মেটাভার্স কি?

বর্তমান প্রযুক্তি বিশ্বে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় মেটাভার্স। প্রযুক্তি দানব প্রতিষ্ঠান ফেসবুক তাদের কোম্পানির নাম পরিবর্তন করে রেখেছে মেটা। কারন তাদের ভবিষ্যতে পরিকল্পনা জুড়ে রয়েছে মেটাভার্স প্রযুক্তি। মেটাভার্স প্রযুক্তির হাত ধরে বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনী বাস্তবে পরিণত হতে চলেছে। মেটাভার্স পুরোপুরি কার্যকর হলে আমাদের চেনা জানা পৃথিবী সম্পুর্ণ বদলে যাবে। মেটাভার্স সর্ম্পকে আলোচনা করা হবে।


ফেসবুকের প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ তার কোম্পানির নাম বদলে রেখেছে মেটাপ্লাটফর্মস ইনকরপোরেটেড, সংক্ষেপে মেটামেটাভার্স শব্দটি প্রথম ব্যবহৃত হয়েছিলো ১৯৯২ সালে। নিলস ডিপেন্সর নামের একজন বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনি লেখক তার  Snow crash নামের একটি উপন্যাসে মেটাভার্সের অবতারণা করেন। এরপর বহুবছর কেটে গেলেও এই প্রযুক্তির অস্তিত্ব তৈরি হয়নি। ইন্টারনেটে ব্যপক উন্নতি ঘটার পর প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো মেটাভার্স নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে।এখন প্রশ্ন হলো, 




মেটাভার্স কি?


মেটাভার্স হলো ইন্টারনেটে প্রানসঞ্চর করার মতো একটি বিষয়। এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে ইন্টারনেটের থ্রিডি বা ত্রিমাত্রিক জগতে প্রবেশ করা যাবে। অর্থাৎ শুধু স্মার্ট ফোনের স্কিনের দিকে তাকিয়ে থাকার বদলে আপনি সরাসরি স্মার্ট ফোনের ভিতরে ঢুকে যেতে পারবেন। মূলত এটি এমন এক ভাচুর্য়াল জগৎ যেখানে মানুষ বাস্তবের মতো মিলিত হতে পারবে, একসাথে কাজও করতে পারবে। আর এইসব করার জন্য দরকার হবে ভাচুর্য়াল রিয়েলিটি হেডসেট। বিশেষ ধরনের App এর সাহায্যে  নিমিষেই চারপাশের পরিবেশকে বদলে ফেলা যাবে। সত্যি কথা বলতে মেটাভার্সকে সহজ করে সংজ্ঞায়িত করার পরিস্থিতি এখনো তৈরি হয়নি।


পুরো বিষয়টি প্রাথমিক ধারনার পযার্য় আছে। মেটাভার্স হচ্ছে ভবিষ্যতের ইন্টারনেট ব্যবহারের ধরন। মার্ক জাকারবার্গের মতে মেটাভার্স হলো ইন্টারনেটের পরবর্তী অধ্যায়। মেটাভার্সের মাধ্যমে সবচেয়ে বড় পরিবর্তন আসবে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এবং অনলাইন কেনাকাটায়। শুধু তাই নয় চোখে একটি চশমা আর কানে একটি হেডফোন লাগিয়ে বাসায় বসে অন্য কোনো দুনিয়ায় চলে যাওয়া যাবে। এই ভাচুর্য়াল দুনিয়ায় আপনার মন যা চাইবে তাই করতে পারবেন।

মার্ক জাকারবার্গের মেটা পেজেন্টেশন থেকে মেটাভার্সের কয়েকটি প্রাথমিক দিক সম্পর্কে ধারনা পাওয়া যায়।বিষয় গুলো হলো-

 ১) উপস্তিতি

২) অবতার

৩) নিজস্ব ভাচুর্য়াল জায়গা

৪) টেলিপোটিং

৫) আন্তঃকার্যক্ষমতা

৬) নিরাপত্তা ও সুরক্ষা

৭) ভাচুর্য়াল পন্য

 ৮) প্রাকৃতিক ইন্টারফেস


বিষয়গুলো সহজে ব্যাখ্যা করতে গেলে বলা যায়, মেটাভার্সের একটি সাধারণ সার্বজনীন জগত থাকবে।যেখানে প্রতিটি মানুষ নিজস্ব ভাচুর্য়াল অবতার বা চরিত্র ধারন করে বিচরন করতে পারবে। মেটাভার্সের জগতে নিমিষেই এক জায়গা থেকে আরেক জায়গায় যাওয়া যাবে।অন্যদের সাথে মিলে কাজও করা যাবে। এছাড়া বাস্তব জগতের সকল বিষয়ের অনুরুপ  ভাচুর্য়াল পন্য থাকবে মেটাভার্সে। মার্ক জাকারবার্গের মতে আগামী ৫ থেকে ১০ বছরের মধ্যে মেটাভার্স প্রযুক্তির অনেক কিছুই মূল ধারনার ইন্টারনেট ব্যবস্থা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। মেটাভার্সের মাধ্যমে যাতে মানুষ নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করতে পারে,সেজন্য ফেসবুক তৈরি করছে সম্পুর্ন নতুন এক ধরনের  মিডিয়া।যার নাম Horizon



এখানে বন্ধুদের সাথে মিলিত হওয়া শুধু ছবিতে টেড করার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। বরং মনে হবে সশরীরে সত্যি সত্যি বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করছেন। এর প্রথম ধাপেই থাকবে, Horizon Home। এটা হবে ভাচুর্য়াল বাড়ি। যেখানে আপনার বন্ধুদের আমন্ত্রন জানাতে পারবেন। Horizon এর আরও দিক হলো Horizon World। এখানে যে কেউ যেকারো সাথে মিলে নতুন কিছু তৈরি করতে পারবে। শুধুমাত্র কাজ করার জন্য থাকবে Horizon Workrooms যা ভবিষ্যতে অফিস হিসেবে কাজ করবে।মেটাভার্সের মাধ্যমে শুধু যেখানে খুশি সেখানে যাওয়া নয়, চাইলে অতিতের যেকোনো সময় ভ্রমণ করা যাবে।এছাড়া মেটাভার্সের মাধ্যমে ফেসবুক,মেসেঞ্জারের ভিডিও কলও বদলে যাবে।মেসেঞ্জার App ব্যবহার করে ভাচুর্য়াল রিয়েলিটি কল করা যাবে।


এধরনের কলে মনে হবে আপনি সামনা-সামনি বসে কথা বলছেন। মেটাভার্সের জগতে বিচরন করতে আরও উন্নত প্রযুক্তির নতুন ধরনের ডিভাইসের দরকার হবে। সেজন্য ফেসবুক তৈরি করছে প্রজেক্ট কেমরিয়া নামের উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ভিয়ার হেডসেট। কেমরিয়া ব্যবহার করে মানুষের চোখে চোখ রেখে কথা বলা, বা মানুষের চেহারার স্বাভাবিক অভিব্যক্তি ফুটিয়ে তোলা যাবে।


ইন্টারনেট আবিষ্কারের শুরুর দিকে কেউ কল্পনাও করতে পারেনি এই সাধারণ নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে কত রকমের অসাধারণ কাজ করা যেতে পারে। ইন্টারনেট প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পরেও এক কথায় ইন্টারনেটের সংজ্ঞা দেওয়াটা প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞদের পক্ষেও কঠিন।


ইন্টারনেট আবিষ্কারের পরেও দিনে দিনে বহু অনুসজ্ঞ আমাদের ইন্টারনেট ব্যবহারের অভিজ্ঞতাকে বিভিন্ন ভাবে প্রভাবিত করেছে। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য স্মার্ট ফোন। আজ থেকে মাত্র ১০বছর আগেও আমরা কল্পনা করিনি আমাদের সবার হাতে স্মার্ট ফোন থাকবে।অথচ আজকাল আমরা স্মার্ট ফোন ছাড়া একটি দিনও কল্পনা করতে পারি নাহ। ভবিষ্যতে হয়তো আমরা মেটাভার্স দুনিয়ায় স্মার্ট ফোনের চেয়েও অনেক বেশি বুধ হয়ে থাকবো। কারন মেটাভার্স হতে যাচ্ছে একধরনের ইন্টারনেট ভিত্তিক জীবন ব্যবস্থা। বর্তমানে ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য আমরা স্মার্ট ফোন লেপ্টপের সাহায্য নিচ্ছি।ভবিষ্যতে আমাদের ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যম হবে ভাচুর্য়াল রিয়েলিটি। মেটাভার্সের দুনিয়ায় কোনো ডিভাইসের স্কিনে আপনাকে তাকিয়ে থাকতে হবে না। মনে হবে যেন নতুন কোনো জগতে আপনি ঘুরে বেরাচ্ছেন।যেখানে সবকিছু ঘটবে আপনার চোখের সামনে, শুধু ফেসবুকই নয় বহু প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান তাদের নিজস্ব মেটাভার্স জগত তৈরি করার প্রকল্প শুরু করেছে। মাইক্রোসফটের মতো বৃহত  প্রতিষ্ঠানও তাদের নিজস্ব মেটাভার্স জগত তৈরি করছে। বর্তমানে আমরা যেমন একটি ওয়েবসাইট থেকে আরেকটি ওয়েবসাইটে ভিজিট করি। ভবিষ্যতে ঠিক একিভাবে মেটাভার্সের একটি ভাচুর্য়াল জগত থেকে আরেকটি জগতে যেতে পারবো। তবে মেটাভার্সের সবচেয়ে বেশি ব্যবহার হতে যাচ্ছে ভিডিও গেমিং ইন্ডাস্ট্রিতে।


Epic Games  এবং Roblox ইতিমধ্যে বিলিয়ন ডলার অর্থ খরচ করে তাদের ত্রিমাত্রিক জগত তৈরির কাজ শুরু করে দিয়েছে। মেটাভার্স প্রযুক্তি আমাদের জীবনে প্রবেশ করলে ফেসবুকের মতো প্রযুক্তি ধানব প্রতিষ্ঠান গুলো আমাদের জীবনকে প্রত্যক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। বিশেষজ্ঞদের মতে ভাচুর্য়াল তথাকথিত উন্নত জীবন আমাদের বাস্তবের পৃথিবীতে আরও অনেক বেশি সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।মেটাভার্সের মতোই ভবিষ্যতের মুদ্রা ব্যবস্থা হলো ক্রিপ্টোকারেন্সি


আরও পড়ুন - ক্রিপ্টোকারেন্সি কি ?


এধরনের ভাচুর্য়াল কারেন্সি কোনো দেশেন সরকার বা বড় কোনো আর্থিক  প্রতিষ্ঠান নিয়ন্ত্রণ করে নাহ। ক্রিপ্টোকারেন্সির প্রথম পরিক্ষা মূলক মুদ্রা হলো Bitcoin। স্বর্ণের উপর মানুষের আস্থা থাকার কারনে স্বর্ণের দাম যেমন বেড়ে যায়, ঠিক একি ভাবে Bitcoin এর উপর মানুষের আস্থার ফলে দিন দিন এর দাম বেড়েই চলেছে। বর্তমানে  ১টা Bitcoin এর মূল্য বাংলাদেশি ৫০লক্ষ টাকারও বেশি।


 ,আরও জানুন - বিটকয়েন কি ?

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন