বিশ্বের অন্যান্য গ্রোয়িং টেকনোলজির মতো মোবাইল নেটওয়ার্ক টেকনোলজিও প্রতিনিয়তই আপডেট হচ্ছে।আর এই আপডেটের অংশ হিসেবেই ফিপ্থ জেনারেশন বা 5G ডেটা নেটওয়ার্ক বিশ্বব্যাপী ইন্টারনেটকে রেভুলেশনাইজ করে যাচ্ছে। একটি স্ট্যান্ডার্ড 4G কানেক্টিভিটি সর্বোচ্চ 100 M bps স্পিড অফার করতে পারে। যেখানে 5G বেটা সীপ্ড 10 Gbps পর্যন্ত পৌঁছাতে সক্ষম যা 4G থেকে প্রায় ১০০ গুন ফার্স্টার । এর পাশাপাশি ফোরজি নেটওয়ার্ক একটি কমান্ড রেসপন্স টাইম যেখানে ৫০ মিলি সেকেন্ড সেখানে ফাইভ-জি ১ মিলি সেকেন্ডের কম সময়ে একই কমান্ডের রেসপন্স করতে সক্ষম। সাউথ কোরিয়া থেকে শুরু করে চায়না ,জাপান, ইউএসএ, ইউকে সুইজারল্যান্ড এবং ফিলিপাইনের মতো দেশগুলো ইতোমধ্যে ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক ব্যবহার করছে। এর পাশাপাশি ভারত এবং অস্ট্রেলিয়ার মতো বেশ কয়েকটি দেশ নিজেদের 5G নেটওয়ার্ক ইন্ফারস্টারকচার তৈরি করছে। সম্প্রতি ২০২১ সালের ১২ ই ডিসেম্বর বিটিআরসি ঢাকা রেডিসন ব্লু হোটেল রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন মোবাইল অপারেটর টেলিটকের সাথে কলাবরেশনে বাংলাদেশীয় 5G নেটওয়ার্কের ইনিশিয়াল লঞ্চ শুরু করে।
মূলত দেশীয় কিছু মোবাইল অপারেটরের হাত ধরেই ২০০০ এর দশকে বাংলাদেশে মোবাইল ইন্টারনেট এর যাত্রা শুরু হয়। যদিও সে সময় গুলো কোম্পানি গুলো সেকেন্ড জেনারেশন জিপিআরএস এবং ইডিজিই ইন্টারনেট প্রভাইট করতে যার সীপ্ড ছিল খুবই স্লো। এছাড়া ঐ সময় মোবাইল ইন্টারনেট ইউজারের সংখ্যা ছিল খুবই কম। যার মূল কারণ ছিল গ্রামীণ এরিয়ার নেটওয়ার্কে আনএভিলিটি, হাই কোর্ট, দূর্বল সার্ভিস, যথাযথ ইনফ্রাস্ট্রাকচার অভাব এবং স্মার্টফোন ইউজারের সল্পতা।২০১২ সালের ১২ই অক্টোবর মোবাইল অপারেটর টেলিটকের প্রথম থ্রিজি সার্ভিস লঞ্চ করার মাধ্যমে বাংলাদেশে হাই স্পিড ইন্টারনেটের যুগ শুরু হয়। এরপর অন্যান্য মোবাইল অপারেটররা থ্রিজি সার্ভিস লঞ্চ গুলো প্রতিনিয়ত এই ইন্টারনেট পেনিট্রেশন রেত বাড়তে থাকে। BTRC একটি তথ্য সূত্রে ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মোবাইল ইন্টারনেটে সাবস্ক্রাইবারের পরিমাণ ছিল প্রায় তিন কোটির কাছাকাছি। যা ২০১৮ সালের জানুয়ারি মাসে সাড়ে সাত কোটিতে পৌঁছায়। ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে বাংলাদেশের 4G ইন্টারনেট ইন্টিরিডিউস করা হলে মোবাইল ইন্টারনেটে ইউজার আরো বাড়তে থাকে। যার প্রেক্ষিতে ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে ইউজার সংখ্যা প্রায় ১২ কোটিতে পৌঁছায়। বাংলাদেশ 3G এবং 4G সার্ভিস চালু করার পেছনে চাইনিজ মাল্টিন্যাশনাল টেকনোলজি করপরেশন HUAWEI এর উল্লেখযোগ্য কন্ট্রিবিউশন ছিল।
বাংলাদেশে 5G |
TBS news এর একটি তথ্যসূত্রে বিগত একুশ বছরের বেশি সময় ধরে Huawei বাংলাদেশের আইসিটি ইন্ডাস্ট্রি টেলিকম অপারেটর এবং লোকাল প্যাটনারদের সাথে কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া রবি, এয়ারটেল এবং গ্রামীণফোনের মতো মোবাইল অপারেটরদের 2G, 3G এবং 4G নেটওয়ার্ক ইনফ্রাস্ট্রাকচারের পাশাপাশি টেকনোলজিক্যাল ইকুইপমেন্ট প্রোভাইড করে আসছে Huawei। অন্যদিকে মোবাইল ইন্টারনেটের এবিলিটি বাড়তে থাকলে সোশ্যাল মিডিয়া এবং আডিও ভিডিও কলের মাধ্যমে মানুষের মাঝে কমিউনিকেশন বাড়তে থাকে। বিকাশ,নগদ এবং অন্যান্য মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিস এবং ফিনটেক প্ল্যাটফর্ম গুলো আর্কষণ পেতে শুরু করে। এছাড়া দারাজ, চালডাল, রকমারি, বাগডুমের মতো ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম গুলো জনপ্রিয় হতে শুরু করে। হাই স্পিড মোবাইল ইন্টারনেটের ফলে নেটফ্লিক্স, বঙ্গ, বায়োস্কোপের, ট্রফির মতো লোকাল এবং ইন্টার্নেশনাল OTT প্ল্যাটফর্ম গুলো ম্যাসিভ ইউজার বেস পেতে সক্ষম হয়। তবে বর্তমানে মোবাইল ইন্টারনেটের লেটেস্ট ভার্সন ফাইভ-জি গ্লোবালি ইন্ট্রিডিউস করা হয়েছে।The Daily Star এর একটি তথ্যসূত্রে ২০২০ সালে বিশ্বেব্যাপী ৭০০টি টেলিকম অপারেটরের মধ্যে ১৮০টি অপারেটর নিজেদের 5G সার্ভিস লঞ্চ করেছে। বর্তমানে বিশ্বব্যাপী ১বিলিনিয়নের বেশি ইউজার 5G নেটওয়ার্কে ব্যবহার করছে যা ২০২২ এসে আরও বেড়ে ২.৫ পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাংলাদেশে দীর্ঘ সময় ধরে 5G ইন্টারনেটের যুগে প্রবেশ করতে চাইছে এবং সম্প্রতি 5G নেটওয়ার্ক স্রফ লঞ্চও করেছে।
Financial Express এর একটি তথ্য সুত্রে ২০১৮ সাল থেকেই BTRC এই প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। সেই বছর প্রতিষ্ঠানটি Huawei এর সাথে একটি ট্রায়াল রান করে। যেখানে রবি মোবাইল অপারেটর হিসেবে অংশগ্রহণ করে। পরবর্তীতে ২০২০ সালে Huawei ডিজিটাল বাংলাদেশ মেলাতে অংশগ্রহণ করে। যেখানে Huawei প্যাভিলিয়নে ভিজিটররা ফ্রিতে গিগাবিট স্পিডে 5G ইন্টারনেট এক্সপেরিয়েন্স করার সুযোগ পায়। এর পাশাপাশি কোম্পানিটি একটি রোবট এক্সিভিশনের ব্যবস্থা করে যেখানে হ্যান্ড জেস্টার কমান্ড ফলো করে একটি ইন্টারেক্টিভ হিউম্যানেয়েড রোবট স্কার খেলতে পারত। এই ইভেন্টের মাধ্যমে মানুষ এবং মেশিন এর মধ্যকার কমিউনিকেশন 5G টেকনোলজির মাধ্যমে কতখানি উন্নত হবে তার শোকেস করে। অ্যাডভান্স টেকনোলজি ইকুইপমেন্ট এবং ইনফ্রাস্ট্রাকচারের কারণে গ্লোবাল 5G নেটওয়ার্ক ডেভলপমেন্ট প্রায় ৩০০০ 5G টেকনোলজি পেটেন্ট নিয়ে Huawei বর্তমানে মার্কেট লিড করছে। 5G সফট লঞ্চের ঠিক কয়েক মাস আগে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন মোবাইল অপারেটর টেলিটকের অফিসে Huawei এবং টেলিটক মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষর হয়। টেলিটকের সাথে Huawei একযোগে ঢাকার বেশ কিছু এলাকায় 5G নেটওয়ার্ক টেস্ট রান করে। যেখানে সিঙ্গেল ইউজারের ক্ষেত্রে ১.৫জিবিপিএস ইন্টারনেট স্পীড এবং ৭ থেকে ১০ মিলি সেকেন্ডে লাইটেনসি রেকর্ড করা হয়। শেষ পর্যন্ত ২০২১ সালের ১২ ই ডিসেম্বর বিটিআরসি 5G এর সফট লঞ্চ করতে সফলভাবে সক্ষম হয়।
চুক্তি অনুযায়ী Huawei টেলিটককে প্রয়োজনীয় চিপ সেট, সফটওয়্যার, ডিভাইস প্রোভাইড করে।এক সংবাদ সম্মেলনে মিনিস্ট্রি অফ পস্ট অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশন ডিভিশন এনাউন্স করে প্রাথমিকভাবে বাংলাদেশ ন্যাশনাল পার্লামেন্ট থেকে শুরু করে বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট, প্রাইম মিনিস্টার অফিস ,ধানমন্ডি ৩২ ,ন্যাশনাল র্মাটিস মেমোরিয়াল এবং গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় এরিয়া গুরতে 5G সার্ভিস পাওয়া যাবে। ইনিশিয়ালি যেসকল ইউজারদের 5G এনএবেলট ডিভাইস রয়েছে তাদের টেলিটক 4G সিমটি 5G নেটওয়ার্কে কনভার্ট করার মাধ্যমে এই টেলিকম সার্ভিসটি ব্যবহার করতে পারবে । ইতোমধ্যে বাংলাদেশ সরকার টেলিটকের জন্য ফ্রিতে ৬০ মেগাহার্টজ স্পেকট্রাম বরাদ্দ করেছে এবং অন্যান্য মোবাইল অপারেটরদের জন্য ২০২২ সালের মার্চ মাসে একটি 5G স্পেক্ট্রাম অপশন অরগানাইজ করার পরিকল্পনা করেছে। একই মাসেই দেশে তৈরি 5G এনেবেল ফোনগুলো বাজারে আনার পরিকল্পনা করছে সরকার। Dhaka Tribune এর একটি তথ্যসূত্রে টেলিটক ইতোমধ্যে ফাইভ-জির জন্য পাঁচটি সাইটও তৈরি করেছে। নতুন এই 5G প্রযুক্তির ফাস্টার ইন্টারনেটে দেশের মানুষের দৈনন্দিন জীবনে এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে আরও পজেটিভ ইম্প্যাক্ট ফেলবে।ইউজাররা পূর্বের তুলনায় একে অপরের সাথে ফাস্টার কমিউনিকেট করতে পারবে । এছাড়া ইন্ডিভিজুয়াল লেভেলে ইন্টারটেইনমেন্ট এবং গেমিং এর ক্ষেত্রে 5G নেটওয়ার্ক রেভিলিউশন নিয়ে আসবে। গেমিং ইন্টাজিয়েস্টা 5G নেটওয়ার্কের ফলে হাইয়ার ইন্টারনেট স্পিড এবং লোলেন্টসির কারণে সিমলেস গেমিং এক্সপেরিয়েন্স পাবে।
এছাড়া AR, VR এর ব্যবহারে অনলাইন গেমিং এক্সপেরিয়েন্স ইনহেন্স হবে। ইন্টারটেইনমেন্ট এবং গেমিংএর পাশাপাশি ইট টেক ইন্ডাস্ট্রিও 5G ইন্টারনেটের কারণে বেশ গ্রো করবে। সাধারণ স্টুডেন্টরা লোকাল ইট টেকের পাশাপাশি ইন্টারন্যাশনাল প্লাটফর্মে গুলো সহজে ব্যবহার করতে পারবে। এবং টোটাল এডুকেশন সিস্টেম একটি পজিটিভ ইমপেক্ট লক্ষ করা যাবে। এর পাশাপাশি মেটাভার্সের মতো আপকামিং টেকনোলজি যার ব্যবহারের হাই সীপ্ড ইন্টারনেট দরকার 5G এর কারণে সেগুলো ব্যবহারও বেশ সহজ সিমলেজ হয়ে ওঠেবে। দেশি ও ইন্টারন্যাশনাল OTT প্লাটফর্ম গুলো আর ফর্মূলা সহজে ব্যবহার সাধারণ জনগণের মধ্যে আরও বৃদ্ধি পাবে। বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে দুর্বল ইনফ্রাস্ট্রাকচারে কারণে যেহেতু এখনও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেভাবে পৌঁছায়নি। সেসকল এলাকাগুলোতে 5G ইন্টারনেট প্রভাইড করা গেলে সেখানকার মানুষজন অনলাইন বেস্ট সার্ভিসগুলোর সাথে সহজেই যুক্ত হতে পারবে।5G টেকনোলজি ইম্পলিমেনটেশনেরপর অনান্য সকল ইন্ড্রাস্ট্রি মধ্যে হেলথ কেয়ার সেক্টরটি সবচাইতে বেশি লাভবান হবে। এমন কী এই টেকনোলজিটি পুরো হেলথ কেয়ার ইন্ডাস্ট্রিকে পরিবর্তন করে মতো দেওয়ার পটেনশিয়াল রয়েছে।২০১৯ সালে চীন প্রথমবারের মতো সফলভাবে মানুষের মস্তিষ্কে 5G বেসড ব রিমোটর সার্জারি সম্পন্ন করতে সম্পন্ন করতে সক্ষম হয়। বাংলাদেশের হেলথ কেয়ার সেক্টরে 5G টেকনোলজি যুগান্তকারী ভূমিকা রাখতে পারে। ইমারজেন্সি সিচুয়েশন দেশের গ্রামাঞ্চলের মেডিকেল সার্ভিস প্রভাইড করা এখনও বেশ কষ্ট সাধ্য একটি কাজ। যদিও বাংলাদেশে বেশ কিছু অ্যাপ ভিত্তিক মেডিকেল সার্ভিস প্রোভাইডার রয়েছে।
আরও পড়ুন - ফাইভজি নেটওয়ার্ক কি ?
কিন্তু ইন্টারনেট সীপ্ড ভিত্তিক সমস্যার কারণে গ্রামাঞ্চলের এই অ্যাপ গুলো মাধ্যমে সঠিকভাবে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা অনেক ক্ষেত্রেই দূরহ। তবে 5G নেটওয়ার্কের মাধ্যমে দেশের এই হেলথ কেয়ার প্ল্যাটফর্ম গুলো আরো দ্রুত এবং ইফিশিয়ান্টলি এক্সজিস্টিং সার্ভিস প্রভাইড করার পাশাপাশি নতুন কিছু সার্ভিস সিস্টেমও যুক্ত করতে পারবে। এছাড়া দেশের শিপিং পোর্ট এবং আর এম জি সেক্টরে ইন্ড্রাস্ট্রেশিয়াল ওপারেশন ও মেইনটেনেন্স 5G এনএবেল এলেক্ট্রাইক্যাল ইকুইপমেন্ট এবং মেশিনারি ব্যবহার ইফিশিয়ানশি নিয়ে আসতে পারে। এর পাশাপাশি ব্যক্তিগত এবং কর্মাশিয়াল সিক্রউরিটি সার্ভেলেন্সের কাজে 5G টেকনোলজি আরো এফিশিয়ান্সি নিয়ে আসবে।ইন্ডিভিজুয়াল এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল লেভেলে 5G টেকনোলজি ইম্প্লেমেন্ট সম্পন্ন হওয়ার পরে একটি স্মার্ট ইকোসিস্টেম বা ডিজিটাল সোসাইটি বা স্মার্ট সিটির ফ্রেমওয়ার্ক বাস্তবায়ন হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। হোম ইউজ গেজেট থেকে শুরু করে প্যান্সনাল ভেইকল এবং দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত সকল সার্ভিস ডিজিটালই ইন্টার কানেক্টেড হবে। যা ভবিষ্যতে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলের দিকে স্মার্ট সিটির এগিয়ে যেতে সহায়তা করবে। Huawei বাংলাদেশের চীফ টেকনোলজি অফিসার Kevin Xu এর মতে থ্রিজি এবং ফোরজি নেটওয়ার্ক এডাপশনের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনে যেমন প্রভাব পড়েছিল। এই ফাইভ-জি নেটওয়ার্ক অ্যাডাশনের পরে সাধারণ মানুষের পাশাপাশি বাংলাদেশের ওভারওল ইকোনমিতে ব্যাপক পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাবে।