আজকের লেখার বিষয় হলো কচু শাক। কচু শাকের বিভিন্ন রকম উপকারিতা, ব্যবহার এবং তার সাইডএফেক্ট নিয়ে। কচুশাক বাঙালিদের কাছে অতি পরিচিত একটি শাক। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে কচুশাক খুবই জনপ্রিয়। বাড়ির উঠনের কোণে, ধানের ক্ষেতে, বিলের ধারে, যত্রতত্র বিনা যত্নে জন্মে বলে কচু শাক সবজি পাওয়া যায়। কচুশাক বিভিন্নভাবে খাওয়া হয়। তবে সাধারণত কচু পাতা ভর্তা বা তরকারি হিসেবে বেশি জনপ্রিয়। বিভিন্ন রকম মাছ যেমন ইলিশ, চিংড়ি ,ছোট মাছ এমনকি শুটকি মাছ দিয়ে কচু শাকের তরকারি বাঙ্গালীদের কাছে অত্যন্ত জনপ্রিয়।
খুব সহজলভ্য বলে অনেকে কচুশাকের বিশেষ গুরুত্ব দিতে চান না। কিন্তু এই কচু শাকে দৈনন্দিন পুষ্টিচাহিদা অনেকখানি পূরণ করতে পারে। কচু শাকের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন 'এ' এর মস্ত বড় একটি উৎস। বিভিন্ন রকম রোগ যেমন রাতকানা রোগ এই ধরনের রোগ গুলো ভিটামিন 'এ' এর অভাবে হয়ে থাকে। এই সব ধরনের রোগ প্রতিরোধ করার জন্য কচু শাকের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তাছাড়া কচুশাকের মধ্যে রয়েছে আয়রন। আমাদের শরীরের রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ কমে গেলে সব ডাক্তাররাই বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বলেন কচু শাক খাওয়ার জন্য। ভিটামিন 'এ' এর পাশাপাশি এর মধ্যে রয়েছে ভিটামিন বি এবং ভিটামিন সি। তাছাড়া আরো অনেক রকম রোগের প্রতিরোধের কচুশাকে ব্যবহার করা যেতে পারে। এরপরে আমরা জেনে নেবো কচুশাকের বিভিন্ন রকম উপকারিতা নিয়ে।
কচু শাকের উপকারিতা |
১.
শরীরে ভিটামিন সি এর উৎস জোগান দেওয়ার জন্য: কচু শাক এর মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে
ভিটামিন সি। আর আমাদের শরীরে ভিটামিন সি এর প্রয়োজন খুব বেশি। ভিটামিন সি আমাদের শরীরে
বিভিন্ন রকম ক্ষত সারাতে খুব সাহায্য করা।
তাছাড়াও ভিটামিন-সি থাকলে আয়রনের আধিক্ষরণ সহজ হয়ে যায়। আয়রনডেফিশিয়ান্সিতে
ভুগছেন বা রক্তাল্পতায় ভুগছেন তাদের জন্য এই কচু শাক খুবই ভালো হতে পারে। তাই কচুশাকে
আপনার ডায়েট ইনক্লুড করবেন।
২. শরীরে অক্সিজেনের তারতম্যকে ভালো রাখার জন্য:
এখন যখন চারিদিকে করোনার মতো পরিস্থিতি অনেক
বেশি বেড়ে গেছে। এই সময়ে অক্সিজেনের অভাব অনেক জায়গা দেখা দিচ্ছে। এমন সময় শরীরে
যদি অক্সিজেনের সরবরাহ প্রাকৃতিক ভাবে ভালোভাবে চলে তাহলে খুব সুবিধার হয়। আর এই অক্সিজেনের
সরবরাহ সচল রাখতে কচুশাকের অনেকখানি ভূমিকা রয়েছে। এই শাকের মধ্যে রয়েছে আয়রন এবং
রক্তের পরিমাণ বাড়ায়। কচুর মধ্যে থাকা আয়রন আমাদের শরীরের রক্তের যোগান দিতে সাহায্য
করে। ফলে অক্সিজেন সরবরাহ পর্যাপ্ত পরিমাণে হতে থাকে।
৩. আমাদের বোন এবং হাড়ের স্ট্রেন্থকে বজায় রাখার
জন্য: বোন এবং হাড়ের শক্তিকে বজায় রাখতে অনেক কিছু দরকার হয়। যেমন: ক্যালসিয়াম,
ম্যাগনেশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ ফসফরাস প্রভৃতি। এঈ প্রত্যেকটি উপাদান রয়েছে কচুশাকের
মধ্যে। কচু শাকের মধ্যে এটি অন্যতম বড় উপকারিতা। যা আমাদের দাঁত এবং হাড়ের গঠনে খুব
সাহায্য করে। তাছাড়া বিভিন্ন রকম ক্ষয় রোগের প্রতিরোধ করতে ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
৪.
রাতকানা রোগকে সারানোর জন্য: রাতকানা রোগ বা
Night blindness অনেকসময় ভিটামিনে এ এর অভাবে হয়ে থাকে। এই ধরনের রোগ হলে রাতের বেলা
চোখে তাকিয়ে দেখতে খুব অসুবিধা হতে পারে। তাই কচু শাককে এসময় খেতে বলা হয়। কচু শাকের
মধ্যে রয়েছে ভিটামিন ই এর খুব ভালো একরকম উৎস। এ কারণে এটি দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে সাহায্য
করে এবং চোখ সম্পর্কিত যেকোন জটিল রোগে কমাতেও সাহায্য করে।
৫.
কনস্টিপেশন কমানোর জন্য: কচু শাক এর মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার বা খাদ্যআঁশ।
যা খাবার সহজে হজম করতে সাহায্য করে এবং আমাদের শরীরের মেটাবলিজম রেটকে বাড়ি যেতে
সাহায্য করে। যার জন্য পেট বেশি ভর্তি থাকে। বেশি খিদে পায় না তার সাথে সাথে ডাইজেশন
আর কোন প্রবলেম হয় না। আর ডাইজেশন ভালো মানে আমাদের কনস্টিপেশনের প্রবলেমগুলো কমে
যায়।
এখনো অব্দি আমরা জেনে নিলাম কচুশাকের বিভিন্ন রকম
পজেটিভ দিক অর্থাৎ উপকারিতা নিয়ে। এরপরে আমরা জানবো যে কিরকম কি সর্তকতা মেনে চলতে
হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে কচু শাক খেলে এলার্জির মত সম্ভাবনা
বেড়ে যেতে পারে এবং তার সাথে সাথে চুলকানি সম্ভাবনা থাকতে পারে।কচুশাক বা কচুর মধ্যে
রয়েছে অক্সালেট যা খেলে অনেক সময় গলা চুলকায় ।
কচু
শাক রান্না করার সময় লেবুর রস নিশ্চয়ই ব্যবহার করবেন। কিন্তু খুব যদি বেশি পরিমাণে
এলার্জি হয় তাহলে কচু শাক খাওয়া বন্ধ করে দেবেন।