টরেন্ট (Torrent) শব্দটা শুনলেই আমাদের মাথায় প্রথম আসে ক্রাক সফটওয়্যার, পাইরেসি ফাইল, ইত্যাদি ইত্যাদি। এখন অনেকের কাছে টরেন্ট এবং পাইরেসি দুইটা একই জিনিস। ধারনাটা ভুল, টরেন্ট এবং পাইরেসি দুটো সম্পূর্ণ ভিন্ন জিনিস এবং টরেন্ট পাইরেসির জন্য তৈরি করা হয়নি। টরেন্টের ভালো ব্যবহারের জন্য তৈরি করা হয়েছে, এর একটা ভালো দিক আছে। কিন্তু বর্তমানে আমাদের সমাজ টরেন্ট এমন পর্যায়ে নিয়ে গেছে যেটার নাম শুনলেই মানুষ অনৈতিক কিছু ভেবে নেয়। তাহলে আসুন জেনে নেই টরেন্ট সম্পর্কে সঠিক তথ্য এবং টরেন্ট কি কাজে ব্যবহার করা হয়।
টরেন্টের মূল নাম হচ্ছে বিটটরেন্ট (BitTorrent)। আমরা সংক্ষেপে সবাই এটাকে টরেন্ট বলি। এটা ২০০১ সালে তৈরি হয়েছে। এই বিটটরেন্ট এর উদ্দেশ্য ছিল একটা বড় ফাইল মূল সার্ভার ছাড়া একজনের কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে স্থানান্তর করা। আপনারা হয়তো জানেন ইন্টারনেট থেকে যখন আমরা কোনো কিছু ডাউনলোড করি সেটা কোন সেন্ট্রাল সার্ভার থেকে ডাউনলোড হয়। সেন্ট্রাল সার্ভার থেকে কোন ফাইল ডাউনলোড করতে গেলে অনেক সময় অনেক সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়, এই সমস্যার সমাধান করতে বিটটরেন্ট আবিষ্কার করা হয়। বিটটরেন্ট এর উদ্দেশ্য হল প্রত্যেক কম্পিউটারকে আলাদা আলাদা সার্ভার বানিয়ে ফেলা। তখন আপনি অন্য কম্পিউটার থেকে ফাইল ট্রান্সফার করে নিতে পারবেন বা ডাউনলোড করে নিতে পারবেন আপনার কম্পিউটারে।
টরেন্ট কিভাবে কাজ করে
টরেন্টে কোন ফাইল শেয়ার করার ক্ষেত্রে সেই ফাইলটা কে . torrent ফরম্যাটে ট্রান্সফার করে সেটা শেয়ার করতে হবে। এই টরেন্ট ফরম্যাটে ট্রান্সফার করার জন্য আপনাকে টরেন্ট ক্লায়েন্ট ব্যবহার করতে হবে। কিছু জনপ্রিয় টরেন্ট ক্লায়েন্ট এর মধ্যে রয়েছে ইউ টরেন্ট(uTorrent), বিট টরেন্ট (bitTorrent), কিউবি টরেন্ট(qbTorrent) এরকম আরো অনেক টরেন্ট ক্লায়েন্ট সফটওয়্যার আছে যেগুলো দিয়ে টরেন্ট ফাইল ডাউনলোড করা হয়। এইগুলো ব্যবহার করি আমরা টরেন্ট ফরম্যাটের ফাইল রূপান্তর করে নেই। টরেন্ট ফাইলটা আপনি যখন কোন ব্যক্তির সঙ্গে শেয়ার করবেন তখন তিনি যদি কোন টরেন্ট ক্লায়েন্ট সফটওয়্যার ব্যবহার করে সেটা ওপেন করে তাহলে আপনার কম্পিউটারের সঙ্গে তার কম্পিউটার কানেক্ট হয়ে যাবে এবং সে কাঙ্খিত ফাইল টা ডাউনলোড করে নিতে পারবে। টরেন্ট নেটওয়ার্কের মধ্যে যে ব্যক্তি গুলো বা কম্পিউটারগুলোর থাকে তাদের একটা নাম আছে, যে ব্যক্তি ফাইল আপলোড করে তখন তাকে বলা হয় সিডার (Seeder) এবং যে ব্যাক্তি ডাউনলোড করে তাকে বলা হয় লিচার(Leecher) বা পিয়ার (Peer)। একটা টরেন্ট ফাইলে যত বেশি সিডার থাকে সেই ফাইলটা তত দ্রুত ডাউনলোড হয়।
আগে বলা হয়েছে টরেন্ট কিন্তু পাইরেসি উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়নি। এটার মূল উদ্দেশ্য ছিল কোন বড় ফাইল ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে হস্তান্তর করা। এই বড় ফাইল হস্তান্তরের জন্য বিটটরেন্ট তৈরি করা হয়।
বড় বড় কোম্পানিগুলো তাদের যেটা গুলো যেগুলো অনেক বড় ডেটা সেগুলো টরেন্টের মাধ্যমে শেয়ার করে থাকে। বড় বড় গেম ডেভলপার তাদের ফাইলগুলো টরেন্টের মাধ্যমে শেয়ার করে। এটাকে ভাল কাজে ব্যবহার করা যায়। কিন্তু মানুষ এটাকে খারাপ ভাবে ব্যবহার করে। যেহেতু এটার কোনো নির্দিষ্ট সার্ভার নেই যার ফলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোন কাজ ধরতে পারবেনা এই কারণে সবাই টরেন্ট ব্যবহার করে পাইরেসির জন্য।
কিন্তু টরেন্ট বা বিটটরেন্ট একটা খুবই উপকারী একটি প্রযুক্তি। এই প্রযুক্তিকে ভালোভাবে ব্যবহার করা উচিত এবং ভালো কাজে ব্যবহার করা উচিত।