বন্ধুরা বাইকের গিয়ার পরিবর্তন করার সময় আমাদের ক্লাচ চাপতে হয় কিন্তু কেন? এই ক্লাচ সিস্টেম একই কাজ রয়েছে বা এটা কেন ব্যবহার করা হয় ? তো বন্ধুরা আজকে আমরা এই ভিডিওতে বাইকে ক্লাচ সিস্টেম কিভাবে কাজ করে বাইকে ক্লাচের কতটা গুরুত্ব রয়েছে সেই ব্যাপারে সম্পূর্ণ বিস্তারিতভাবে জানবো। তাই ভিডিওটি সম্পূর্ণ দেখুন।
ক্লাচ কেন ব্যবহার করা হয় ?
ক্লাচের মেইন কাজ হল প্রয়োজন মত ইঞ্জিনের সঙ্গে চাকার সম্পর্ক স্থাপন করা আবার প্রয়োজন মতো সেটাকে বিচ্ছেদ করা। এটা করা হয় কারণ ইঞ্জিনকে একটা নির্দিষ্ট গতিতে ঘুরতে দিতে হবে । কিন্তু চাকাকে কখনো থামানোর প্রয়োজন পড়ে, কখনো ঘোরানোর প্রয়োজন পড়ে , কখনো চাকায় শক্তি বেশি প্রয়োজন হয় ,কখন চাকার গতি বেশি প্রয়োজন হয় কারণ বাইরের পরিস্থিতি অনুযায়ী চাকায় শক্তিকে এইভাবে পরিবর্তন করতে হয়। যেটা ইঞ্জিন সরাসরি করতে পারে না। যার জন্য ইঞ্জিন থেকে চাকা পর্যন্ত শক্তি আসার পথে ক্লাচ এবং গিয়ার বক্স ব্যবহার করা হয়। অনেকে এটা হয়তো গুলিয়ে ফেলতে পারে যে ইঞ্জিন , সিলিন্ডার, ক্লাচ গিয়ার বক্স এগুলো ঠিক কোথায় কোথায় আছে কার পরে কোনটা থাকে। তাহলে বলি, সিলিন্ডারের মধ্যে প্রথমে পিস্টনের মাথায় আগুন জ্বালিয়ে পিস্টনটাকে আপ ডাউন করিয়ে ক্র্যাঙ্কশ্যাফ্ট মধ্যে শক্তিটা উৎপন্ন করা হয়। তারপরেই থাকে ক্লাচ সিস্টেম । মানে এই শক্তিটা ক্রাঙ্কশ্যাফ্ট থেকে সরাসরি ক্লাচের আসে । তারপর ক্লাচ থেকে সরাসরি গিয়ার বক্সের যায়। তারপরে গিয়ার বক্স থেকে এই চেনের মাধ্যমে চাকাতে যায়। জাস্ট একটা স্টেপে ইঞ্জিন থেকে শক্তি চাকা পর্যন্ত আসে। আর গিয়ার পরিবর্তন করার সময় গিয়ার বক্সের ইঞ্জিনের শক্তি থাকলে গিয়ার খারাপ হয়ে যেতে পারে। যার ফলে গিয়ার পরিবর্তন করার সময় গিয়ার বক্স থেকে ইঞ্জিনের শক্তিটাকে আলাদা করতে হয়। আর সেই কাজটাই করে এই ক্লাচ সিস্টেম । তাই ক্লাচ সিস্টেমটা গিয়ার বক্স এর আগে লাগানো থাকে।
বাইকের ক্লাচ |
এই ক্লাচ সিস্টেমটা ঠিক কিভাবে কাজ করে সেই ব্যাপারে একটু ভালোভাবে জানবো।
আগেই বললাম ,এই ক্লাচ সিস্টেমের কাজ হল প্রয়োজনমতো ইঞ্জিনের সাথে চাকার সম্পর্ক স্থাপন করা প্রয়োজনমতো সেটাকে বিচ্ছেদ করা। এবারে প্রপারলি দেখে নেয়া যাক এই কাজটা ঠিক কিভাবে করে। ক্লাচ সিস্টেমে একটা ফুটো বাটির মতো ক্লাচ বাস্কেট ব্যবহার করা হয়। যেটাকে রিং গিয়ারও বলা হয়। এর মাঝখানটা ফুটো থাকে বাইরের বাইরের দিকে গ্রুপ করে থাকে। এটা একটা বৃত্তের দ্বার সংযুক্ত সরাসরি ক্রাঙ্কশ্যাফ্টের সঙ্গে। মানে ক্রাঙ্কশ্যাফ্টের যত জোরে ঘুরবে এটাও ঠিক ক্র্যাঙ্কশ্যাফ্ট সাথে ঠিক তত জুড়েই ঘুরবে। আর এই ক্লাচ বাস্কেটের মাঝখানের ফুটো দিয়ে গিয়ার বক্স ইনপুটশ্যাফ্টটা ক্লাচ বাস্কেট এর দিকে কিছুটা থাকে।
আপনি যদি সাফ্ট শব্দটা প্রথম শুনে থাকেন ।তাহলে বলি একটা রডকেই অটোমোবাইলের মাধ্যমের শ্যাফ্ট বলা হয়। যেমন ক্রাঙ্কশ্যাফ্ট , গিয়ার বক্স এর ইনপুটশ্যাফ্ট, গিয়ার বক্সের আউটপুটশ্যাফ্ট এগুলো একটা একটা ধাতব রড আর কিছুই নয়। আর এই ইনপুট আউটপুট শব্দটির অর্থ হল ধরুন একজন আরেকজনকে শক্তি দিচ্ছে। এখানে যে শক্তি দিচ্ছি তাকে ইনপুট বলা হয়। আর যে শক্তি নিচ্ছে তাকে আউটপুট বলা হয়। আর গিয়ার বক্সের মধ্যে এরকম দুটো শ্যাফ্ট বা রডড লাগানো থাকে একটা ইনপুট আরেকটা আউটপুট। যার মধ্যে ছোট বড় সাইজের বেশকিছু চাকা লাগানো থাকে। তো যাইহোক গিয়ার বক্সের ঐ ইনপুট রডটা ক্লাচ বাস্কেটের এই ফুটো দিয়ে ক্লাচ বাস্কেটের দিকে কিছুটা বেরিয়ে থাকে। এই রোডের মাথায় আবার টাইট ভাবে আরেকটা চাকা লাগানো থাকে যেটাকে ইনারহাব অথবা রিসিভার গিয়ারও বলা হয়। আর এই চাকা বাইরের সারফেস ছোট ছোট গ্রুপ কাটা থাকে।
এই অবস্থায় ইঞ্জিন ঘুরলে ক্লাচ বাস্কেটতো কিন্তু ঐ ইনার হাবটা ঘুরবেনা।কারণ ওই ইনার হাবটা ক্লাচ বাস্কেটের ভিতরে থাকলেও ঐ ইনার হাবের সঙ্গে ক্লাচ বাস্কেটের সরাসরি কোন সম্পর্ক থাকে না। কারণ ক্লাচ বাস্কেটের ঐ ফুটোতে বিয়ারিং দিয়ে ঐ ইনার হাবের সঙ্গে ক্লাচ বাস্কেটা ফ্রী ভাবে সংযুক্ত থাকে। মানে ক্লাচ বাস্কেট ঘুরলে ইনার হাব ঘুরবে না। আবার ইনার হাব ঘুরলে ক্লাচ বাস্কেটও ঘুরবে না। এই সময় যদি আমরা ঐ ইনার হাবটাকে ঘোরাতে পারি তাহলে গিয়ার বক্স ঘুরবে। আর গিয়ারবক্স ঘুরলেই চাকা ঘুরবে। তাই এ ক্লাচ বাস্কেট ইনার হাবের মধ্যে সম্পর্ক তৈরি করার জন্য মেয়েদের হাতের চুড়ির মত দুই ধরনের ব্যবহার করা হয়। এটাকে বলা হয় ক্লাচ প্লেট বা ফিকশন প্লেট আরেকটা বলা হয় মেটেল প্লেট মানে সাধারণ ধাতুর প্লেট। এই ক্লাচ প্লেটের বাইরের দিকে গ্রুপ কাটা থাকে এবং এর এর সারফেস টা রাব হয়। যেমনটা আমরা কোন কিছু ঘষার জন্য যেই কাগজট ব্যবহার করি কাগজের উপরিভাগটা যেমন খসখসে হয়।এই ক্লাচ প্লেটের বাইরের সারফেসও তোমন খসখসে হয়। এই মেটাল প্লেটটা মিশ্রণই হয়।
এই সময় একটা ক্লাচ প্লেট একটা মেটাল প্লেট আবার একটা ক্লাচ প্লেট একটা মেটাল প্লেট এরকম কয়েকটা ক্লাচ প্লেট এবং মেটাল প্লেট পর পর সাজিয়ে ঐ ক্লাচ বাস্কে এবং ইনার হাবের মাঝখানে যে ফাঁকা জায়গাতে ওখানে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়।এখানে একটা বিষয় লক্ষ্য করার আছে ক্লাচ প্লেটের বাইরের দিকে ক্লাচ প্লেটের বাইরের দিকে গ্রুপ কাটা ছিল। এর সাথে ম্যাচ করার মত গ্রুপ ক্লাচ বাস্কেটর উপরের দিকে ছিল।তাই ক্লাচ প্লেটের গ্রুপ গুলো ক্লাচ বাস্কেটের গ্রুপের সঙ্গে গিয়ে আটকে যায়। এই সময় যদি ঐ ক্লাচ বাস্কেট তার সাথে সাথে ঐ ক্লাচ প্লেট গুলো ঘুরবে। আবার মেটাল প্লেটের গ্রুপ গুলো ভিতরের দিকে ছিল আর ওর সাথে ম্যাচ করার মত গ্রুপ এ ইনার হবের উপরেও ছিল। তাই মেটাল প্লেটের গ্রুপ গুলো ঐ ইনার হাবের গ্রুপের সঙ্গে গিয়ে আটকে যায়। যার ফলে মেটাল প্লেট ঘুরলে ঐ ইনার হাব ঘুরবে ঐ সময় যদি ঐ ক্লাচ প্লেট এবং মেটাল প্লেটের ওপর পাশাপাশি চাপ সৃষ্টি করা হয় তাহলে তাদের মধ্যে একটা ঘর্ষণ বল সৃষ্টি হবে। যার ফলে ক্লাচ প্লেট গুলো মেটাল প্লেট গুলোসঙ্গে নিয়ে ঘুরবে। তাহলে একটা উদাহরণ দিয়ে বলি , ধরুন একটা ঘুরন্ত চাকার উপরে আমি যদি হালকা করে হাত রাখি। তাহলে চাকাটা কিন্তু আমার হাতটাকে ঘুরাতে পারবে না। কিন্তু যদি আমি হালকা করে চাপ দেই তাহলে ঐ টাকাটা আমার হাতটাকে কিছুটা ঘোরানোর চেষ্টা করবে।
আবার এই চাপটাকে যদি আমি বাড়াই তাহলে ঐ চাকাটা আমার হাতটাকে সঙ্গে নিয়ে ঘোরাবে। ঠিক এই নিয়মটাই এখানে কাজ করানো হয়। মানে এখানে মেটাল প্লেট গুলো হল আমার হাত আর ক্লাচ প্লেট গুলো হল চাকা। মানে এখানে মেটাল প্লেট গুলো ক্লাচ প্লেটের গায়ে গিয়ে যেয়ে ঠিক মত জোর চাপ প্রয়োগ করবে মেটাল প্লেট গুলো ঠিক তোর জোরে ঘুরবে আর চাপ করতে করতে একটা সময় ক্লাচ প্লেট এবং মেটাল প্লেটের ঘূর্ণন একটা সময় সমান হয়ে যাবে। মানে ক্লাচ প্লেট মত জোরে ঘুরবে মেটাল প্লেট ঠিক তত জোরে ।আর মেটাল প্লেট ঘুরলে ইনার হাব ঘুরবে।আর ইনার হাব ঘুরলে গিয়ার বক্স ঘুরবে। আর গিয়ার বক্স ঘুরলে তো চাকা ঘুরবে তাই এদের ওপরে চাপ সৃষ্টি করার জন্য আরেকটা প্লেট ব্যবহার করা হয় যেটাকে বলা হয় প্রেসার প্লেট।এই প্রেসার প্লেটা বেশ কিছু স্প্রিং দিয়ে ক্লাচ প্লেট এবং মেটাল প্লেটের মধ্যে লাগিয়ে দেওয়া হয়।যার ফলে সর্বদা তাদেরকে সম্পূর্ণ চাপের মধ্যে রাখে। এই অবস্থান ইঞ্জিন যত জোরে ঘুরবে গিয়ার বক্সও ঠিক তত জোরেই ঘুরবে। কিন্তু শুধু এটা হলে তো চলবে না কারণ ইঞ্চি থেকে যদি সর্বদা গিয়ার বক্সেকে ঘোরানোর হতো তাহলে ইঞ্জিনে সরাসরি গিয়ার বক্সটাকে লাগিয়ে দেওয়া যেত।
এর জন্য এত কারিকুরি করার কী দরকার? এই কারিকুরি করার কারণ হল যাতে ইঞ্জিন চলার অবস্থাতে প্রয়োজন মতো আমরা ইঞ্জিনের শক্তিকে গিয়ার বক্স থেকে আলাদা করতে পারি।
এখন ভাবুন এই অবস্থায় ক্লাচ প্লেট গুলো মেটাল প্লেটের ওপরে খুব চাপ দিয়ে আছি বলে ক্লাচ এবং মেটাল প্লেট দুটোই ঘুরছে।এখন যদি এদের মধ্যে থেকে চাপ কমিয়ে দেওয়া হয় তাহলে কি মেটাল প্লেট ঘুরবে? তাহলে তো শুধু ক্লাচ প্লেট ঘুরবে। কিন্তু মেটাল প্লেট ঘুরবে না। তখন তো ঘুরন্ত চাকার উপরে হাত রাখা মতোনই হয়ে যাবে।
মানে ঐ ঘুরন্ত ক্লাচটা প্লেটের উপরে হালকা করে টাচ করে থাকবে। আর হালকা করে স্পর্শ করে থাকলে তো মেটাল প্লেট ঘুরবে না।আর মেটাল প্লেট না ঘুরলে গিয়ার বক্সও ঘুরবে না। এইভাবে গিয়ার বক্স থেকে ইঞ্জিনের শক্তিকে আলাদা করা হয়ে যাচ্ছে ।এখন ঐ ক্লাচ প্লেটা এবং মেটাল প্লেটের মধ্যে চাপটাকে দিয়ে রেখেছে। ঐ স্পিং দিয়ে লাগানো প্রেসার প্লেট। এখন যদি ঐ প্রেসার প্লেট গুলোকে উল্টো দিকে আনতে পারি। তাহলে তো ওদের উপর থেকে চাপটা কমে যাবে। আর চাপটা কমে গেলেই গিয়ার বক্স থেকে ইঞ্জিনে সত্যিটা আলাদা করা হয়ে যাবে।তাই এই প্রেসার প্লেটকে বাইরের দিকে বাইরের দিকে টেনে আনার জন্য একটা রিলিজ বিয়ারিং এবং একটা রিলিজ আর্ম ব্যবহার করা হয়। আর যেটা ক্লাচ কেবলের মাধ্যমে সংযুক্ত থাকে আমাদের হাতের ক্লাচ লিভারে সঙ্গে। তাই আমরা তখন ক্লাচ লিভারটা প্রেস করি তখন ঐ রিলিজ বিয়ারিং এবং রিলিজ আর্মটা কী প্রেসার প্লেটটাকে বাইরে দিকে একটু টেনে আনে ।তার ফলে ক্লাচ প্লেট এবং মেটাল প্লেটের মধ্যে থাকা চাপটা কমে যায় আর তখনই শুধু ক্লাচ প্লেট ঘুরতে থাকে কিন্তু মেটাল প্লেটগুলো থেমে যায়। আবার যখন আমার ক্লাচ লিভার ছেড়ে দেই তখন ঐ স্প্রিং গুলো দ্বারা ঐ প্রেসার প্লেট আবার গিয়ে তাদের মধ্যে চাপ সৃষ্টি করে। যার ফলে ইঞ্জিনের শক্তিটা আবার গিয়ার বক্সে ফিরে আসে। এইতো সিমপোল ব্যাপার। এইভাবে কাজ করে ক্লাচ সিস্টেম