ডার্ক ওয়েব এবং ডিপ ওয়েব নামটা কেমন যেন অদ্ভুত। নাম শুনলেই অন্যরকম একটা ভাব। কিছু ভুল তথ্য এবং ধারণার জন্য এগুলো নিয়ে অনেক জল্পনা-কল্পনা। আজকে ডার্ক ওয়েব (Dark web), ডিপ ওয়েব (Deep web) এবং সার্ফেস ওয়েব (Surface Web) নিয়ে আলোচনা করা হবে এবং এদের সম্পর্কে ভুল ভেঙে দেয়া হবে।
ডিপ ওয়েব এবং ডার্ক ওয়েব পার্থক্য
আমরা অনেকেই মনে করি ডিপ ওয়েব এবং ডার্ক ওয়েব এক জিনিস। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এই দুইটা সম্পূর্ণ আলাদা। আমরা সাধারণত তিন ধরনের ওয়েবের কথা শুনি।
১) সার্ফেস ওয়েব (Surface Web)
২) ডিপ ওয়েব (Deep web)
৩) ডার্ক ওয়েব (Dark web)
সার্ফেস ওয়েব (Surface Web)
যেটা আমরা সবাই গুগলে বা বিভিন্ন সার্চ ইঞ্জিনে সার্চ দিয়ে সহজেই তথ্যগুলো পেতে পারি, এবং যে কেউ সেই তথ্য সংগ্রহ করতে পারে, সবার জন্য উন্মুক্ত, এটার জন্য আলাদা কোন পারমিশন বা এক্সেস এর দরকার হয় না সেটা হলো সার্ফেস ওয়েব ।
যেমন আপনি এই ওয়েবসাইট থেকে এই আর্টিকেল বা তথ্যটা পড়ছেন, এইটা রয়েছে সার্ফেস ওয়েবে। যেটা আপনি ইচ্ছে করলেই দেখতে পাবেন।
ডিপ ওয়েব (Deep Web)
ডিপ ওয়েব টা সার্ফেস ওয়েব এর মত এতটা উন্মুক্ত না যেটা যেকেউ অ্যাক্সেস করতে পারবে। এইগুলোর তথ্য পেতে বা অ্যাক্সেস করতে আলাদা করে পারমিশন বা অনুমতি লাগে। যেমন কোনো একটা প্রতিষ্ঠানের ওয়েবসাইটের ব্যাক এন্ড এটা তথ্যগুলো পাওয়ার জন্য আপনাকে কিন্তু অনুমতি নিতে হবে। সেই প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য কেউ কিন্তু এই তথ্য নিতে পারে না। সুতরাং ডিপ ওয়েব হচ্ছে ইন্টারনেটের সেই অংশটা যেটা কেউ অনুমতি ছাড়া প্রবেশ করতে পারে না।
ডার্ক ওয়েব (Dark Web)
ডার্ক ওয়েব হল ইন্টারনেটের সেই একটা অংশ যেটা ভিজিট করার জন্য স্পেশাল একটা ব্রাউজার লাগে, যেটা অনেক বেশি সিকিউর এবং যেখানে বেশিরভাগ সময়ই খারাপ কাজ হয়ে থাকে। যার কারণে ডার্ক ওয়েবে এতো কুখ্যাত ভাবে পরিচিত। ডার্ক ওয়েব ভিজিট করতে হলে আপনাকে সেই ওয়েবসাইটের লিংক জানতে হবে এছাড়া আপনি কোথাও সার্চ করে ডার্ক ওয়েবের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করতে পারবেন না। অনেকেই বলে থাকে যে ডার্ক ওয়েব ইন্টারনেটের সবথেকে বড় দুনিয়া। কিন্তু কথাটি ভুল। ডিপ ওয়েব ইন্টারনেটের সব থেকে বেশি জায়গা নিয়ে আছে, কারণ পতিতা ওয়েবসাইট এর যে তথ্যগুলো থাকে সেগুলো থাকেন ডিপ ওয়েবে। ডার্ক ওয়েবে ওয়েবসাইটে সংখ্যা খুবই কম। কিন্তু সেখানে কার্যকলাপ হয় খুবই মারাত্মক।
ডার্ক ওয়েবে কি ধরনের কাজ হয়?
অনেকেই বলে যে ডার্ক ওয়েবে শুধুমাত্র খারাপ কাজ হয়। কথাটা পুরোপুরি সত্যি নয়। ডার্ক ওয়েব শুধু খারাপ কাজের জন্যই তৈরি করা হয়নি কারণ ডার্ক ওয়েবের কিছু ভালো কাজ আছে।
আপনারা হয়তো অনেকেই জানেন যে বিভিন্ন বড় বড় সংস্থার ডার্ক ওয়েবে নিজস্ব ওয়েবসাইট আছে। এমনকি ফেসবুকের ও আছে। তারা বিভিন্ন সময়ে তাদের কিছু গোপনীয় কাজকর্ম ডার্কওয়েবে করে থাকে।
অনেকেই আবার মনে করে যে কেউ ডার্ক ওয়েবে ভিজিট করে খারাপ কাজ করতে পারবে বা অস্ত্র কিনতে পারবে। এটা সম্পূর্ণ ভুল। যে কেউই ডার্ক ওয়েব ভিজিট করতে পারবে কিন্তু সেখানে গিয়ে কোন কাজ কর্ম করতে পারবে না। কারণ এসব খারাপ কাজের তথ্য শুধু তাদের কাছেই থাকে যারা এসব কাজের সঙ্গে জড়িত।
ডার্ক ওয়েব ভিজিট করলে কি ট্রেস করা যায়?
অনেকেই মনে করেন যে ডার্ক ওয়েব ভিজিট করলে আপনাকে ধরতে পারবেনা বা আপনার সম্পর্কে কোন তথ্য নিতে পারবে না। এটা একটা অনেক বড় ধরনের ভুল ধারণা। বর্তমানে তথ্যপ্রযুক্তি এতটাই উন্নত হয়েছে যে আপনি যদি সেখানে গিয়ে সামান্য একটা ভুল করেন তাহলে কিন্তু আপনাকে খুঁজে বের করা সম্ভব। কখনো ভুলেও ডার্ক ওয়েব ভিজিট করার কথা ভাববেন না।
টর ব্রাউজার
অনেকেই মনে করেন যে ডার্ক ওয়েব ভিজিট করতে হলে টর ব্রাউজার ব্যবহার করতে হয়, টর ব্রাউজার ছাড়া অন্য কোনভাবে ডার্ক ওয়েব ভিজিট করা যায় না। ধারনাটা ভুল। টর ব্রাউজার হলো ডার্কওয়েবের একটিমাত্র সার্ভিস।
আমাদের শেষ কথা
ইন্টারনেট দুনিয়াটা খুবই ভালো আবার খুবই খারাপ। এর সঠিক ব্যবহার করতে পারলে ভালো না হলে খারাপ। আর ডার্ক ওয়েব সম্পর্কে আশা করা যায় অনেক কিছু জানতে পারছেন কিন্তু কখনো ভুলেও সেখানে প্রবেশ করার চেষ্টা করবেন না। কখনই নয়। সার্ফেস ওয়েবে আপনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাবেন, আপনার নিত্য প্রয়োজনীয় যত তথ্য দরকার এখানেই পাবেন।