বিটকয়েন মাইনিং কি? কিভাবে বিটকয়েন মাইনিং করে ?

আমাদের আজকের লেখার টপিক বিটকয়েন মাইনিং। তবে এই মাইনিং বলতে আমরা প্রাকৃতিক খনিতে মাইনিংএর কথা বোঝাছি না‌। এটি একটি অন্য ধরনের মাইনিং বিশ্বজুড়ে মানুষকে কোটিপতি করে তুলছে। হ্যাঁ লেখক বন্ধুরা  আপনারা ঠিকই আন্দাজ করেছেন আজকের লেখাতে  আমরা বিটকয়েন মাইনিং সম্পর্কে কথা বলতে যাচ্ছি। আপনারা কি সম্প্রতি আইসল্যান্ডের বিটকয়েন মাইনিং সম্পর্কে শুনেছেন?হাই স্টেক  বিটকয়েন মাইনিং এর জগতে আইসল্যান্ড কেন হঠাৎ করে একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম হয়ে উঠল? এর পিছনে কি কারণ থাকতে পারে বলে আপনার মনে হয়? হয়ত বা নরডিক দেশে যে অসভাবিক বড় মাপের সেব ক্লাস্টার পাওয়া গেছে সেখানেই এই প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে আছে। আইসল্যান্ডের এই বিশাল বিটকয়েন মাইনিং সম্পর্কে আরও তথ্য জানতে চাইলে লেখাটি শেষ পর্যন্ত পড়ার জন্য অনুরোধ রইল।

বিশ্বের প্রথম বাস্তব বিটকয়েন লেনদেন হয়েছিল এক দশক আগে - সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে, ৩ জানুয়ারী, ২০০৯ সালে ৷ লাজলো হ্যানিয়েজ নামের এক ব্যক্তি ১০ হাজার বিটকয়েন ব্যবহার করে পাপা জনস থেকে দুটি বড় আকারের পিজ্জা কিনেছিলেন ৷ তখন ১০ হাজার বিটকয়েনের মূল্য ছিল মাত্র ৪০ ডলার। বিষয়টি কি অদ্ভুত তাইনা?  যদি তিনি সেই বিটকয়েনগুলো দিয়ে পিজ্জা না কিনে রেখে দিতেন তাহলে সেই ১০ হাজার বিটকয়েনের মূল্য এখন ২৮০ মিলিয়ন ডলারের বেশি হতো। এখন এটি অনেক টাকা এবং এই কারনে সেই পিজ্জা দুটিকে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল পিজ্জা বলা হয়ে থাকে।​বিটকয়েন এক ধরনের ইলেকট্রিকাল মুদ্রা। সাতোশি নাকামোতো নামের এক রহস্যময় ব্যক্তি কিংবা একটি গ্রুপ প্রথম বিটকয়েন তৈরি করেছিল। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৬,৫০০ টিরও বেশি ক্রিপ্টোকারেন্সির খোঁজ পাওয়া গিয়েছে। এদের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয়, অত্যন্ত নির্ভরযোগ্য এবং বিনিয়োগকৃত ক্রিপ্টোকারেন্সি হল বিটকয়েন । অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সির মতো এটিও কম্পিউটার এ গণিত এবং পরমমান ব্যবহার করে বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তৈরি করা হয়।


বিটকয়েন মাইনিং,বিটকয়েন মাইনিং,বিটকয়েন,বিটকয়েন মাইনিং মোবাইলে,বিটকয়েন মাইনিং করা যায়,বিটকয়েন মাইনিং কিভাবে করব,বিটকয়েন মাইনিং কিভাবে করে,বিটকয়েন মাইনিং কি?,কম্পিউটার দিয়ে বিটকয়েন মাইনিং,বিটকয়েন কি,বিটকয়েন মাইনিং সাইট,বিটকয়েন মাইনিং করে কিভাবে,বিটকয়েন ক্লাউড মাইনিং,কম্পিউটার দিয়ে বিটকয়েন মাইনিং কিভাবে করব,কিভাবে কম্পিউটার দিয়ে বিটকয়েন মাইনিং করব,কীভাবে বিটকয়েন মাইনিং করবেন,মাইনিং কি?,টেলিগ্রাম বুথ থেকে কিভাবে বিটকয়েন মাইনিং করা যায়
বিটকয়েন মাইনিং


প্রচলিত ব্যাঙ্কিং ব্যবস্থা বিভিন্ন দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্কগুলি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়, অন্যদিকে ক্রিপ্টোকারেন্সিগুলি একটি ডিসেন্ট্রালাইজড লেজারের গাণিতিক সার্টিফিকেশন সার্টিফিউডের উপর নির্ভর করে যা ব্লকচেইন সিস্টেম নামেও পরিচিত। ক্রিপ্টোকারেন্সি গুলো মাইনিং নামক একটি প্রক্রিয়া দ্বারা তৈরি হয় তবে এই মাইনিং এর জন্য কোন ব্যলচা কিংবা পিকএক্সের প্রয়োজন হয় না। আধুনিক ক্রিপ্টোকারেন্সি মাইনারদের কেবল একটি ইন্টারনেট লিংক যুক্ত কম্পিউটার এর প্রয়োজন হয় যা ব্লকচেইনে যোগ করা অনেক সমস্যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সমাধান করতে পারে।


অতীতে ক্রিপ্টোকারেন্সি মাইনিং এর শুরুতে ক্রিপ্টো উদ্যোক্তারা বাড়ির ল্যাপটপে একটি মাইনিং অপারেশন করতে পারত। কয়েন এক্সট্রাক্ট করা তাদের জন্য প্রায় এক ধরনের ব্যাকগ্রাউন্ড কাজ হিসেবে ছিল। বেশিরভাগ সময় ঘুমের সময় তারা কাজটি চালিয়ে যেতে পারতো কিন্তু ক্রিপ্টোকারেন্সি মূল্য এখন বেড়ে গিয়েছে এবং সারা বিশ্বে মানুষের জন্য কোটি কোটি বিনিয়োগকারী রয়েছে। তাই এখনকার মাইনিং প্রসেস আর এতটা সহজ নয়। এখন হোম ল্যাপটপের মাধ্যমে ক্রিপ্টো মাইনিং করা বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আজকের ক্রিপ্টো দুনিয়ায় কোন ধরনের অ্যামেচার সেটআপ কাজ করে না। আধুনিক দিনের প্রয়োজনের জন্য বিশ্বজুড়ে বিশাল সার্ভার ফার্ম তৈরীর কথা ভাবা হচ্ছে।ক্রিপ্টোকারেন্সি মর্নিং এর ক্ষেত্রে এই ফার্ম গুলি ব্যাপক সুবিধা এনে দিবে। কতিপয় লোক বর্তমানে সফলভাবে ক্রিপ্টো কারেন্সি মানিং করতে পারলেও অধিকাংশই এই কাজে ব্যর্থ হচ্ছেন। এখন বিশ্বের সবচেয়ে বড়  ক্রিপ্টো কারেন্সি মাইনিং গুলির মধ্যে একটিকে নিয়ে কিছুটা আলোচনা করা যাক।


জেনেসিস মাইনিং লিমিটেড আইসল্যান্ডের পশ্চিমে  ক্যাফলাফিক বিমান বন্দরের কাছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার একটি পরিত্যক্ত এয়ারস্ট্রিপ এর পাশে অবস্থিত। আপনি সেখানে গেলে সাধারন সেড দেখতে পাবেন যা মূলত ক্রিপ্টো কারেন্সি মানিং ফার্ম।মার্কোস  স্ট্রেং   ২০১৪  সালের জেনেসিস কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠা করেন। কোম্পানির অধীনে দুটি মাইনিং ফার্ম আছে।  যার একটি সুইডেনে এবং আরেকটি আইসল্যান্ডে অবস্থিত। চলুন এবার মার্কোস  স্ট্রেং সম্পর্কে  কিছু তথ্য জানা যাক,  ২৯ বছর বয়সী  মার্কো একজন গাণিতিক পরিচি, তিনি একজন জার্মান ব্যবসায়ী  সিইও এবং জেনেসিস গ্রুপের সহ-প্রতিষ্ঠাতা। যা সবচেয়ে বড় বিটকয়েন এবং ইথিরিয়াম মাইনিং অপারেশন গুলির মধ্যে একটি। তিনি নিয়মিতভাবে বিশ্বজুড়ে বিটকয়েন উদ্যোক্তা তৈরি করে চলেছেন। মার্কো একটি সাধারণ সমস্যা সমাধানের জন্য ২০১৪ সালে প্রথমবারের মতো আইসল্যান্ডের যান।মাইনিং এর সময় তার কম্পিউটার খুব বেশি শক্তি খরচ করছিল। আইসল্যান্ড সফরে তিনি দেখতে পান ক্রিপ্টোকারেন্সি মাইনিং করার জন্য ঠান্ডা আবহাওয়ায় উপযুক্ত জায়গা। মার্কোস  স্ট্রেং ক্রিপ্টো মাইনিং এর  জন্য আইসল্যান্ডকে বেছে নিয়েছিলেন। কারণ সেখানকার কম ভাড়া , প্রচুর পরিমাণে সস্তা বিদ্যুৎ এবং ঠান্ডা আবহাওয়া মাইনিং এর জন্য আদর্শ। আইসল্যান্ডের মাইনিং ফার্মটি প্রকৃতপক্ষে ৪০০ বর্গমিটারের একটি সেড। যেখানে তাকের উপর সারি সারি কম্পিউটার সাজিয়ে রাখা হয়েছে।



এই কম্পিউটার গুলি যখন মাইনিং তখন এত বেশি শব্দ করে যে একে অনেকটা  জেট ইঞ্জিনের টেক অফের শব্দের মতোই মনে হয়। কম্পিউটার গুলো দিনে-রাতে ২৪ ঘন্টায় মাইনিং করতে থাকে। কম্পিউটারগুলোর সর্বদা ক্রিপ্টো কোড ক্রাক  করার মাধ্যমে ক্রিপ্টোকারেন্সি মাইর্নিং করে প্রতিযোগীদের থেকে এগিয়ে থাকার জন্য কাজ করে। যেখানে ইন্টারনেট সংযোগ আছে সেখানেই ক্রিপ্টো কারেন্সি মইর্নিং  এর প্রতিযোগী থাকবে। চীন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, ভেনেজুয়েলা এবং কানাডায় উল্লেখযোগ্য পরিমাণে মাইনার আছে। বিশ্বজুড়ে প্রতি ১০ মিনিটে মোটামুটিভাবে ৬.২৫ বিট কয়েন ট্র্যাক করা হয় এবং যেকোন জায়গায় থেকে যেকেউ তা পেতে পারে।আপনার কাছে যত বেশি সম্ভব পাওয়ারফুল কম্পিউটার থাকবে আপনার সাফল্যের হার ও ততটাই বেড়ে যাবে। সারা বিশ্বের ১০ হাজারেরও বেশি স্বতন্ত্র ক্রিপ্টো মাইনিং মেশিন দিনে ২৪ ঘন্টা করে বছরে ৩৬৫ দিন একটানা মাইনিং করতে থাকে। এই ধরনের ক্রিপ্টো মাইনিং কম্পিউটারগুলি  আমাদের বাড়িতে থাকা কম্পিউটার গুলি থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। কম্পিউটার  গুলি ছয়টি সিপিইউ   বা গ্রফিকস প্রসেসিং ইউনিট সহ একটি মাদারবোর্ড নিয়ে গঠিত। এই সিপিইউ গুলি প্রতি ক্লকে  প্রায় ৩ লাখ ২০ হাজার ৩২ বিট নির্দেশনা দিতে সক্ষম। যা আমাদের বাড়িতে ব্যবহৃত  সিপিইউ থেকে ৮০০ গুণ বেশি। এই সিপিইউ গুলি অনেক বেশি দক্ষ এবং দ্রুতগতিসম্পন্ন। প্রতিটি কম্পিউটার ইউনিটের নিজস্ব ডেডিকেটেড কুলিং ফ্যান রয়েছে এবং শেডের সিলিংটিকে ৬টি  বিশাল সিলিং  টারবাইন সাপোর্ট দিয়ে রেখেছে। কম্পিউটেশনাল হার্ডওয়ারকে সব সময়ে কার্যক্রম তাপমাত্রায় রাখতে এই টারবাইন থেকে  অবিরাম শীতল বায়ু প্রবাহ দেওয়া হয়। মাইনিং প্রক্রিয়ার যেকোন কোন যান্ত্রিক ত্রুটি বিশাল আর্থিক ক্ষতির কারণ হতে পারে এমনকি এই ক্ষতির মাত্রা মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। এ কারণে প্রযুক্তিগত কোন ভুল করার সুযোগ এখানে নেই। এই সমস্যা সমাধানের জন্য এনিগমা ফ্যাসিলিটিজ ফাইভ নামে একটি স্মার্ট হার্ডওয়ার মনিটরিং সফটওয়্যার তৈরি করেছিল।



এই সফটওয়ারটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে ত্রুটিপূর্ণ পেরিফেরালি খুঁজে নেয়। নির্দিষ্ট ফার্মওয়্যার আপডেটের জন্য  সুপারিশ করে এবং তাপমাত্রার যেকোনো পরিবর্তনের জন্য আগে থেকে সতর্ক বার্তা দিতে থাকে। ক্রিপ্টো মাইনিং  প্রসেসিং প্রচুর পরিমাণে বিদ্যুৎ শক্তি ব্যয় করে এবং আইসল্যান্ডের পরিবেশ ক্রিপ্টো মাইর্নিং এর জন্য আদর্শ। বছরব্যাপী আইসল্যান্ডেরতাপমাত্রা খুবই কম থাকে। এর পাশাপাশি এখানকার সস্তা প্রচুর জলবিদ্যুৎ এবং ভূতাপীয় শক্তি অন্যান্য জায়গার তুলনায়  এখানে এ্যানিগমা ফেসিলিটিকে বেশি সুবিধা প্রদান করে থাকে। আইসল্যান্ডের পাইকারি বিদ্যুতের দাম অনেক দেশের  চাইতে তুলনামূলকভাবে সস্তা।  এ্যানিগমা ফ্যাসিলিটি বিদ্যুৎ বিল মাসে  মিলিয়ন ডলারের বেশি বলে সম্প্রতি জানা গেছে। মজার বিষয় হচ্ছে সমগ্র আইসল্যান্ডের যে পরিমাণ বিদ্যুৎ ব্যবহার করা হয় শুধু এ্যানিগমা ফেসিলিটি তার থেকে বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করে থাকে। রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে আইসল্যান্ডের সরকার ক্রিপ্টো বাণিজ্য প্রতি খুবই সহনশীল।



২০০৮ সালের আর্থিক সংকটে দেশটির প্রায় দেউলিয়া হয়ে পড়েছিল। সেই সময় থেকে দেশটি বিট কয়েনের মতো উদ্ভাবনী নতুন প্রযুক্তি শিল্পকে স্বাগত জানিয়েছে। প্রতিটি জিনিসের নিজস্ব সুবিধা এবং অসুবিধা আছে। একইভাবে ক্রিপ্টো  শিল্পের ও অনেক অসুবিধা রয়েছে। পরিবেশবাদীরা মনে করেন যে, ক্রিপ্টোকারেন্সি মাইনিং এর জন্য অতিরিক্ত বিদ্যুৎ খরচ হয়ে যাচ্ছে। এই অধিক পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদনের ফলে দেশের নদীগুলো ক্ষতিগ্রস্থ হবে ও এর পাশাপাশি আইসল্যান্ডের আদিম পরিবেশও ক্ষতির মুখে পড়েছে। পরিবেশবিদ টমাস গুন্ডানসন বলেছেন যে, "বিটকয়েন নতুন কোন চাকরি তৈরি করছে না বরং এর কারণে জলপ্রপাত এবং পরিবেশের অপূরণীয় ক্ষতি সাধিত হচ্ছে"। বিটকয়েনের  সংখ্যা কঠোরভাবে ২১  মিলিয়ন কয়েনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। যা ২১৪০ সালের মধ্যে মাইনিং করা হবে। কিন্তু এরপরে বিটকয়েনের ভবিষ্যৎ কী হবে?

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন