এফ আই সিস্টেম কি

বর্তমানে সব বাইক গুলোতে এফ আই সিস্টেম ব্যবহার করা হচ্ছে ,মানে যার পুরো অর্থ হল ফুয়েল ইনজেকশন সিস্টেম । যেখানে আগে কার্বোরেটর  ব্যবহার করা হতো , কিন্তু কেন? কার্বোরেটরে আগে কিসের সমস্যা হতো যার জন্য বর্তমানে সবগুলোতেই এফ আই সিস্টেম  ব্যবহার করা হচ্ছে ? তো বন্ধুরা আজকে আমরা এই ভিডিওতে বাইকের এফ আই সিস্টেম কীভাবে কাজ করে এবং বর্তমানে সব  বাইকে গুলোতে কার্বোরেটরের পরিবর্তে কেন এফ আই সিস্টেম ব্যবহার করা হয়  সেই ব্যাপারে একটু বিস্তারিত ভাবে জানব। তাই ভিডিওটি সম্পূর্ণ অবশ্যই দেখুন।


বন্ধুরা প্রথমে একটু হালকা করে দেখে নেয়া যাক কার্বোরেটর কিভাবে কাজ করে। কার্বোরেটরে কাজ হল বাইকের সিলিন্ডারের ভিতরে বাতাস এবং জ্বালানিটা পৌঁছে দেওয়া। যেমন কোন উনান জ্বালার জন্য কাঠ দিয়ে বাতাস করতে হয়‌। ঠিক তেমনি ইঞ্জিন চলার জন্য ইঞ্জিনে ভিতরে জ্বালানি এবং বাতাসটা পৌঁছে দিতে হয়, আর সেই কাজটা করে কর্বোরেটর। এই কাজটি কিভাবে করে সেটা একটু সংক্ষেপে বলি, ফোর স্ট্রোক ইঞ্জিনে ইঞ্জিনের  সিলিন্ডারে মাথায় দুটো ভাল্ভ থাকে। একটাকে বলা হয় ইনটেক ভ্যাল্ভ আরেকটা বলা হয় এগস্ট ভাল্ভ। একটা দিয়ে বাইরে বাতাস এবং পেট্রোল সিলিন্ডারের ভিতরে প্রবেশ করে যেটাকে বলা হয় ইনটেক ভাল্ভ। তারপর  সেটা সেখানে জ্বলার পর আরেকটা ভাল্ভ দিয়ে ধোঁয়া ব গ্যাসটা বেরিয়ে যায় আর যেটাকে বলা হয় এগজস্ট ভ্যাল্ভ


ইয়ামাহ ফেজার ও এফ জেড ভার্সন ২ এর এফ আই সিস্টেম,আফ আই সিস্টেম কিভাবে কাজ করে,এফ আই,বাইকে fi সিস্টেম কিভাবে কাজ করে,suzuki জিক্সার এবিএস এফ আই bs6,বাইকের এবিএস সিস্টেম কিভাবে কাজ করে,সুজুকি জিক্সার এস এফ,#আইএপআইসিহোমলোন,যে কারনে মাইলেজের সেরা ইয়ামাহা ফেজার ও এফ জেড ভার্সন ২,কারেন্টের কাজ,এফ আই আমার পাগলা ঘোড়া রে কুদ্দুস বয়াতি পানকৌড়ি ক্যাফে মধু সিটি ফুড কোর্ট madhu city food court,ফেইসবুক,রিং আইডি,এফডিআর রেট,আইনের গল্প,গুগল কন্টাক্ট,ফেসবুক একাউন্ট
এফ আই সিস্টেম


যখন বাইরের বাতাসটা সিলিন্ডারের ভিতরে ঢুকার সময় হয়, তখন এই ইনটেক ভ্যাল্ভটা খুলে গিয়ে পিস্টোনটা নিচের দিকে সরে যায়। যার ফলে সেখানে একটা বাতাসের শূন্যতা সৃষ্টি হয়‌। সেই সময় সিলিন্ডারের সবদিক থেকেই বন্ধ থাকে‌। শুধু  এই একমাত্র ইনটেক ভ্যাল্ভটা খোলা থাকে। যার ফলে সেখানে সেই বাতাসের শূন্যতা  পূরণ করার জন্য বাইরে বাতাস ইনটেক ভ্যাল্ভ দিয়ে প্রবল গতিতে সিলিন্ডারের ভেতরে ঢুকতে থাকে ,কারণ এটাই বাতাসা নিয়ম। কোন জায়গায় যদি বাতাসের শূন্যতা সৃষ্টি হয়, সেখানকার সেই শূন্যতাটা  পূরণ করার জন্য আশেপাশের বাতাস সেই স্থানের সজোরে ছুটে যায়। আর সিলিন্ডারের ভিতরে ঠিক তাই পিস্টোনটা নিচে সরে যাওয়ার ফলে, সিলিন্ডারের ভিতরে বাতাসের শূন্যতা সৃষ্টি হয়।


আর সেই শূন্যতা  পূরণ করার জন্য বাইরের বাতাস কার্বোরেটর হয়ে ইনটেক ভাল্ভে মধ্যে দিয়ে সিলিন্ডারের ভেতরে সজোরে প্রবেশ করতে থাকে। আর তখন কার্বোরেটর  কি করে ঐ ছুটন্ত বাতাসের মধ্যে ফোটা ফোটা আকারের পেট্রল ছিটিয়ে দেয়। আর তখন কি হয় ছুটন্ত বাতাসের ধাক্কায় ঐ ফোটা ফোটায আকারের পেট্রোল গুলো ভেঙে গিয়ে এবং বাতাসের সাথে মিশে গিয়ে সিলিন্ডারের মধ্যে প্রবেশ করে। তারপর ঐ ইনটেক ভ্যাল্ভটা  বন্ধ হয়ে গিয়ে ইগনেশিয়াস পাইপ দিয়ে স্পার্ক করে সেটাকে  জ্বালিয়ে দেওয়া হয় ,তখন  ইঞ্জিন চলার শক্তি পায়।


তারপর এগজস্ট ভ্যাল্ভটা খুলে যায় ধোয়া এবং দূষিত গ্যাসটা বাইরে বেরিয়ে যায়। আবার ওটা বন্ধ হয়ে গিয়ে আবার ইনটেক ভ্যাল্ভটা খুলে যায়। আবার সেই প্রক্রিয়া দ্বিতীয়বার ফিরে আসে। এইভাবে অনবরত চলতে থাকে। এভাবেই কাজ করে বাইকের কার্বোরেটর। মানে কার্বোরেটরের মেইন কাজ হল ছুটন্ত বাতাসের মধ্যে পরিমাণ মতো পেট্রোল ফোঁটা ফোঁটা আকারের  ছিটিয়ে দেওয়া।  ইঞ্জিন ভালোভাবে চলার জন্য এই পেট্রোল এবং বাতাসের মিশ্রণটা আবার উল্টো পাল্টা হলে চলবে না। এরও একটা নির্দিষ্ট মাপ রয়েছে যেটা হল ১২:১-১৪.৭:১।  মানে পেট্রোলের পরিমাণ যদি ১ হয় তাহলে বাতাসের পরিমাণ ১২-১৪.৭ হতে হবে। এই মাত্রায় পেট্রোলটাকে বাতাসের সঙ্গে মেশাতে হবে তাহলে ইঞ্জিনটা ভালোভাবে চলতে পারবে। এই মাত্রায় আবার  দুই ভাগে ভাগ করা হয় , একটাকে বলা হয় লিন মিস্কচার আরেকটাকে বলা হয় রিচ মিক্সচার। পেট্রোলের পরিমাণ যদি ১ হয় এবং বাতাসের পরিমাণ যদি ১২ কাছাকাছি হয় তাহলে সেখানে পেট্রোল বেশি যাচ্ছে তাই সেটাকে বলা হয় রিচ মিক্সার। এই সময় আপনি পারফরমেন্স ভাল পাবেন কিন্তু মাইলেজ কম পাবেন। আবার পেট্রোলের পরিমাণ যদি ১ এবং বাতাসের পরিমাণ ১৪ কাছাকাছি হয় তখন সেখানে পেট্রোল কমে যাচ্ছে তাই সেটাকে লিন মিক্সার বলা হয় মানে পাতলা মিক্সার ।রিচ মিক্সারের  তুলনায় এখানে বাতাস বেশি থাকে তাই এটাকে লিন মিক্সার বলা হয়। তখন আপনি মাইলেজ ভাল পাবেন কিন্তু পারফরম্যান্স ভালো পাবেন না। আর কার্বোরেটরের মধ্যে মিক্সারটাকে সেট করার জন্য দুটো নাট থাকে, একটা বাতাসের জন্য আরেকটা পেট্রোল এর জন্য। এই নাট গুলো পাকিয়ে আপনি রিচ মিক্সার অথবা লিন মিক্সার মধ্যে যেকোন একটা করে রাখতে পারবেন। আর যেটাকে আমরা কার্বোরেটর টিউন করা বলে থাকি। অনেকে এটাকে আবার লোকাল ভাষায় টিল বাঁধাও বলে থাকে।


এখানে যদি আপনি মাইলেজ ভালো পেতে চান তাহলে কার্বোরেটরটা লিন মিস্কার টিউন করেতে  হবে তখন আপনি মাইলেজ ভাল পাবেন কিন্তু পারফরম্যান্স একটু খারাপ পাবেন। আবার যদি আপনি পারফরম্যান্স  ভাল পেতে চান তাহলে কার্বোরেটরটা  রিচ মিক্সচার টিউন করতে হবে তখন আপনি পারফরম্যান্স ভাল পাবেন কিন্তু মাইলেজ একটু খারাপ পাবেন। এখানে আপনি পারফরম্যান্স কিংবা মাইলেজের মধ্যে যেকোনো একটা নিতে পারবেন, মানে একটা নিলে আরেকটাকে ত্যাগ করতে হবে।



কিন্তু সমস্যা হল আমরা যখন বাইক চালাই তখন বাইকের পরিস্থিতি অনুযায়ী রিচ মিক্সার এবং লিন মিক্সার দুটোরই প্রয়োজন পড়ে। আপনি যদি বাইকের এক্সেলেটর হঠাৎ করে টানেন অথবা বাইকটা নিয়ে যদি কোন উঁচুতে উঠতে যান তখন ইঞ্জিনিয়ার রিচ মিক্সারের প্রয়োজন হয়। আবার আপনি যদি কোন হাইওয়ে দিয়ে এক্সেলেটর দিয়ে বাইক চালান তখন আর রিচ মিক্সারের প্রয়োজন হয় না তখন হলে লিন মিক্সার হলে যথেষ্ট। আর কার্বোরেটরের যেহেতু যেকোনো একটাকে  ফিক্সড করে রাখতে হয় ,তাই বাইকের পরিস্থিতি অনুযায়ী কার্বোরেটর আলাদা আলাদা মিক্সার প্রোভাইড  করতে পারে না। যার ফলে কার্বোরেটরের রিচ মিক্সারে টিউন করে রাখলে হাইওয়েতে চলার সময় অনেক পরিমান পেট্রোল অপচয় হয়। তাই এই পেট্রোল অপচয় বন্ধ করার জন্য নিয়ে আসা হয়েছে ফুয়েল ইনজেকশন সিস্টেম।


ফুয়েল ইনজেকশন সিস্টেমে সিলিন্ডারের ভিতর জ্বালানিটা পাঠানোর জন্য আলাদা করে একটা পাম্প একটা  ইঞ্জেক্টার ব্যবহার করা হয়। ইঞ্জেক্টার মানে তরল পদার্থকে যে বিন্দু বিন্দু আকারে বার করতে পারে সেটাকে ইঞ্জেক্টার বলা হয়। যেমন ডাক্তারের ইনজেকশনও একটা ইঞ্জেক্টার। এই সিস্টেমেও ঐ ইনজেকশনের মত একটা ইঞ্জেক্টার ব্যবহার করা হয়। আর যেটাকে চালানোর জন্য একটা পাম্প ব্যবহার করা হয়। মানে ঐ পাম্পের দ্বারা ফুয়েল টাঙ্ক থেকে ফুয়েলটাকে পাম্প করে এই ইঞ্জেক্টরের  মধ্যে দিয়ে সিলিন্ডারের ভিতরে পাঠানো হয় এবং এদেরকে কন্ট্রোল করে ইসিইউ। ফুয়েল ইঞ্জেকশন  সিস্টেমের ইসিইউ ব্যবহার করা হয়, মানে যার পুরো অর্থ হলো ইলেকট্রনিক কন্ট্রোল কন্ট্রোল ইউনিট বা ইঞ্জিন কন্ট্রোল ইউনিট। যার মধ্যে বেশকিছু সেন্সর লাগানো থাকে যেমন বাতাস ঢোকার মুখে একটা সেন্সর লাগানো থাকে, ধোঁয়া বার হওয়ার মুখে একটা সেন্সর লাগানো থাকে এরকম আরো বেশকিছু সেন্সর লাগানো থাকে। যে সেন্সর গুলো দ্বারা ইসিইউ বুঝতে পারে যে বাইকটা কোন পরিস্থিতিতে আছে এবং সেই পরিস্থিতি অনুযায়ী ইঞ্জেক্টরকে কত পরিমাণ ফুয়েল ইঞ্জিনের ভেতরে পাঠাতে হবে সে আদেশটা দেয়। তখন এই ইসিইউ আদেশ মত ইঞ্জেক্টর সেই পরিমাণ পেট্রোল  ইঞ্জিনের মধ্যে স্প্রে করে দেয়। ইসিইউ ইঞ্জেক্টরকে বলে দেয় কখন লিন মিক্সার দিতে হবে এবং কখন রিচ মিক্সার দিতে হবে। মানে আপনি যখন হঠাৎ করে এক্সেলেটার টানবেন বা হঠাৎ করে উঁচু জায়গায় উঠবেন তখন এই এফ আই সিস্টেম আপনার ইঞ্জিনের রিচ মিক্সার পাঠাবে। আবার আপনি যদি হাইওয়েতে এক্সেলেটর ধরে রাখেন তখন এই এফআই সিস্টেম আপনার ইঞ্জিনে লিন মিক্সার পাঠাবে। মানে বাইকের পরিস্থিতি অনুযায়ী ইঞ্জিনে যেটা প্রয়োজন ঠিক সেটাই পাঠাবে। যার ফলে বাইকে পারফরম্যান্সও ভালো থাকবে এবং মাইলেজও ভালো পাওয়া যাবে।


যদি এইটা আপনি কার্বোরেটর দিয়ে করতে চান তাহলে কি করতে হবে? তাহলে পিছনে একজনকে স্ক্রু ড্রাইভার দিয়ে বসিয়ে রাখতে হবে এবং তাকে পরিস্থিতি অনুযায়ী কার্বোরেটরের নাট পাকিয়ে টিউন করতে বলতে হবে। মানে আপনি যদি একটু উঁচু দিকে উঠতে চান তখন তাকে বলতে হবে "ভাই এবারে  উপরের দিকে  কার্বোরেটরটাকে রিচ মিক্সারে টিউন কর"। আবার সামনে যদি হাইওয়ে আসে তাহলে তাকে বলতে হবে "ভাই এবারে সমান রাস্তা আসছে ওটাকে লিন মিক্সার  টিউন কর"। এরকম যদি করতে থাকেন এফ আই সিস্টেমর প্রয়োজন নেই। কিন্তু আপনিই বলুন এরকম করাটা কি সম্ভব। তাই এই কারণেই বর্তমানে বেশিরভাগ বাইক গুলোতেই কার্বোরেটরের পরিবর্তে এফ আই সিস্টেম  ব্যবহার করা হচ্ছে। যদি এর ডিসআ্যডভানটেজ  কথা বলা হয়, তাহলে এর দুটো ডিসআ্যডভানটেজ  রয়েছে। একটা হল কার্বোরেটর থেকে মেইনটেইনেস কস্ট অনেক বেশি।     আর দ্বিতীয় হল বর্তমানে সব জায়গায় এটা সারানোর মতো মেকানিক পাওয়া যায় না, তাই এই সিস্টেম থাকলে আপনার হয়তো একটু অসুবিধা হতে পারে। যদি এগুলো ছেড়ে দেন তাহলে কার্বোরেটরের থেকে এটা অনেক ভালো।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন