কোয়ান্টাম কম্পিউটার কি ? কোয়ান্টাম কম্পিউটার কিভাবে কাজ করে ?

কোয়ান্টাম কম্পিউটার যাতে শুধুমাত্র আমাদের প্রতি দিনকার কাজে ব্যবহৃত ক্লাসিক্যাল কম্পিউটারের আপডেট ভার্সন ভাবা যাবে না। কোয়ান্টাম কম্পিউটার সম্পূর্ণ নতুন একটি প্রযুক্তি। মোমবাতির এবং লাইট বাল্ব দুইটির কাজই হচ্ছে আলো দেওয়া। কিন্তু একটি মোমবাতি কখনও একটি লাইট বাল্বের  মত আলো দিতে পারবে না। কারণ মোমবাতির সাপেক্ষে লাইট বাল্ব সম্পূর্ণ নতুন প্রযুক্তি। তেমনই ক্লাসিক্যাল কম্পিউটারের সাপেক্ষে কোয়ান্টাম কম্পিউটার সম্পূর্ণ একটি নতুন প্রযুক্তি। কোয়ান্টাম কম্পিউটারের উচ্চগতির কম্পিটিটিভ সক্ষমতার কারণে অনেক বড় বড় কোম্পানির প্রচুর টাকা বিনিয়োগ করছে। কিন্তু কি এমন বিশেষত্ব রয়েছে এই কোয়ান্টাম কম্পিউটারের

 

 

কোয়ান্টাম কম্পিউটার সম্পর্কে বুঝতে হলে আমাদেরকে অনেক ক্ষুদ্র পরিসরে যেতে হবে। একদম পরমাণুর সাব এটমিক পার্টিক্যাল যেমন ইলেকট্রন, প্রোটন কিংবা ফোটন পর্যায়ে। পরমাণুর ইলেকট্রন একই সময়ে দুটি ভিন্ন স্টেজে থাকতে পারে। অর্থাৎ একই সাথে সকল স্থানে উপস্থিতি। আমরা সাধারণভাবে ইলেকট্রন বিন্যাস করার সময় ইলেকট্রন কে কোন একটি নির্দিষ্ট কক্ষপথে ঘুরতে দেখেছি। প্রকৃত অর্থে বিষয়টি কিন্তু এমন নয়। ইলেকট্রন একইসাথে ওই কক্ষপথের সকল স্থানে উপস্থিত।অনেকটা এই চিত্রের মতো। যাকে বলা হয় সুপারপজিশন। কিন্তু যখনই আমরা ইলেকট্রনটি কোথায় আছে তা নির্দিষ্ট করে জানার চেষ্টা করব তখনই ইলেকট্রনের এই সুপারপজিশন অবস্থা ভঙ্গে পড়বে। ১৯৮০ সালে রিচার্ড ফাইনম্যান ভাবেন," সাব এটমিক পার্টিক্যালে এই সুপারপজিশন বৈশিষ্ট্য কেন আমরা আমাদের কমপ্লিটিং সিস্টেম ব্যবহার করছি না?"  তিনি প্রস্তাব করেন সাব এটমিক পার্টিক্যালে  সুপারপজিশন বৈশিষ্ট্য আমাদের কম্পিটিং সিস্টেমের গতি বহুগুণে বাড়িয়ে দিতে পারেন এবং সেটা কিভাবে ব্যবহার করা যেতে পারে তারও কিছু ধারণা দেন। সেখান থেকে কোয়ান্টাম কম্পিউটারের যাত্রা শুরু। 


কোয়ান্টাম কম্পিউটার,কোয়ান্টাম কম্পিউটার কি,কম্পিউটার,কোয়ান্টাম কম্পিউটিং,কোয়ান্টাম কম্পিউটার কি?,কোয়ান্টাম কম্পিউটার বাংলা,ভয়ংকর কোয়ান্টাম কম্পিউটার,কোয়ান্টাম কম্পিউটিং,ভয়ংকর কোয়ান্টাম কম্পিউটার,আসছে ভয়ংকর কোয়ান্টাম কম্পিউটার,কোয়ান্টাম,কোয়ান্টাম কম্পিউটারে,বাংলায় কোয়ান্টাম কম্পিউটিং,আসছে ভয়ংকর কোয়ান্টাম কম্পিউটার,কোয়ান্টাম কম্পিউটার কি ভাবে চলে ?,কোয়ান্টাম কম্পিউটার কিভাবে কাজ করে,কোয়ান্টাম কম্পিউটার কিভাবে কাজ করে?
কোয়ান্টাম কম্পিউটার

ক্লাসিক্যাল কম্পিউটার কাজ করে বাইনারি, জিরো  এবং ওয়ানের মাধ্যমে যাকে বলে বিট। ক্লাসিক্যাল কম্পিউটার যেকোনো তথ্য ‌ 0 এবং 1  কনভার্ট করে। কারণ ক্লাসিক্যাল কম্পিউটার কাজ করে ট্রানজিস্টরের মাধ্যমে এবং ট্রানজিস্টর যখন ওন থাকে তখন তা ওয়ান এবং  যখন তা অফ থাকে তখন তার জিরো। দঅন্যদিকে কোয়ান্টাম কম্পিউটার কাজ করে কোয়ান্টাম বিট বা কিউবিটের মাধ্যমে।বিট এবং কিউ বিটের  পার্থক্য হচ্ছে  বিট হয় 0 অথবা 1 হতে পারে। অন্যদিকে কিউবিট 0 অথবা 1 হতে পারে আবার একই সাথে 0 এবং 1 উভয়ই হতে পারে। যাকে বলা হচ্ছে সুপারপজিশন। একই সাথে একই সময়ে 0 এবং 1 কিভাবে সম্ভব?  হয় জিরো অথবা ওয়ান হতে হবে। বিষয়টা অদ্ভুত মনে হতে পারে কিন্তু বিষয়টি অদ্ভুত নয়। এখানে হচ্ছে কোয়ান্টাম ফিজিক্সের যাদু। 


দুটি উদাহরণ দিয়ে বিষয়টি বলার চেষ্টা করব। আমরা যখন টর্হ করি তখন হয় হেড আসবে নয়তো টেল আসবে।  এখন টর্স করার জন্য যখন পয়সাটি নিক্ষেপ করা হয়। তখন পয়সাটি একই সাথে হেড এবং টেল দুই অবস্থাতেই থাকে। কারণ পয়সাটি যখন শূন্যে ঘূর্ণায়মান অবস্থায় থাকে তখন আমরা স্পেসিফিক্যালি হেড নাকি টেল সেটা বলতে পারবো না। ফলে এটি একইসাথে হেড এবং টেল।  এবং এটাই হচ্ছে সুপারপজিশন এবং এই সুপারপজিশন তখনই ভেঙে পড়বে যখন আমরা পয়সাটি কে থামিয়ে হেড নাকি টেল এসেছে তা দেখার চেষ্টা করবো।  এটি আসলে উদাহরণ বল যাবে কিনা আমি নিশ্চিত নই। 


যাইহোক মনে করুন দুইটি হাইড্রোজেন পরমাণুর একটি করে ইলেকট্রন শেয়ার করে হাইড্রোজেন অনুর গঠন করেছে। এখন এই শেয়ারকৃত ইলেকট্রন আর কোন হাইড্রোজেনের দিকে থাকবে? এখানে দিক বলতে স্পিন বুঝানো হচ্ছে‌। সে নিশ্চয়ই  কোন একটি নির্দিষ্ট হাইড্রোজেনের দিকে থাকবে না। কারণ শেয়ারকৃত ইলেকট্রনের উপর দুইটি হাইড্রোজেন পরমাণুর  হক রয়েছে। ফলে ইলেকট্রনটি একই সাথে দুটি হাইড্রোজেন পরমাণুর দিকেই থাকবে। একবার এদিক একবার ওদিক এবং এটিই হচ্ছে সুপারপজিশন। এখন বলা যাক এই সুপারপজিশন বৈশিষ্ট্য কিভাবে কাজে লাগানো হবে কোয়ান্টাম কম্পিউটারের। মনে করুন, এই  পাজ্জেলটি আপনাকে সমাধান করতে হবে। আপনি কি করবেন আপনি প্রথমে যে কোন একটি পথে যাবেন এবং সেই পথ ভুল হলে ফিরে এসে অন্য পথে যাবেন।


 এভাবে কোন এক সময় আপনি সঠিক পথে খুঁজে পাবেন। এক্ষেত্রে সময় অবশ্যই অনেক বেশি লাগবে। এই বিষয়টিকে আপনি ক্লাসিক্যাল কম্পিউটারের সাথে তুলনা করতে পারেন। অন্যদিকে যদি বিষয়টি এমন হয় আপনার অনেকগুলো কার্বন কপি তৈরি হবে এবং সবগুলো কার্বন কপি এই পাজ্জেল সমাধানের জন্য ভিন্ন ভিন্ন পথে যাত্রা শুরু করবে ।তবে পাজ্জেল সমাধান করতে কত সময় লাগবে?অবশ্যই খুবই কম সময় লাগবে এবং কোয়ান্টাম কম্পিউটার ঠিক এভাবেই কাজ করবে তার সুপারপজিশন বৈশিষ্ট্য ব্যবহার করে।‌ এখন এই পাজেলের বিষয়টি একটু ভিন্নভাবে চিন্তা করুন। মনে করুন, আপনার কম্পিউটারে ষোলটি মুভি সেভ করে রাখা আছে। মুভি গুলোর নাম হচ্ছে এইগুলো যদিও মুভির নাম এমন হবে না। কিন্তু কম্পিউটার যেহেতু সবকিছুকে  0 এবং 1 এর মাধ্যমে সংরক্ষণ করে। ফলে আমরা ধরে নিলাম নাম গুলোও এরকম। 


এই মুভিগুলো থেকে যে কোন একটি মুভি সার্চ দিয়ে বের করার ক্ষেত্রে ক্লাসিকাল কম্পিউটার প্রত্যেকটি ফাইলকে একেকটি করে আলাদা আলাদা ভাবে চেক করবে এবং এক পর্যায়ে কাঙ্খিত মুভিটি খুঁজে বের করবে। কিন্তু কোয়ান্টাম কম্পিউটার সবগুলো মুভিকে একই সাথে সার্চ করতে পারবে। কারণ কিউবিট একই সাথে 0 এবং 1 হতে পারে। ফলে চারটি কিউবিটে কিন্তু একই সাথে সবগুলো ইনফরমেশনের কম্বিনেশন উপস্থিত থাকবে। ফলাফল পাওয়া সম্ভব দ্রুত গতিতে কাজ সম্পন্ন হবে। সাব এটমিক পার্টিক্যালর আরো একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে ইনন্টেগেলমেন্ট। একজোড়া সাব এটমিক পার্টিক্যাল অর্থাৎ কিউবিটের একটি যদি আপ স্কীনে না থাকে অর্থাৎ 1 অবস্থা থাকে তবে অপর সাব এটমিক পার্টিক্যাল অর্থাৎ কিউবিট  ডাউন স্কিনে থাকবে অর্থাৎ 0  অবস্থায় থাকবে। এই দুইটি সাব এটমিক পার্টিক্যিল যত দূরেই অবস্থান করুক না কেন। আইনস্টাইন যিকে বলেছিলেন স্পুকি অ্যাকশন। যাই হোক এখন বলা যাক কিউবিট কিভাবে তৈরি করা হয়‌। বিষয়টি খুবই জটিল। 


কিউবিট হিসেবে সিঙ্গেল ফটো, নিউক্লিয়াস কিংবা ইলেকট্রন ব্যবহার করা হয়ে থাকে। সাধারণত বিশেষ এক ধরনের সার্কিটে ফোটন, নিউক্লিয়াস বা ইলেকট্রন বসিয়ে কিউবিট তৈরি করা হয়। কিউবিট তৈরি করার ক্ষেত্রে মূলত দুই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। প্রথম সমস্যা হচ্ছে কিউবিট  অর্থাৎ  সাব  এটমিক পার্টিক্যালের সুপারপজিশন অবস্থান মেইনটেইন করা। সাব এটমিক পার্টিক্যালে বা কিউবিটর সুপারপজিশন খুবই স্পর্শকাতর একটি বিষয়। পরিবেশের সামান্য তাপমাত্রা,  সামান্য ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ফিল্টের এদিক সেদিক এছাড়াও আরও অনেক সেক্টর রয়েছে যার কারণে মুহূর্তেই সাবমিট পার্টিক্যাল বা কিউবিটের  সুপারপজিশন অবস্থা ভেঙে যেতে পারে। ফলে কিউবিটের  সার্কিট তৈরি করার এটি লিকুয়িড নাইট্রোজেনের মাধ্যমে পরম শূন্য তাপমাত্রার মধ্যে রাখা হয়। যেন তাপমাত্রার এদিক সেদিকের কারণে কোন ডিস্টারবেন্স তৈরি না হয় এবং এই সার্কিটের উপরে যেসব যন্ত্রাংশ দেখছেন এগুলো হচ্ছে অন্যান্য যে ফ্যাক্টর গুলো রয়েছে সেগুলোকে নিয়ন্ত্রন করার জন্য এবং দ্বিতীয় সমস্যা হচ্ছে বোধগম্য আউট বের করে নিয়ে আসার। 


কিউবিটের ক্ষেত্রে আউটপুট ইরোর আসবে যদি না কিউবিটের অ্যাম্পিটিউট বা বিস্তার সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করা না যায়। এর জন্য প্রয়োজন কিছু বিশেষ কোয়ান্টাম  গেট বা কোয়ান্টাম লজিক গেট। এর মাধ্যমে কিউবিটের সুপারপজিশন বৈশিষ্ট্যের ফলে বিশেষ সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে তার ফলাফল কোন প্রকার ইরোর ছাড়াই বের করে নিয়ে আসা যায়।  কিউবিট কি এবং কিভাবে কাজ করে তা আশা করি বোঝাতে পেরেছি। কিউবিট কি পরিমাণ তথ্য সংরক্ষণ করতে পারবে এর ম্যাথ খুবই জটিল। সেই ম্যাথ এক্সপ্লেইন করার ক্ষেত্রে আরও একটি আলাদা লেখার প্রয়োজন যায় এখন সম্ভব হচ্ছে না। তবে কিউবিট কি পরিমাণ তথ্য সংরক্ষণ করতে পারবে তার কিছু তুলনামূলক উদাহরণ দিচ্ছি।  


আপনার কাছে যদি  ১০টি কিউবিট থাকে এর মাধ্যমে যে পরিমাণ তথ্য সংরক্ষণ করতে পারবেন  ট্রানজিস্টরের মাধ্যমে সে পরিমাণ তথ্য সংরক্ষণ করার জন্য আপনার প্রয়োজন হবে ১৬০০০ ট্রানজিস্টার। অর্থাৎ ১৬০০০ বিট এবং আপনার কাছে যদি ৫০০টি কিউবিট থাকে তবে এর মাধ্যমে যে তথ্য সংরক্ষণ করতে পারবেন এর জন্য প্রয়োজন হবে মহাবিশ্ব যতোটুকু এখন পর্যন্ত আমরা জানতে পেরেছি তাতে মোট যে পরিমাণ পরমাণু  রয়েছে তার সংখ্যার চেয়েও বেশি পরিমাণ ট্রানজিস্টার। তাহলে বুঝা যাচ্ছে যে কিউবিট আসলে কত ব্যাপক পরিসরে কাজ করবে। টেক জায়েন্ট  গুগোল ৫৩ কিউবিটের  প্রসেসর তৈরি করার কথা দাবি করেছে।  যার নাম Sycamore। 


আরও পড়ুন - ক্লাউড কম্পিউটিং কী ?


কোয়ান্টাম কম্পিউটার মূলত সুবিশাল বিষয়ের ক্ষেত্রে ব্যবহারের উপযোগী। সুবিশাল বলতে যেসব ক্ষেত্রে অনেক ধরনের সম্ভাবনা থাকে। অর্থাৎ অনেক ফ্যাক্টর জড়িত থাকে। যেমন আবহাওয়ার পূর্বাভাস। তবে আমাদের প্রতি দিনকার জীবনে ব্যবহার করা ক্লাসিক্যাল কম্পিউটারে স্থান হয়তোবা কোয়ান্টাম কম্পিউটার দখল করতে পারবে না। কারণ সাইন্টিস্টদের মতে এই ক্ষেত্রে কোয়ান্টাম কম্পিউটার ক্লাসিক্যাল কম্পিউটারের মত পারফরম্যান্স দেখাতে পারবে না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে হয়তবা কোয়ান্টাম কম্পিউটার ক্লাসিক্যাল কম্পিউটারের চেয়েও বেশি সময় নিয়ে নিবে।সুতরাং আপাতত ক্লাসিক্যাল কম্পিউটারকে ছোট করে দেখার মত কোন সুযোগই নেই। আমাদের three-dimensional মহাবিশ্ব কি শুধুমাত্র একটি ভ্রম বা ইলেশন‌। হলোগ্রাফিক মহাবিশ্বের কনসেপ্ট কিন্তু সেটাই বলে। আমাদের three-dimensional মহাবিশ্ব শুধুমাত্র একটি ভ্রম বা ইলেশন।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন