ইউরিক এসিড কি? ইউরিক এসিড কমানোর উপায়

 

আজকের লেখাটি সম্পূর্ণ ইউরিক অ্যাসিড সম্পর্কিত। যাদের ইউরিক এসিড বেড়ে গেছে বা ইউরিক এসিড বাড়ার কারণে বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।  তারা লেখাটি অবশ্যই পড়বেন যে যে বিষয়গুলো জানতে পারবেন তা হলো


১. ইউরিক অ্যাসিড কি?

২. ইউরিক এসিড বাড়ে কেন?

৩. ইউরিক এসিড বাড়লে কি হয়?

 ৪. প্রাকৃতিক উপায়ে কোন ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই ইউরিক অ্যাসিড কমানোর কি                উপায়?

 

এছাড়াও আরও দুটি বিষয় আপনাদের জানাবো তা হলো ইউরিক এসিড বাড়লে কি কি খাবার খাওয়া যাবেনা এবং কোন কোন খাবার খেতে হবে যাতে ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে থাকে



ইউরিক এসিড,ইউরিক এসিডের ডায়েট চার্ট,ইউরিক এসিড কমানোর উপায়,ইউরিক এসিড কমানোর ঔষধ,ইউরিক এসিড বাড়লে কি হয়,ইউরিক এসিড দূর করার উপায়,ইউরিক এসিড বাড়লে কী খাবেন,ইউরিক এসিড কি,ইউরিক এসিড কমবে মাত্র ১ দিনেই,ইউরিক অ্যাসিড,ইউরিক এসিড কমানোর ঘরোয়া উপায়,ইউরিক এসিড ও ডায়েট,ইউরিক এসিড বাড়লে কি খাবেন না,ইউরিক এসিডের লক্ষণ,ইউরিক এসিড ঔষধ,ইউরিক এসিড কেন হয়,ইউরিক অ্যাসিড ঠেকানোর উপায়,ইউরিক এসিডের সমস্যার সমাধান,ইউরিক এসিডের ব্যথা কমানোর উপায়
ইউরিক এসিড



ইউরিক অ্যাসিড কি?


ইউরিক এসিড হলো আমাদের দেহের এক ধরনের টক্সিক উপাদান। আমাদের দেহে পটাশিয়াম,‌ সোডিয়াম বাই কার্বনেট অ্যালকালাইন অর্থাৎ ইলেকট্রোলাইটসের ব্যালেন্স রক্ষায় ইউরিক এসিডের ভূমিকা রয়েছে। সবার রক্তেই ইউরিক অ্যাসিড থাকে। তবে খুব স্বল্প পরিমাণে। এই ইউরিক এসিড আমাদের দেহের ডেথ সেল  এবং খাদ্যের উপাদান পিউরিন থেকে উৎপন্ন হয় এবং মুন্ঠির সঙ্গে মিশে থাকে।



ইউরিক এসিড বাড়ে কেন?



ইউরিক এসিড নামের এই টক্সিক উপাদানের তিনভাগের দুইভাগই আমাদের দেহের যকৃত বা লিভারের তৈরি হয়। বাকি এক ভাগ পিউরিন সমৃদ্ধ খাবার থেকে গৃহীত হয় বা তৈরি হয়। এই যকৃতে উৎপন্ন ইউরিক এসিডের বাড়তি অংশ অন্যান্য বর্জ্য পদার্থের মতন মূত্রের মাধ্যমে দেহ থেকে অপসারিত হয়। কিন্তু মূত্রের মাধ্যমে যা বের হয় এবং যকৃতে যা উৎপন্ন হয়। অন্যদিকে খাবারে অতিমাত্রায় পিউরিন গ্রহণের ফলে এর থেকে যে ইউরিক এসিড উৎপন্ন হয় এর ভেতরে যখন সমতা না থাকে অর্থাৎ যতটা পরিমাণ বাইরে বের হয়ে যাচ্ছে। তার থেকে যদি দেহে উৎপন্ন ইউরিক এসিড বেড়ে যায় তখনই এর ঘনত্ব বাড়তে থাকে এবং তখনই আমরা বলি যে ইউরিক এসিড বেড়ে গেছে।

 

 

ইউরিক এসিড বেড়ে গেলে কি হয়?



 যখন ইউরিক এসিড বেড়ে যায় তখন আমাদের দেহের অভ্যন্তরে বিশেষ করে কিডনির ওপরে দীর্ঘদিন জমে থাকে এবং তা রোনাল্ড স্টোন‌ বা কিডনির পাথর হিসেবে দেখা যায় এবং কিডনি ঠিকমত কাজ করে না। মূত্রের মাধ্যমে ইউরিক অ্যাসিড ও অন্যান্য বর্জ্য দেহ থেকেও বের করতে পারেনা। কিডনির কার্যক্ষমতা নষ্ট হয় এবং কখনও কখনও কিডনি ড্যামেজ হয়ে যায়। এছাড়া বাড়তি ইউরিক অ্যাসিড শরীরের হাড়ের বিভিন্ন জয়েন্টে ক্রিস্টালের মতো জমে যায়। যাতে অনেক রোগী হাড়ের সন্ধিস্থলে ব্যথা অনুভব করে, হাড় ফুলে যায় এবং এই ব্যাপারটাই আমরা গআউট বা গেঁটেবাত হিসেবে চিনি। এখানেই শেষ নয় হার্টের বিভিন্ন রোগের ইউরিক এসিডের ভূমিকা রয়েছে। কারণ এটি আমাদের দেহের সোডিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। কাজেই হাই প্রেসার এবং হার্টের অসুস্থতাসহ বিভিন্ন ধরনের রোগ হবার সম্ভাবনা থাকে এই ইউরিক এসিডের পরিমাণ যখন একজন পূর্ণবয়স্ক পুরুষের দেহে প্রতি ডেসিলিটারে রক্তে ৭ মিলিগ্রাম এবং পূর্ণ বয়স্ক নারীদের প্রতি ডেসিলিটারে ৬ মিলিগ্রাম থাকে। তখন তাকে স্বাভাবিক মাত্রা বলে ধরা হয়।  এর থেকে বেড়ে গেলে তখনই আপনাকে ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে।

 


প্রাকৃতিক ভাবে কোন ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ছাড়াই কীভাবে আপনার ইউরিক অ্যাসিড কে নিয়ন্ত্রণে আনবেন?


যে যে খাবারের কথাগুলো বলব সেই খাবারগুলো অবশ্যই নোট রাখবেন। যাতে আপনি নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট মাত্রায় সেই খাবারগুলো গ্রহণ করতে পারেন। প্রথম খাবারটি হল পানি। প্রচুর পরিমাণে পানি পান করতে হবে দেহের যদি ইউরিক এসিডের মাত্রা বেড়ে যায়। ন্যূনতম সাড়ে ৩ থেকে ৪ লিটার পানি পান করবেন। কখন পান করলে সবচেয়ে ভালো ফল পাবেন। এর মধ্যে প্রথমেই হলো সকালে ঘুম থেকে উঠে বাসি পেটে পানি পান করবেন। যখন সূর্যোদয় হয় সেই সময় ন্যূনতম 1 লিটার হালকা গরম গরম পানি পান করবেন এবং তা খুব ধীরে ধীরে এবং একটি জায়গায় বসে। কোন খাবারের মাঝে কখনো পানি পান করবেন না। সকল ধরনের খাবার খাওয়ার অন্তত ৩০ মিনিট পূর্বে এবং 30 মিনিট পরে পানি পান করুন। 


দ্বিতীয় খাবার হলো তেল। আপনি রান্নায় কোন তেল খাচ্ছেন। তার উপরে নির্ভর করে আপনার দেহে ইউরিক অ্যাসিড কমা বা বাড়া । যদি ইউরিক এসিড বেড়ে যায় তাহলে চেষ্টা করবেন সবচেয়ে কম তেল খেতে বা কম তেল দিয়ে   রান্না তৈরি করতে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ভাবে আপনি যদি অল্প পরিমাণে অলিভ অয়েল দিয়ে রান্না করতে পারেন। তাহলে খুব তাড়াতাড়ি আপনার ইউরিক এসিডের মাত্রা একেবারে নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে এবং একজন মানুষের জন্য সারাদিনের ২ টেবিল চামচের বেশি অলিভ অয়েল গ্রহণ করা যাবে না। 


তৃতীয়  খাবার হচ্ছে বাদাম। আপনাকে বাদাম খেতে হবে। তবে রাস্তাঘাটের ভাজা বাদাম বা চিনাবাদামও নয়। নির্দিষ্ট বাদাম খেতে হবে। তার মধ্যে প্রথমটি হচ্ছে আখরোট বা ওয়ালনাট এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে আমন্ড বা কাঠ বাদাম।এই  দুটো বাদাম প্রতিদিন চারটি করে রাত্রে ভিজিয়ে রেখে সকালবেলায় খাবেন। অথবা সকালে ভিজিয়ে রেখে বিকেলের স্ন্যাকস হিসেবে খাবেন। খুব ভালো করে চিবিয়ে চিবিয়ে খাবেন। প্রত্যেকটি বাদাম মুখে এমন ভাবে চিববেন যাতে এর প্রতিটি অংশ প্রতিটি কণার মুখের ভেতরে খুব ভালোভাবে ভেঙে যায়। 



চতুর্থ খাবারটি হচ্ছে লেবু। প্রচুর পরিমাণে লেবু খেতে হবে। অথবা কমলালেবু খেতে হবে। লেবু বা কমলা লেবুতে যে সাইট্রিক এসিড রয়েছে তা ইউরিক অ্যাসিড কমানোর একটি বড় হাতিয়ার। এই ভিটামিন সি এবং সাইট্রিক এসিড  ইউরিক অ্যাসিড যেমন নিয়ন্ত্রণে আনতে পারে। তেমনি খুব সহজে আপনার শরীরের ব্যথাকে দূর করতে পারে। 

লেবু খাওয়ার সবচেয়ে সুন্দর এবং সহজ উপায় হলো আপনি দুপুরের খাবারের ৩০ মিনিট পরে অথবা এক ঘন্টা পূর্বে এক গ্লাস হালকা গরম পানির ভেতরে তিন থেকে চা চামচ পরিমাণ লেবুর রস মিশিয়ে তা পান করবেন। যদি আপনি চান তাহলে এর সঙ্গে দুই এক চিমটি সন্ধব লবণ অথবা  বিটসল্ট মিশিয়ে নিতে পারেন। কিন্তু কোনভাবে এর সঙ্গে চিনি বা মিষ্টি জাতীয় কোন উপাদান একেবারেই মেশাবেন না। আর খাবারের সঙ্গে লেবুর না খেয়ে  এইভাবে লেবু খেলে সবচেয়ে ভালো উপকার পাবেন।  


পঞ্চম খাবারটি হচ্ছে আদা। প্রতিদিন অন্তত এক থেকে দেড় ইঞ্চি কাঁচা আদা চিবিয়ে খাবেন অথবা ১ টেবিল চামচ পরিমাণ আদার রস খাবেন। এটা আপনি দুপুরের খাবারের 30 মিনিট পূর্বে খেতে পারেন। 


ষষ্ঠ খাবারটি হল কালো গোলমরিচ। কালো গোলমরিচ তিন থেকে চারটি দানা আপনি যে কোন খাবারে সঙ্গে খেতে পারেন। অথবা দুধের সঙ্গে মিশিয়ে খেতে পারেন। 


সপ্তম  খাবারটি হলো রসুন। কাঁচা রসুনের কোয়া ১ থেকে ২ টি দুপুরের ভাতের সঙ্গে খান অথবা সকাল বেলায় খান। এই খাবারগুলোর পাশাপাশি অবশ্যই আপনাকে প্রতিদিন ৩০ মিনিট ব্যায়াম করতে হবে। ঘাম ঝরানোর ব্যায়াম করা ইউরিক এসিড নিয়ন্ত্রণের অনেক বড় একটি হাতিয়ার এবং এই খাবারগুলো খাওয়ার পাশাপাশি আপনি ইউরিক এসিড বেড়ে গেলে সকল ধরনের ডাল বিশেষ করে মসুর ডাল, মটরশুঁটির, শিম, কাঁঠালের বিচি অর্থাৎ বীজ জাতীয় খাবার যেমন রাজমা ইত্যাদি বাদ দেবেন। চিংড়ি মাছ, কাঁকড়া এবং সকল ধরনের সামুদ্রিক মাছ, ডিমের কুসুম বাদ দিতে হবে। সবজির ভেতরে আপনি কুমড়া, ঢেরশ, পাকা টমেটো ,পালংশাক, পুঁইশাক, ফুলকপি, ব্রকলি, মিষ্টি কুমড়া এবং অ্যালকোহল, ক্যাফেইন জাতীয় খাবার চা-কফি কোমল পানীয় চকলেট ইত্যাদি একেবারেই খাবেন না। 


সকল ধরনের মিষ্টি খাবার পরিহার করবেন। যে খাবার গুলো খেতে পারবেন তার মধ্যে মুরগির মাংস দেশি মাছ এবং কুসুম ছাড়া শুধুমাত্র ডিমের সাদা অংশ এবং অধিক পরিমাণে আঁশযুক্ত খাবার খাবেন। আঁশযুক্ত খাবার ইউরিক এসিডের মাত্রা দ্রুত কমিয়ে আনে। যে ফলগুলো মিষ্টি স্বাদের সেগুলো ইউরিক অ্যাসিড বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। তাই ইউরিক এসিড বেড়ে গেলে টক স্বাদযুক্ত ফল খাবেন। কিন্তু বাসি পেটে সকালবেলায় এবং সূর্যাস্তের পরে টক ফল খেলে গ্যাস এসিডিটি বাড়ে। তাই দিনের মধ্যভাগে তবে মূল খাবারের এক ঘন্টা পূর্বে বা পরে টক ফল খাওয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। ইউরিক এসিড বেড়ে গেলে দিনে দুইবার গ্রিন টি পান করুন।  এক সকালবেলায় নাস্তার একঘন্টা পরে এবং দুই সূর্যাস্তের আগে এইভাবে গ্রিন টি পান করলেও খুব ভালো উপকার মিলবে।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন