইন্টারেস্টেড পাবেন আপনি ৭.৯ শতাংশ। প্রসেসিং ফি হচ্ছে সর্বশেষ বাংলাদেশ ব্যাংক যে সিজেন চার্জ আপডেট করেছে সে আপডেট অনুযায়ী আপনি যদি পঞ্চাশ লাখ পর্যন্ত লোন নেন সেক্ষেত্রে আপনার প্রসেসিং ফি হবে পয়েন্ট ০.৫ শতাংশ অথবা 15 হাজার টাকা সর্বোচ্চ। আর আপনি যদি 50 লাখের উপরে লোক নেন সেক্ষেত্রে প্রসেসিং ফি হবে ০.৬ পার্সেন্ট অথবা সর্বোচ্চ ২০,০০০ টাকা পর্যন্ত। বাকি যে চার্জগুলো আছে যেমন সিআইবিসি ফি, ভ্যালুয়েশন ফি , লিগ্যাল ফি অথবা সিপিডি চার্জ এগুলো হবে বাংলাদেশ ব্যাংকের সার্কুলার অনুযায়ী এট অ্যাকচুয়্যাল মানে যে খরচটা হবে হবে শুধুমাত্র ব্যাংক আপনার কাছ থেকে খরচ নিবে তার বেশি কোন ধরনের খরচ আদায় করা যাবে না। এছাড়া বাড়তি আর কোন ধরনের চার্জ নিবে না।
সিটি ব্যাংক থেকে লোন নিতে আপনার কি কি যোগ্যতা লাগবে
আপনার বয়স হতে হবে অবশ্যই ২২ থেকে ৬৫ বছরের মধ্যে। দ্বিতীয়তো আপনার জাতীয়তা অবশ্যই বাংলাদেশী হতে হবে তার মানে আপনার অবশ্যই ন্যাশনাল আইডি কার্ড থাকতে হবে। মাসিকে আপনি যদি বেসরকারি কোন চাকরি করেন সেক্ষেত্রে লোনের জন্য আবেদন করতে আপনার মিনিমাম সেলারি হতে হবে ৫০ হাজার টাকা আর আপনি সরকারী কোন চাকরি করেন সেক্ষেত্রে মিনিমাম আপনার সেলারি হবে ৩০ হাজার টাকা। তাহলে আপনি সিটি ব্যাংকের হোম লোনের জন্য আবেদন করতে পারবেন এবং আপনার এক্সপেরিয়েন্স হতে হবে। আপনি যদি বেতনভুক্ত ব্যক্তি হন তাহলে তিন বছরে এক্সপেরিয়েন্স থাকতে হবে। যদি আপনি কোন পেশাদার হন। কোন ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হন সেক্ষেত্রে আপনাকে ছয় মাসের প্র্যাকটিস এর এক্সপেরিয়েন্স থাকতে হবে। ব্যবসায়ী হলে আপনার ব্যাবসায়ী বয়স ৩ বছর হতে হবে। আর যদি আপনি বাড়িওয়ালা হন বা আপনার কোন বাড়ি থাকে। সেক্ষেত্রে আপনার কোনো এক্সপিরিয়েন্স লাগবেনা। এই যোগ্যতাগুলো থাকলেই আপনি সিটি ব্যাংকের লোনের জন্য আবেদন করতে পারবেন।
কিছু স্যাম্পল ক্যালকুলেশন, যে আপনি কত টাকা লোন নিলে আপনার কিস্তি কত টাকা আসবে মাসিক। প্রথমে দেখাচ্ছি যদি আপনি ২০ লাখ টাকার লোন ২০ বছরের জন্য তাহলে আপনার EMI আসবে কত টাকা। লোন নিয়েছেন ২০ লক্ষ টাকা আপনার ইন্টারনেট হবে ৭.৯৯ শতাংশ। মেয়াদ হবে বিশ বছর। মোট কিস্তি হবে ২৪০টি এবং মাসিক কিস্তি আসবে আপনার ১৬,7১৬টাকা ৩৬ পয়সা। আর আপনি যদি ২৫ বছরের জন্য এক কোটি টাকা লোন নেন। সেক্ষেত্রে আপনার EMI কত আসবে আপনি লোন নিয়েছেন এক কোটি টাকা আপনার ইন্টারেস্ট রেট অফ ৭.৯৯℅ , মেয়াদ হবে ২৫ বছর মোট কিস্তি হবে ৩০০ টি এবং মাসিক কিস্তি আসবে ৭৭১১৫ টাকা ৩৯পয়সা । এছাড়া আপনার লোনের পরিমাণটা হয়তো ভিন্ন হতে পারে। আপনি হয়তো দুই কোটি টাকার লোন নিতে পারেন।
লোন নিতে আপনার কি কি ধরনের ডকুমেন্টস লাগবে
সবার জন্য যে কমন ডকুমেন্টস লাগবে মানে আপনি যেই প্রফেশনেরই হোন না কেন আপনাকে এই কমন ডকুমেন্টগুলো লাগবে। সেটা হচ্ছে আপনার তিন কপি ছবি লাগবে, এনআইডি কার্ডের কপি লাগবে,ভিজিটিং কার্ড অথবা অফিস আইডি কার্ডের কপি লাগবে, আপনার ই-টিনের কপি লাগবে, ইউটিলিটি বিল এর প্রয়োজন হবে। দ্বিতীয়ত হচ্ছে আপনি যে হোম লোনের জন্য এপ্লাই করবেন আপনারা একজন কো-এপ্লিকেন্টের থাকবে। সেটা হতে পারে আপনার spouse বা আপনার ফ্যামিলির কেউ হতে পারে। সে ক্ষেত্রে আপনি যে কো-এপ্লিকেন্ট থাকবে তার দুই কপি ছবি লাগবে এবং এনআইডি কার্ডের ছবি লাগবে। পাশাপাশি ব্যাংকের রিকোয়ারমেন্ট অনুযায়ী আরো কিছু ডকুমেন্টস প্রয়োজন হতে পারে। এগুলো হচ্ছে কমন ডকুমেন্টস এছাড়াও প্রত্যেকটা প্রফেশন অনুযায়ী আপনাকে আলাদা আলাদা কিছু ডকুমেন্ট দিতে হবে। যেমন হচ্ছে আপনি যদি বেতনভুক্ত ব্যক্তি হন তাহলে আপনার সেলারি সার্টিফিকেটের কপি লাগবে, পে স্লিপ এর কপি, এবং ছয় মাসের ব্যাংক স্টেটমেন্টটা লাগবে, যেখানে আপনার স্যালারিটা রিফ্লেক্ট করবে। আপনি যদি পেশাদার হন তাহলে আপনি পেশাদারী সার্টিফিকেট। যেমন আপনি যদি ডাক্তার হন সেক্ষেত্রে আপনার বিএমডিসি সার্টিফিকেট লাগবে। আপনি যে যে প্রফেশনের হোন না কেন সে প্রফেশন অনুযায়ী আপনাকে পেশাদারি যে সার্টিফিকেটটা আছে তার ফটকপি প্রয়োজন হবে। দ্বিতীয়ত লেটারহেড কুয়েডে আপনি যে আয়টা করেন সেটার ডিক্লারেশন দিবেন এবং আপনার এক বছরের ব্যাংক স্টেটমেন্ট লাগবে। তৃতীয়তঃ হচ্ছে ব্যবসায়ী। আপনি যদি বিজনেসম্যান হন সেক্ষেত্রে আপনার বিজনেসের লাস্ট তিন বছরের ট্রেড লাইসেন্স এর কপি লাগবে এবং আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান যদি পার্টনারশীপ কোম্পানী হয় সেখানে পার্টনারশিপ ডিড লাগবে, আর যদি লিমিটেড কোম্পানি হয় মোয়া কপি লাগবে। এক বছর ব্যাংক স্টেটমেন্ট লাগবে। আর কোম্পানি টিম অথবা বিল সার্টিফিকেটের কপি প্রয়োজন হবে। চতুর্থ আপনি যদি বাড়িওলা হন সেক্ষেত্রে বাড়ি ভাড়ার এগ্রিমেন্ট এর কপি লাগবে। আপনি কত টাকা মাসিক ভাড়ায় করেন সেটার একটা ডিক্লেয়ারেশন দিতে হবে। তৃতীয়ত হচ্ছে আপনার বাড়ির ওনার শিপ ডকুমেন্ট লাগবে এবং চতুর্থ আপনার এক বছর ব্যাংক স্টেটমেন্ট লাগবে।
আরও পড়ুন - ইসলামী ব্যাংক হোম লোন পদ্ধতি
প্রবাসীদের জন্য যা যা ডকুমেন্টস লাগবে
এর পাশাপাশি যারা প্রবাসী ভাইয়েরা আছেন দেশের বাইরে থাকেন তারাও চাইলে এই লোনের জন্য আবেদন করতে পারবেন। তবে সে ক্ষেত্রে ব্যাংকের রিকোয়ারমেন্ট অনুযায়ী ডকুমেন্টসগুলো প্রয়োজন হয় সেই ডকুমেন্টগুলো আপনাকে সাবমিট করতে হবে। সিটি ব্যাংকের হোম লোন সম্পর্কে আরো গুরুত্বপূর্ণ কিছু তথ্য আছে চলুন আমরা সেগুলো জেনে আসি। প্রথমত হচ্ছে আপনার লোন নেওয়ার পর আপনি চাইলে যেকোনো মুহূর্তে লোনটা চাইলে অ্যার্লিসেটেলমেন্ট করতে পারবেন। ধরুন আপনি দশ বছরের জন্য লোন নিয়েছেন আপনি ২ বছর যাওয়ার পর চাচ্ছেন আপনার সম্পূর্ণ টাকাটা আপনি একবারে পরিশোধ করে দিতে সেটাও সম্ভব। আপনি যদি আংশিক স্যাটেল করতে চান সেটাও সম্ভব। অ্যার্লিসেটেলমেন্ট ফি হবে এখন ০.৫ শতাংশ যেটা বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ সার্কুলার অনুযায়ী আপনি সিটি ব্যাংকের হোম লোনের জন্য চাইলে আপনার পরিবারের যে কোনো সদস্যকে সাথে নিয়ে জয়েন্টলি আবেদন করতে পারবেন এবং সবচেয়ে ইম্পরট্যান্ট এবং ইন্টারেস্টিং ফ্যাক্ট হচ্ছে আপনি যদি সকল ডকুমেন্ট ঠিক থাকে সেক্ষেত্রে আপনি পাঁচ থেকে সাত কর্মদিবসের মধ্যে আপনি এই লোনটি পাবেন।