ক্রিপ্টোকারেন্সি এক ধরনের সাংকেতিক ডিজিটাল মুদ্রা। শুধু ইন্টারনেট জগতে এই মুদ্রার ব্যবহার করা হয়। বাস্তবে এই ধরনের মুদ্রার কোন অস্তিত্ব নেই। এটি এমন এক ধরনের মুদ্রা যা কোন দেশের সরকার ছাপায়নি। এই মুদ্রাটি ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের দ্বারা ছোট ছোট কোডের মাধ্যমে তৈরি হয়েছে। আজকের এই লেখায় ক্রিপ্টোকারেন্সি সম্পর্কে আলোচনা করা হবে।
ক্রিপ্টোকারেন্সি কি |
ক্রিপ্টোকারেন্সি বুঝতে হলে ডিজিটাল মুদ্রা সম্পর্কে জানতে হবে। ১৯৬০ এর দশকে ডাইনারস ক্লাব (Diners Club) নামে একধরনের ক্রেডিট কার্ডের মাধ্যমে সর্বপ্রথম ডিজিটাল মুদ্রা ব্যবস্থার প্রচলন ঘটেছিল। ১৯৭০ সালের পর থেকে ক্রেডিট কার্ড এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন নিয়ে আসে। বর্তমানে আমরা ইন্টারনেট ব্যাংকিং বা মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে ডিজাটালই অর্থ আদান-প্রদান করি। এই সকল প্রতিষ্ঠান তাদের সার্ভিস চার্জ বাবদ বেশ কিছু টাকা কেটে রাখে। আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো আবার সরকার বা কেন্দ্রীয় ব্যাংক দ্বারা পরিচালিত হয়। যার ফলে অর্থনৈতিক হাতেগোনা কিছু লোকের কাছে আবদ্ধ থাকে। লেনদেনের ক্ষেত্রে অর্থের মালিক গোপন তথ্য প্রকাশ করতে বাধ্য হয় এবং নানা ধরনের বিধিনিষেধের বেড়াজালে আটকে পড়ে। অনলাইনের লেনদেনের ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বিষয়টি আরো ঝুঁকিপূর্ণ। ইন্টারনেটভিত্তিক ব্যাপক যোগাযোগ প্রচার হওয়ার পর থেকেই মানুষ এমন একধরনের মুদ্রার স্বপ্ন দেখে আসছে যা কোন প্রকার তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ ছাড়াই পরিচালিত হবে। ১৯৮৩ সালে ডেভিড চৌম ক্রিপ্টোকারেন্সি ধারণার প্রবর্তন করেন।
ক্রিপ্টোকারেন্সি মূল ধারনা হলো যে কেউ তার পরিচয় গোপন করে নিরাপদে সাধারণ মুদ্রার মতোই ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহার করতে পারবে। ক্রিপ্টোকারেন্সি ওয়ালেট খুলতে ব্যবহারকারীর নাম ঠিকানা বা কোনো ব্যক্তিগত তথ্যের প্রয়োজন হয়না। ক্রিপ্টোকারেন্সি সরাসরি এক ব্যক্তি থেকে অন্য ব্যক্তির একাউন্টে ট্রান্সফার হয়। এদের মাঝে কোনো ব্যাংক বা তৃতীয় পক্ষ খবরদারি করতে পারেনা। ক্রিপ্টোকারেন্সি ক্ষেত্রে যেহেতু কোনো তৃতীয় পক্ষ সেবা প্রদান করেনা তাই আলাদা করে কোনো চার্জ প্রয়োজন হয় না। ক্রিপ্টোকারেন্সি প্রথম মুদ্রার নাম বিটকয়েন। বিটকয়েনের জনপ্রিয় তারপর অসংখ্য ক্রিপ্টোকারেন্সি উদ্ভব হয়েছে। বর্তমানে চার হাজারেরও বেশি ক্রিপ্টোকারেন্সি রয়েছে।
ব্লকচেইন এর কারনে ক্রিপ্টোকারেন্সি উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। ব্লকচেইন হলেও তথ্য সংরক্ষণের এক নতুন পদ্ধতি। ব্লকচেইন কে হিসাবের খাতা খাতা বলা যায়। যা ব্যাংকের মতো ডিজিটাল অর্থ লেনদেনের তথ্য সংরক্ষণ করে। কিন্তু এই লেনদেনের হিসাব কোন প্রতিষ্ঠানের কাছে হিসাব থাকে না। বরং এই ডেটা ইন্টারনেটের মাধ্যমে পৃথিবীর যে কোন প্রান্ত থেকে দেখা যায়। প্রতিটি লেনদেন করার সাথে সাথে তথ্য হালনাগাদ হয়ে যায়।
ক্রিপ্টোকারেন্সি বিশাল হিসেব মিলানোর সহজ কাজ নয়। আবার এই কাজ করার জন্য কোন প্রতিষ্ঠান নেই। এই প্রক্রিয়াটিকে ঠিক রাখার জন্য একদল লোক স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করে। এর পরিবর্তে ব্লকচেইন তাদেরকে ক্রিপ্টোকারেন্সি প্রদান করে।
ক্রিপ্টোকারেন্সি কিভাবে তৈরি হয়?
মাইনিং কি?
ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবসা টিকিয়ে রাখার জন্য কাজ করে ডিজিটাল অর্থ উপার্জনন করাকে বলা হয় মাইনিং। মাইনিং করার জন্য শক্তিশালী কম্পিউটার প্রয়োজন হয়। এর পাশাপাশি এই কাজে বিপুল পরিমান বিদ্যুৎ খরচ হয়।
ক্রিপ্টোকারেন্সি সৃষ্টি হয়েছে তথ্য গোপন রেখে নিরাপদে লেনদেন করার জন্য। এছাড়াও এই মুদ্রা ব্যবস্থায় বেশ কিছু ঝুঁকি রয়েছে।
সবথেকে বড় ঝুঁকিটা হল আপনি যদি আপনার ক্রিপ্টোকারেন্সি ওয়ালেটের পাসওয়ার্ড ভুলে যান তাহলে আপনার টাকা আর কখনো ফিরে পাবেন না। কারণ এখানে পাসওয়ার্ড রিসেট এর কোনো সুযোগ নেই।
কখনো কম্পিউটার ক্রাশ করলে ক্রিপ্টোকারেন্সি চিরতরে হারিয়ে যাবে। জেনে রাখা ভালো এখন পর্যন্ত প্রায় ২৫ লক্ষ বিটকয়েন হারিয়ে গিয়েছে।
ক্রিপ্ট ব্যাঙ্ক কি?
ক্রিপ্টোকারেন্সি রাখার জন্য অনেকের থার্ড পার্টি ওয়ালেটের আশ্রয় নেয়। যাদেরকে ক্রিপ্টো ব্যাংক বলা হয়। এই ওয়ালেট গুলো ব্যাংকের মতো নয় মানি এক্সচেঞ্জ এর মত কাজ করে। এই সকল ওয়ালেট ব্যবহার করলে আপনি টাকাকে বিটকয়েনের রূপান্তর করতে পারবেন এবং বিটকয়েনকে টাকাতে রূপান্তর করে নিতে পারবেন।
ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহারে কোন দেশের সরকারের নিয়ন্ত্রণ না থাকায় অনেক দেশেই ক্রিপ্টোকারেন্সি ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ঝুঁকি থাকা সত্বেও ক্রিপ্টোকারেন্সি এক ধরনের বিপ্লবের মতো ছড়িয়ে পড়েছে।
Read more about Cryptocurrency here