তুলসী পাতা খাওয়ার উপকারিতা

ভোর বেলা তুলসী পাতা খেলে কি হয়? তুলসী পাতা খাওয়া সম্পর্কে অনেক রকম তথ্য বা ধারণা প্রচলিত আছে।  কিন্তু কয়জন মানুষ বিশ্বাস করে রোজ তুলসী পাতা খাচ্ছেন?  আজকের লেখায় আমরা জানবো ভোর বেলা তুলসী পাতা খেলে দেহে কি ঘটে? কয়টি করে তুলসী পাতা খেতে হবে এবং কিভাবে খেতে হবে? তার আগে বলে নেই তুলসীপাতার দেহের এত ধরনের রোগ দূর করতে পারে যে সবগুলো বলা এক লেখায় সম্ভব নয়। আমি ধারাবাহিকভাবে কিছু রোগ সম্পর্কে বলবো। আপনার রোগ সম্পর্কে জানতে অবশ্যই সম্পূর্ণ লেখাটি পড়বেন। এই সহজলভ্য পাতার গুণ শুনলে চমকে যাবেন এটা নিশ্চিত।

 

তুলসীতে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল ও অ্যান্টি ফাঙ্গাস উপাদান রয়েছে। এই উপাদান রক্ত পরিশুদ্ধ করে এবং বিপাকক্রিয়ার সুষ্ঠুভাবে যাতে চলতে পারে সেই দিকে খেয়াল রাখে। এর ফাইটোকেমিক্যাল বয়সের কারণে দেহের যে ক্ষয় হয় তা রোধ করতে পারে।‌ এমনকি ইনসুলিন উৎপাদনের মাত্রা অনেক বাড়িয়ে দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে দেহে চিনির পরিমাণ বা রক্তের সুগারের পরিমাণ স্বাভাবিক রাখে। বুঝতেই পারছেন এই জন্যই যারা ডায়াবেটিস আক্রান্ত তাদের জন্য তুলসী পাতা খুব ভালো। 


তুলসী পাতার উপকারিতা,তুলসী পাতা,তুলসী পাতার অজানা যত উপকারিতা,তুলসী পাতার উপকারিতা কি,রাম তুলসী পাতার উপকারিতা,তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম,তুলসী পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা,তুলসি পাতার উপকারিতা ও ঔষধি গুণাগুণ,তুলসী পাতার গুনাগুন,তুলসী পাতার অপকারিতা,তুলসী,জেনে নিন তুলসী পাতার ওষধি গুণ,তুলসী পাতার উপকারিতা ব্যবহার এবং ক্ষতিকর দিক,তুলসী পাতার গুণাগুণ,যৌবনও ধরে রাখে তুলসী পাতা,তুলসি পাতার উপকারিতা ও অপকারিতা,তুলসী পাতার ওষধি গুণ,তুলসী পাতার স্বাস্থ্য উপকারিতা
তুলসী পাতা খাওয়ার উপকারিতা

ভোরবেলায় তুলসী পাতা খেতে হবে। সকাল বেলা বা ভোর বেলায় ঘুম থেকে ওঠার পরে, প্রথমে উষ্ণ পানি পান করবেন। এই  উষ্ণ পানি পান করার পরেই তুলসীপাতা ৫ থেকে ৬টি তুলসী পাতা থেঁতো করে খেতে পারেন অথবা শুধুমাত্র চিবিয়ে খেয়ে নিতে পারেন। যদি চিবিয়ে খান তাহলে তার পরপরই অল্প পানি পান করুন।দাঁতে লেগে থাকা তুলসী পাতা দাঁতের এনামেলের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে। এই জন্য তুলসী পাতার রস করে থেঁতো করে খাওয়াই ভালো। আর না হলে চিবিয়ে খাওয়ার পরপরই অল্প পানি পান করে নেবেন। যারা দীর্ঘদিন ধরে শ্বাসকষ্ট বা অ্যাজমা রোগী এবং ব্রংকাইটিস, বুকে জমা কফ ,সর্দি-কাশি এমন সমস্যায় ভুগছেন এবং যাদের দেহে কিছুদিন পরপরই এই ধরনের ভাইরাসের আক্রমণে ঠান্ডা, সর্দি কাশিতে ভুগতে হয় তারা অবশ্যই ভোর বেলা তুলসী পাতা খাবেন। এক্ষেত্রে ভোরবেলা প্রতিদিন তুলসীপাতা ৫ থেকে ৬ টি থেঁতো করে। তার সাথে এক চামচ আদার রস এবং এক চামচ খাঁটি মধু মিশিয়ে পান করুন‌। দেখবেন কিছুদিনের মধ্যেই বুকে জমা কফ দূর হয়ে গেছে এবং শ্বাসকষ্ট আর ফিরে আসছে না। 


আজকাল বহু মানুষ কিডনি রোগে আক্রান্ত। কিডনিতে পাথর হচ্ছে বা অন্য রোগ সৃষ্টি হচ্ছে। যাদের কিডনিতে পাথর হচ্ছে বা একবার হয়েছে তারা নিয়ম করে প্রতিদিন ভোর বেলায় এইভাবে তুলসী পাতা চিবিয়ে খাবেন অথবা থেঁতো করে খাবেন।  ৫ থেকে ৬ টি খেলেই হবে। যাদের একবার কিডনিতে পাথর হয়েছে। পাথর অপসারণের পর আবার হচ্ছে। তাদের এই ধরনের সমস্যা হবে না কিংবা পাথর একদম অল্প অবস্থাতে কেবল হয়েছে এমন অবস্থায় যদি নিয়ম করে তুলসী পাতা খান  তাহলে পাথর গলে বের হয়ে যাবে। পাকস্থলীর যে কোনো প্রদাহ যেমন আলসার এই রোগে তুলসী পাতা খাওয়ার নিয়ম হলো, প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ টি তুলসীপাতা ভালো করে ধুয়ে তা অল্প পানি দিয়ে জুস তৈরি করে নিন। এই জুস খুব অল্প তাপে হালকা গরম করতে হবে। এই গরম জুস ভোরবেলায় পান করলে পাকস্থলীর প্রদাহ দূর হবে। টানা ২১দিন পান করতে হবে।তাহলেই রোগ দূর করা সম্ভব। 


ইউরিনের যেকোন সমস্যা যেমন অতিরিক্ত প্রস্রাব বা প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া, দুর্গন্ধযুক্ত প্রস্রাব এই সকল সমস্যা দূরীকরণে তুলসী পাতার কাজ করবে। এক্ষেত্রেও তুলসী পাতা খেতে হবে প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ টি। টানা ২১ দিন সেবন করুন জুস খেতে পারেন অথবা শুধুমাত্র চিবিয়ে খেয়ে তার পরে অল্প পানি পান করতে পারেন। আয়ুর্বেদে রাতকানা রোগ দূর করতে তুলসীপাতা ব্যবহারের উল্লেখ রয়েছে। যেহেতু তুলসী পাতার রাতকানা রোগ দূর করতে পারে। তাই তুলসীপাতা চোখের দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে পারবে। 


সকালবেলায় নিয়ম করে ৫ থেকে ৬ টি তুলসী পাতা খেতে হবে। যারা অল্পবয়স্ক বা ছোট শিশু এরা দুই থেকে তিনটি বা চার থেকে পাঁচটি বয়সভেদে তুলসীপাতা সকাল বেলায় খালি পেটে চিবিয়ে খেয়ে পানি খেতে পারেন। অথবা থেঁতো করে  এর সাথে মধু মিশিয়ে খেতে পারেন।যদি ডায়াবেটিস না থাকে তুলসী তে মধু মিশিয়ে খাওয়া অনেক ভালো। তুলসীপাতা দাঁতের যে কোন ক্ষয় রোগ বা ক্যাভিটি দূর করতে পারে।  তুলসী পাতা খুব ভালো করে চিবিয়ে খেয়ে নিতে পারেন অথবা তুলসী পাতা থেঁতো করে সেটা দিয়ে খুব ভালো করে দাঁত পরিষ্কার করতে পারেন। 


তুলসীর ডাল দিয়ে দাঁত মাজা বা  দাঁত পরিষ্কার করলে দাঁতের ক্ষয় রোগ দূর হয়।  কিন্তু তুলসী পাতার দীর্ঘক্ষন দাতে আটকে থাকলে দাঁত ঝকঝকে সাদা রং হলদে হয়ে যেতে পারে। এজন্যই তুলসী পাতা দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করার পরে অথবা চিবিয়ে খাওয়ার পরে মুখ কুলি করে ফেলতে হবে কিংবা পানি খেয়ে নিতে হবে। দেহের  আনাচে-কানাচে যত রকমের টক্সিক উপাদান জমা থাকে এর সমস্ত বের করে দিতে পারে তুলসী পাতা। এইজন্যই প্রতিদিন নিয়ম করে ভোর বেলায় তুলসী পাতা খেতে হবে। প্রতিদিন খেলে ৫ থেকে ৬ টি তুলসী পাতা খেলেই হবে। যদি খুব ছোট ছোট তুলসী পাতা হয় তাহলে আট থেকে দশটিও খেতে পারেন। সাধারণত সবুজ তুলসী পাতা গুলো আকৃতিতে বড় হয়ে থাকে এবং কালো বা কৃষ্ণ-তুলসী ছোট হয়ে থাকে। 


এই তুলসী পাতা যদি সকালবেলায় চিবিয়ে খান অথবা জুস করে খান তা হলে দেহের কোথাও কোনো টক্সিক উপাদান জমা থাকবে না। এজন্য তুলসী ক্যান্সার প্রতিরোধক হিসেবে বিবেচিত হয়। তুলসী পাতা খেলে দেহের ক্যান্সার রোধ করা সম্ভব। এমনকি তুলসী লিভার ভালো রাখতে পারে। লিভারের সব রকম রোগ দূর করতে তুলসী খুবই কার্যকরী। তুলসী খেলে লিভারের রোগ দূর হওয়ার পাশাপাশি লিভার অনেক বেশি সুস্থ থাকবে। যাদের লিভারের রোগ নেই তারাও যদি নিয়ম করে তুলসী খান তাহলে কখনো লিভারের রোগ হবে না‌।  এজন্য খেতে হবে ভোর বেলায়।  একইভাবে তুলসী পাতা চিবিয়ে খান অথবা জুস করে খান। ফলাফল এরকমই পাবেন।  হঠাৎ করে পেটে গ্যাস এসিডিটি হলে বা খুব ডায়রিয়া হলো।তখন কি করবেন?  সাথে সাথেই ১০  থেকে ১২ টি তুলসী পাতা  ধুঁয়ে  খুব ভালো করে ছেঁচে এর  রসটা বের করে নিন।‌  লাগবে ১  টেবিল-চামচ তুলসী পাতার রস এবং এক চা-চামচ কাঁচা আদার রস। এই পরিমাণটা আমি প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য বলেছি। এই রস একসাথে মিশ্রণ করে যেকোনো খাবার খাওয়ার আধা ঘণ্টা আগে দিনে তিনবার খেতে হবে। একদিনের মধ্যেই ডায়রিয়া  দূর হবে। সেইসাথে দূর হবে পেটের সমস্ত গ্যাস এসিডিটি কোষ্ঠকাঠিন্য এমনকি টক ঢেকুর, মুখের মধ্যে টক ভাব এই সমস্ত রোগ দূর হবে। 


ডায়রিয়া হলে ৬ মাস পরবর্তী শিশু থেকে শুরু করে সবাইকেই এই আদায় এবং তুলসী পাতা খাওয়ানো যাবে। একদম ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে ৪ থেকে ৫ ফোঁটা তুলসী পাতার রস এবং তিন থেকে চার ফোঁটা আদার রস একত্রে মিশিয়ে খাওয়াতে পারেন। বয়স বাড়ার সাথে সাথে এর পরিমাণটাও বাড়বে।জ্বর হলে তুলসী পাতা খাওয়ার আলাদা নিয়ম আছে। জ্বর হলে তুলসী পাতার ১০  থেকে ১২ টি থেঁতো করুন। তার সাথে মিশিয়ে নিন চার থেকে পাঁচটি গোল মরিচের গুঁড়ো এবং ১ চা-চামচ মিছরি গুঁড়ো।  মিছরি বাজারে পাবেন আখের মিছরি  বা চিনির মিছরি  যেটাকে বলা হয়। এই মিছরি তুলসী পাতা এবং গোলমরিচের গুড়ো একসাথে খুব ভালো করে মিশিয়ে নিয়ে তিন ভাগ করুন। তিন ভাগের এক ভাগ করে প্রতি বেলা ভাত খাওয়ার বা যেকোন খাবার খাওয়ার আধা ঘণ্টা আগে অথবা আধাঘন্টা পরে খান। একদিনের মধ্যে জ্বর ভালো হয়ে যাবে।  যারা সরাসরি এইভাবে খেতে পারছেন না তারা পানির সাথে ফুঁটিয়ে খেয়ে নেবেন। তবে বেশিক্ষণ ফোটাবেন না‌ এতে তুলসীর গুনাগুন নষ্ট হয়ে যায়।  


আরও পড়ুন - এসিডিটি দূর করার উপায় 


যাদের দীর্ঘদিন থেকে প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া রয়েছে তারা তুলসীর বীজগুলো পানিতে ভিজিয়ে রাখুন।  ১ টেবিল চামচ তুলসী বীজ পানিতে ভিজিয়ে রাখুন।  যখন ভেজানো তুলসী বীজ  ফুলে  যাবে এবং অনেকটা পিচ্ছিল হয়ে যাবে। সেটা পান করুন। এতে তিন দিনের মধ্যে প্রস্রাবের জ্বালাপোড়া দূর হয়ে যাবে।  যাদের মুখে ঘন ঘন ভ্রন হচ্ছে এবং এই থেকে দাগ পড়ছে তারা তুলসী পাতা বেটে মুখে লাগান।  ব্রণের দাগ দূর হওয়ার পাশাপাশি ত্বকের যে কোন রোগ দূর হবে।  যাদের শরীরে রেশ,  এলার্জি  রয়েছে তারা এইভাবে আক্রান্ত স্থানে তুলসী পাতা বেটে প্রলেপ দিয়ে রাখলে  রেশ , এলার্জি বা দাগ,  ছোপ একদম দূর হয়ে যাবে। যারা একবার হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়েছেন অথবা এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। তারা টানা তিন মাস থেকে ছয় মাস পর্যন্ত তুলসী পাতা খাবেন। আগেই বলেছিলাম যে এক লেখাতে তুলসী পাতার গুনাগুন আলোচনা করা সম্ভব নয়। এজন্য অনেক কিছুই বলা বাদ থেকে  গেল।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন