রসুন খাওয়ার উপকারিতা

রসুন বা গার্লিক প্রায় পাঁচ হাজার বছর ধরে মসলা, খাদ্য ও ওষুধ হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। বর্তমান তথ্য অনুযায়ী রসুনকে স্বাস্থ্যরক্ষা ও বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। ম্যাজিকের মতো কাজ করে এক কোয়া রসুন। রসুনের গুনাগুন জানলে চমকে যাবেন আপনিও। সুগার, হৃদরোগ, হাই ব্লাড প্রেসার ও কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে রসুন। এছাড়াও প্রাকৃতিক এন্টিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে আপনার যৌন শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। এইরকম অনেক উপকারিতা আছে রসুনের। তাই আজকে আমরা জানবো রসুন খাওয়ার উপকারিতা কি, সকালে খালি পেটে রোজ এক কোয়া রসুন খেলে কেন খাওয়া উচিত আর রসুন খাওয়ার সঠিক নিয়ম কী এসব জানতে লেখাটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন তাহলে রসুন খাওয়ার উপকারিতা বিষয়ে একটি পরিস্কার ধারণা পেয়ে যাবেন আর লেখার শেষে রসুন খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে একটি সিক্রেট শেয়ার করবো যা সম্ভবত আপনি জানেন না। 


রসুনের এত উপকারিতা যে রসুনকে মর্তের অমৃত বলা হয়। রসুনের বিজ্ঞানসম্মত নাম Allium Sativum। এছাড়াও বিভিন্ন প্রাদেশিক নামগুলো হলো লাসুনা, লাসুন, বালুচি, মাহারু, লেহসুন ইত্যাদি। দুই রকমের রসুন পাওয়া যায়, প্রথমটি হলো এক কোয়া বিশিষ্ট রসুন তবে এর দাম খুব বেশি আর দ্বিতীয়টি হলো বহু কোষ বিশিষ্ট রসুন এটি সহজলভ্য এবং এর দাম ও কম তবে এর গন্ধটা একটু বেশি ঝাঁঝালো। 


রসুন,রসুন খাওয়ার উপকারিতা,রসুনের উপকারিতা,রসুন চাষ,কাঁচা রসুন,রসুন খাওয়ার নিয়ম,রসুন খেলে কি হয়,খালি পেটে রসুন খাওয়ার উপকারিতা,রসুন খেলে কি হয়,রসুন খাওয়ার নিয়ম,রসুন কিভাবে খেতে হয়,রসুন খাওয়ার উপকারিতা,রসুনের অপকারিতা,রসুন খেলে কী কী উপকার হয়?,রসুন চাষ পদ্ধতি,রসুনের আশ্চর্য গুন,রসুন এর উপকারিতা,রসুন এর অপকারিতা,রসুন খাবার নিয়ম,রসুনের উপকারিতা ও অপকারিতা,রসুন খান,কাঁচা রসুন খাওয়ার উপকারিতা কি,টবে রসুন চাষ পদ্ধতি
রসুন


এবার আমরা জেনে নেই রসুনের প্রথম উপকারিতা, ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করে। সুগার হলো একগুচ্ছ রোগের সমাহার। এই রোগের ফলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায়। ইনসুলিন এর অসমক্ষরনের ফলে মূলত এই রোগ হয়ে থাকে। বিজ্ঞানীদের মতে রসুনের মধ্যে এলিসিন নামক একটি কম্পাউন্ড থাকে যা ইনসুলিন এর ক্ষরণ বাড়িয়ে দেয় তার ফলে সুগার কমে খুব সহজে। এক্ষেত্রে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে দুই থেকে তিন কোয়া রসুন খেতে হবে। চিবিয়ে খেতে না পারলে কুচি কুচি করে গিলে খেতে পারেন। রসুনের দ্বিতীয় উপকারিতা হলো কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করে। আপনার এলডিএল কোলেস্টেরল বেড়ে গেলে সেক্ষেত্রে সারা জীবনের জন্য কোলেস্টেরলকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইলে প্রতিদিন দুই কোয়া করে রসুন খালি পেটে চিবিয়ে খাওয়ার অভ্যাস করুন। মাঝে মাঝে দুই একদিন বাদ গেলেও ক্ষতি নেই। রসুন লো ডেন্সিটির লাইপোপ্রোটিন অর্থাৎ এলডিএল এবং ট্রাইগ্লিসারাইড কমাতে সাহায্য করে এবং হাই ডেন্সিটির লাইপোপ্রোটিন অথবা এইচডিএল বাড়াতে সাহায্য করে। চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের মতে রসুন লিভারে কোলেস্টেরল এর সংশ্লেষ কমিয়ে দেয় এবং কোলেস্টেরল কে শরীরের বাইরে বেরিয়ে যাওয়ার প্রক্রিয়াকে ত্বরান্বিত করে। এবার আসা যাক রসুনের তৃতীয় উপকারিতায়, হৃদরোগের সম্ভাবনা কমায়।


বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মত অনুযায়ী বিশ্বে মৃত্যুর সর্ববৃহৎ কারণ হলো হৃদরোগ। ২০১১ সালের রিপেট অনুযায়ী ১৭.৩ মিলিয়ন মানুষ মারা যায় হৃদরোগে যার ৮০% উন্নয়নশীল দেশের মানুষ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মত অনুযায়ী ২০৩০ সালের মধ্যে ২৩.৬ মিলিয়ন মানুষ প্রাণ হারাতে পারে হৃদরোগে। তাই আপনার হৃদযন্ত্রকে সুস্থ রাখতে প্রতিদিন সকালে দুই কোয়া রসুন খেতে পারেন কারন রসুনের মধ্যে সালফার ও মনোসালফার বায়োএকটিভ মিশ্রণ থাকে যা হৃদরোগকে প্রতিরোধ করতে পারে। বর্তমানে বৈজ্ঞানিক তথ্য অনুযায়ী রসুন অনিয়মিত হৃৎস্পন্দন, মায়োকার্ডিয়াম এর দুর্বলতা, এথেরোস্ক্লেরোসিস প্রভৃতি রোগে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও কোলেস্টেরল এর মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে হৃদরোগ এ ঝুঁকি কমায়। এবার আসা যাক রসুনের চতুর্থ উপকারিতা, প্রেশার নিয়ন্ত্রণ করে। প্রেশার বলতে এখানে হাই প্রেশার বা হাইপারটেনশনের কথা বলা হচ্ছে। সারা পৃথিবীতে ১৩.৫% মানুষ মারা যায় উচ্চ রক্তচাপে। অতি সম্প্রতি চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের তথ্য অনুযায়ী পুরো একটি গবেষণার ওপর ভিত্তি করে রসুনকে একটি উত্তম হাই ব্লাড প্রেশারের ঔষধ হিসেবে ধরা হয়েছে। তবে রোগটি প্রবল আকারে দেখা দেয়ার পর রসুন খাওয়া আরম্ভ করলে পারদের মাত্রার মতো তরতর করে নিচের দিকে নেমে যাবে সেই আশা করবেন না। অন্য ওষুধ চলবে ব্লাড প্রেশারের সাংঘাতিক অবস্থাকে কন্ট্রোল করার জন্যে সেই সঙ্গে রসুন খেতে হবে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে। ২ থেকে ৩ কোয়া রসুন চিবিয়ে খেতে পারেন না পারলে কুচি কুচি করে গিলে খেতে পারেন। হাই ব্লাড প্রেশার ভালোভাবে আয়ত্বে আসার পর কেবল মাত্র রসুন খেয়ে রোগটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়। 


এবার আসা যাক রসুনের পঞ্চম উপকারিতায়, প্রাকৃতিক এন্টিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে।

গবেষণায় দেখা গেছে খালি পেটে তা শক্তিশালী এন্টিবায়োটিক হিসেবে কাজ করে। তাই আপনার দেহের ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়াকে দূর করতে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে দুই কোয়া রসুন খেতে পারেন যে ম্যাজিকের মতো আপনার দেহের রোগ প্রতিরোধ করার ক্ষমতাকে বৃদ্ধি করবে। এরপরে আসা যাক রসুনের ষষ্ঠ উপকারিতায়, যৌন শক্তি বৃদ্ধি করে। পুরুষের যৌন অক্ষমতার ক্ষেত্রে রসুন খুব ভালো ফল দিয়ে থাকে। যৌন ইচ্ছা ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে এর ব্যবহার খুব কার্যকরী। কোনো রোগের কারণে বা কোনো দুর্ঘটনার কারণে বা বয়সের জন্যে আপনার যৌন ইচ্ছা কমে গেলে এটি আপনাকে তা ফিরে পেতে সাহায্য করে। রসুন আপনার দেহে টেস্টোস্টেরন এর মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে আর টেস্টোস্টেরন মেন সেক্স হরমোন নামে পরিচিত। আমাদের বাজে খাদ্যাভ্যাস, ধূমপান, এলকোহল, অনিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন ও শারীরিক পরিশ্রমের অভাবে দিন দিন হেলদি শুক্রাণু কমে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে হেলদি শুক্রাণু তৈরিতে রসুনের জুড়ি মেলা ভার। তাই প্রতিদিন সকালে খালি পেটে দুই কোয়া রসুন খেলে যৌন অক্ষমতা দূর হবে এবং আপনার যৌন শক্তি বৃদ্ধি পাবে। এরপর আসা যাক রসুনের সপ্তম উপকারিতায়, আমবাত নিয়ন্ত্রণ করে। আমবাত অর্থাৎ রেউমাটোয়েড আর্থ্রাইটিস রোগে রসুন বেশ কার্যকরী। যদি আপনার গাটে গাটে ব্যথা, সকালে আঙুলে আড়ষ্ট ভাব প্রভৃতি থাকে সেক্ষেত্রে অন্যান্য ওষুধের সঙ্গে প্রতিদিন দুই থেকে চার কোয়া রসুন খাবার অভ্যাস করুন। রসুন কুচি কুচি করে প্লেটে রাখুন। দশ থেকে পনেরো মিনিট সেগুলো খালি পেটে চিবিয়ে খেয়ে নিন। তার দশ থেকে পনেরো মিনিট পর জলখাবার খেয়ে নিতে পারেন। আর এতে যদি কারো অসুবিধা হয় তাহলে জলখাবার খাওয়ার ত্রিশ মিনিট পর রসুন গিলে খেয়ে নিন। এছাড়াও গাটে গাটে ব্যথা ও যন্ত্রণার উপশমের জন্যে রসুনের তেল লাগাতে পারেন।


 এরপরে আসা যাক রসুনের অষ্টম উপকারিতায়, দাঁতের যন্ত্রনা কমায়। দাঁতের যন্ত্রনা কমাতে রসুন বেশ কার্যকরী। রসুন থেঁতো করে দাঁতের গোড়ায় লাগিয়ে হালকাভাবে ম্যাসাজ করলে উপকার পাওয়া যায়। আর হঠাৎ করে যদি দাঁতে যন্ত্রনা দেখা দেয় বা মাড়ি ফুলে যায় তাহলে এক কোয়া রসুন চিবিয়ে দাঁতের গোড়ায় লাগিয়ে রাখুন। ত্রিশ মিনিট পর থেকে যন্ত্রনা ও ব্যথা কমতে শুরু করবে। এছাড়াও পাইরিয়া সারাতে রসুন ভালো কাজ করে। এরপরে আসা যাক রসুনের নবম উপকারিতায়, যক্ষা নিরাময় করে। যক্ষা রোগের অত্যাধুনিক ওষুধ বারবার ব্যবহার হচ্ছে ,বারবার ভালো হচ্ছে কিন্তু রোগী আবার যক্ষা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় ওষুধ আর কাজ দিচ্ছেনা। সেক্ষেত্রে রোগীর অবস্থা ক্রমশ জটিল হয়ে উঠে। এরকম ক্ষেত্রে আধুনিক চিকিৎসার সঙ্গে সঙ্গে রসুন খাওয়া যেতে পারে। এরপর রোগ সারলে আবার রোগ হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়। এক্ষেত্রে রসুনের রস ১৫ - ২০ ফোঁটা সামান্য জলে মিশিয়ে দিনে তিন থেকে চারবার খাওয়ানো যেতে পারে। 

এরপরে আসা যাক রসুনের দশম উপকারিতায়, ক্যানসার প্রতিরোধ করে। বর্তমান সময়ে বহু মানুষ ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে, পুরুষ ও মহিলাদের ক্যানসার দিনদিন ভয়ানক আকার ধারণ করছে। সেক্ষেত্রে নানাভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে রসুন ক্যান্সারের কোষের বৃদ্ধিকে প্রতিহীত করে এবং নিয়মিত রসুন খেলে ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়। রসুন ঠোঁট, মুখ, পরিপাকতন্ত্র, স্তন, ফুসফুস, কোলন, জরায়ুমুখ প্রভৃতি ক্যান্সারে ভালো কাজ করে কারণ রসুন ক্যানসার কোষের বিভাজনকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। এছাড়াও রসুনে শক্তিশালী এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর ফ্রি রেডিকেলস গুলিকে ধ্বংস করে। 


এখন রসুন খাওয়ার সিক্রেট টিপসে আসা যাক। রসুন কাটার পর খোলা জায়গায় রেখে চোদ্দ মিনিট পরে কাঁচা খেতে পারেন বা তরকারিতে ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু প্রশ্ন হলো কেন?

কারণ রসুনের মধ্যে জ্বালা সৃষ্টিকারী সালফানিক এসিড দ্রুত ভেঙে গিয়ে এলিসিনে পরিণত হয়। প্রতি ৬ মিনিট ৩০ সেকেন্ড অন্তর ৩০ সেকেন্ড ধরে গুনগত মানের বৃদ্ধি ঘটে। প্রতি সাত মিনিটে একবার আর চোদ্দ মিনিটে দুইবার পরিবর্তন ঘটে। তাই রসুন কাটার পর খোলা জায়গায় রেখে চোদ্দ মিনিট পর ব্যবহার করতে পারেন। এই লেখাটিতে রসুনের দশটি উপকারিতা বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। এছাড়াও রসুনের আরো উপকারিতা রয়েছে।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন