পুঁই শাকের উপকারিতা ও অপকারিতা
সকলের কাছে জনপ্রিয় একটি শাক হচ্ছে পুঁই শাক। অনেকেই এই শাকটি খেতে পছন্দ করেন, এর পুষ্টিমান অনেক বেশি। কিন্তু সকল খাবার উপকারিতার পাশাপাশি আছে অপকারিতা। কিছু কিছু রোগীদের ক্ষেত্রে এই শাক বিষের ন্যায়। সেই রোগীরা যদি পুঁই শাক খান তাদলে তাদের যন্ত্রনা এতটা বেশি বৃদ্ধি পাবে যে তাদের জীবন কষ্ট ভরে উঠবে।
আজকে জানাব পুঁই শাক খাওয়ার উপকারিতা এবং অপকারিতা। পুঁই শাক খাওয়ার
উপকারিতা।
পুঁই শাকের উপকারিতা
পুঁই শাক শিশুদের জন্য অত্যন্ত উপকারী। শিশুদের নিয়মিত পুইশাক খাওয়ালে তাদের বুদ্ধি ভালো হয়। শিশুদের বেড়ে ওঠার জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি যেমন ভিটামিন ,প্রোটিন বিভিন্ন ধরনের খনিজ এই পুইশাক থেকেই পাওয়া যায়। এছাড়াও যাদের চোখের সমস্যা আছে বা চোখ ভালো রাখতে চাচ্ছেন তাদের জন্য পুইশাক খুবই উপকারী। কারণ এতে আছে বিটা ক্যারোটিন ও লোটেন। এই উপাদানগুলো চোখের জন্য খুবই ভালো। কারণ চোখের রেটিনার একটি অংশ হচ্ছে ম্যাকুলা আর এতে থাকে লোটেন। এই লোটেন অতিরিক্ত আলোর কুপ্রভাব থেকে চোখকে রক্ষা করে। এছাড়াও ম্যাকুলার ডিজেনারশনের হাত থেকেও আমাদের বাঁচায়। পুইশাকে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। আর এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্টের নাম হচ্ছে লিপয়িক এসিড। এই এন্টিঅক্সিডেন্ট রক্তের শর্করার মাত্রা কমায় পাশাপাশি ইনসুলিনের ভারসাম্য ধরে রাখে। পেরিফেরাল, নিউরোপ্যাথি এবং অটোনমিক নিউরোপ্যাথির সমস্যা কমায়।
পুঁইশাক শরীরের এনার্জি বাড়াতে সহায়তা করে
পুঁইশাকে থাকে ম্যাগনেসিয়াম। এটি এনার্জি বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। পুঁইশাকে ফলেট পাওয়া যায়। এটি এনার্জি উৎস। এটি খাবারকে এনার্জিতে রূপান্তরিত করে। তাছাড়ও পুঁইশাক হল ন্যাচারাল অ্যালকালাইন। এই উপাদান আমাদের তরতাজা ও এনার্জিটিক রাখতে সাহায্য করে থাকে। পুঁইশাক এজমা প্রতিরোধ করতে দারুণ কার্যকরী। যাদের এজমার সমস্যা আছে তারা অবশ্যই পুঁইশাক খাবেন। পুই শাকে যে বিটা ক্যারোটিন আছে। এই বিটা ক্যারোটিন এজমার হাত থেকে আমাদের রক্ষা করে। উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের জন্য প্রয়োজনীয় হচ্ছে পটাশিয়াম। পুঁইশাক পটাশিয়ামের খুবই ভালো উৎস। পটাশিয়াম ব্লাড প্রেসার কমায়, পটাশিয়াম শরীরে সোডিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। যাদের পরিবারের ক্যান্সারের ইতিহাস রয়েছে।
পুঁই শাকের উপকারিতা |
পুঁইশাক তাদের জন্য আর্শীবাদ স্বরূপ। সবুজ শাক সবজিতে থাকে ক্লোরোফিল। এই ক্লোরোফিল কারস্বজনিক প্রভাব আটকায়। এই কারণে যে কারস্বজনিকের প্রভাবে ক্যান্সার হয়। তাই পুঁইশাক খুবই উপকারী। এছাড়াও এর ফাইবার পাকস্থলী এবং কোলন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। পুঁইশাক ক্যান্সার দূরে রাখতে সক্ষম। তাই আপনার পরিবারে যদি ক্যান্সারের ইতিহাস থাকে বা আপনি যদি ক্যান্সারের হাত থেকে মুক্তি পেতে চান নিয়মিত খাদ্যতালিকায় পুঁইশাক রাখতে হবে। পুঁইশাকে হাড়ের জন্য অত্যন্ত উপকারী। আমাদের হাড় শক্ত করতে সাহায্য করে ভিটামিন কে। তাই নিয়মিত ভিটামিন কে শরীরে কম প্রবেশ করা মানে হাড়ের মজবুতি কমে যাওয়া। পুঁইশাক ভিটামিন কে এর খুবই ভালো উৎস। ভিটামিন কে হাড়ের মেট্রিক্স প্রোটিন উন্নত করে। ক্যালসিয়াম ধারণ ক্ষমতা বাড়ায়। পাশাপাশি ইউরিনে ক্যালসিয়ামের মাত্রা কমায়।
যারা হাড়ের বিভিন্ন রোগে ভুগছেন এবং হাড়ের শক্তি বাড়াতে চাচ্ছেন তারা পুঁইশাক খান। হজমে পুঁইশাক ভালো কাজ করে। বদহজম, গ্যাস ,এসিডিটির সমস্যা দূর করে এটি। এর ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থেকে আপনাদেরকে মুক্তি দিতে পারে। শরীর থেকে বজ্র খারাপ পদার্থগুলো বের করে দেয়। তাই যারা বদহজম, গ্যাস ,এসিডিটি বা কোষ্ঠ কাঠিন্য সমস্যায় ভোগেন তাদের অবশ্যই পুঁইশাক খেতে হবে। পুঁই শাকের পুষ্টিগুণ প্রচুর এতে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানোর উপাদান রয়েছে। পুঁইশাক চুলে ও ত্বকের জন্য খুবই ভালো। ভিটামিন এ রয়েছে এতে। ভিটামিন এ ত্বকের স্ক্যাল্পের তেল নিঃসরণকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং ত্বকের আদ্রতা ও মশ্চারাইজার ধরে রাখতে সাহায্য করে। পুঁইশাক ব্রণের জন্য অত্যন্ত উপকারী। অতিরিক্ত তেল বা সেবাম ভাব হলো ব্রণের কারণ। পুইশাক এই সেবাম নিঃসরণ কমায় তাই ব্রণ হয় না। ভিটামিন-সি ত্বকের কোলাজেনের জন্য ভালো। আর এই উপাদানটি রয়েছে পুঁইশাকে। যাদের পাইলসের সমস্যার রয়েছে তারা নিয়মিত পুঁইশাক খাবেন।
পুইশাক কোষ্ঠকাঠিন্য যেমন দূর করে তেমনি পাইলস, ফিস্টুলা ও হেমরয়েডের আশঙ্কা কমায়। এটি শরীরের যে কোনো প্রদাহ কমাতে দারুন ভূমিকা পালন করতে পারে। পুইশাকে আছে অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান তাই শরীরে কোনো প্রদাহ হলে বা ফুলে গেলে পুঁইশাকের শিখর বেটে প্রলেপ দিলে তাড়াতাড়ি কমে যায়। ফলে শরীরের যেকোনো জায়গায় যদি কাটা ছেঁড়া বা ব্যথার সমস্যা থাকে সেটি দূর করতে নিয়মিত পুঁইশাক খাবেন এবং পুঁইশাকের শেখর বেটে প্রলেপ লাগাতে ভুলবেন না। পুঁইশাক মাথাব্যথা কমাতে ও দারুন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যাদের নিয়মিত মাথা ব্যথা ও মাথা ঘোরার মত সমস্যা হয় পাশাপাশি মাইগ্রেনের সমস্যায় ভুগে থাকেন তারা পুই শাক খেলে ভালো উপকার পেতে পারেন। তো এই হচ্ছে বৈশাখের কিছু উপকারিতা। তবে পুঁইশাকের এই সমস্ত উপকারিতা দেখে ভুলে গেলে চলবে না কিছু কিছু রোগী ক্ষেত্রে এটি খুবই মারাত্মক। সবজি শরীরের জন্য খুবই দরকারি। তবে গবেষকরা জানাচ্ছেন পুঁইশাকের অন্যান্য গুণাবলী থাকলেও এটি যৌন ক্ষমতা হ্রাসে কাজ করে।
তাই যুবক বয়সে পুঁইশাক কম খাওয়াই ভাল। পাশাপাশি যাদের যৌন সমস্যা রয়েছে তারা খাদ্য তালিকা থেকে পুঁইশাক কমিয়ে দিন। পুঁইশাক অক্সালেট সমৃদ্ধ একটি খাবার এটি গ্রহণ করলে শরীরে তরল পদার্থে অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যায়। এর ফলে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। তার মধ্যে একটি সমস্যা হচ্ছে পুঁইশাক কিডনি রোগীদের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। পুইশাকে পিউরিন নামক উপাদান রয়েছে যা অতিরিক্ত গ্রহণের ফলে কিডনিতে পাথর হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এছাড়াও যাদের কিডনি রোগ রয়েছে তারা অবশ্যই পুঁইশাক খাওয়ার পূর্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত ।পুঁইশাকের এই অক্সালেট ও পুউরিন নামক পদার্থ গেঁটেবাত বা বাত ব্যথা রোগীদের জন্য মারাত্বক। আমরা সকলেই জানি ,ইউরিক এসিড বাড়াতে সাহায্য করে পিউরিন। আর এই পিউরিন পুঁইশাকে ভরপুর মাত্রায় পাওয়া যায়। আপনি যদি না জেনেবুঝে ভরপুর মাত্রায় পুই শাক খেতে থাকেন। তাহলে শরীরে পিউরিনের পরিমাণ বাড়বে। পিউরিনের পরিমাণ বাড়লে ইউরিক অ্যাসিড বাড়বে।
ইউরিক অ্যাসিড শুধুমাত্র আপনার গেটেবাত বা বাতের সমস্যাকে বাড়াবে তাই নয় পাশাপাশি আপনার কিডনিকে ড্যামেজ ও ধ্বংস করে দেয়ার জন্য দায়ী। তাই যাদের গেঁটেবাত বা গাটের সমস্যা রয়েছে তারা পুঁইশাক খাবেন না। আর যদি খেতেই হয় তাহলে খুবই সীমিত মাত্রায় খাবেন। পুই শাকের অক্সালেট পিত্ত রোগীদের জন্য ভালো নয়। এটি পিত্ত রোগীদের জন্য নানারকম সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে এমনকি পিত্তে পাথরের জন্য দায়ী। তাই যাদের পিত্তথলিতে পাথর আছে বা পিত্তের কোন সমস্যায় ভুগছেন তারা পুই শাক খাওয়ার পূর্বে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে একবার কথা বলুন। আর আপনি যদি পিত্তথলির পাথরের সমস্যা না ভুগতে চান তাহলে পুঁইশাক অবশ্যই সীমিত মাত্রায় খেতে হবে। নাহলে অতিরিক্ত মাত্রায় পুইশাক খেতে খেতে একসময় এটি আপনার কিডনি সমস্যা, পীত্বথলির সমস্যা এবং ইউরিক এসিডের সমস্যা বাড়িয়ে তুলতে পারে।
পুঁইশাক গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কমায়
এটি আমরা আগেই বলেছি। তবে আপনি যদি রাতে পুঁইশাক খান তাহলে এটি আপনার গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বাড়িয়ে তুলবে। এছাড়াও যাদের বাতের ব্যথা আছে তাদের তো রাতে পুঁই শাক খাওয়া চলবে না এবং যাদের খাবার খেলে গ্যাস্ট্রিক ও বদ হজমের মতো সমস্যা হয়। তারাও রাতে পুঁইশাক খাবেন না। মূলত এর জন্য দায়ী পুঁইশাকের অক্সালেট। তাই এটি রাতে গ্রহণ করলে শরীরে তরল পদার্থে অক্সাইডের পরিমাণ বেড়ে যায়। এর ফলে শারীরিক নানা রকম সমস্যার পাশাপাশি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যাও দেখা দিতে পারে। পুঁইশাক খাওয়ার উত্তম সময় হচ্ছে দুপুরবেলা। তবে অনেক বেশি রান্না করে খেলে এর পুষ্টিমান নষ্ট হয়ে যায়। তাই পুঁইশাক রান্না করার সময় এটিকে ভাপে সেদ্ধ করে হালকা তেলে ভেজে খেতে পারেন। পুঁইশাক রান্না করার সময় যদি অতিরিক্ত সময়ে ভাজাভাজি করে রান্না করেন তাহলে এর পুষ্টিমান নষ্ট হয়ে যাবে।