ঘুমের
সমস্যা যাদের আছে তারা লেখাটি এড়িয়ে যাবেন
না প্লিজ। আজ তিনটি শুকনো খাবারের নাম বলব। ঘুমের প্রস্তুতি নিয়ে বিছানায় শোবার আগে
এই তিনটি খাবারে যেকোনো একটি ভালো করে চিবিয়ে চিবিয়ে খেয়ে। এক গ্লাস কুসুম গরম পানি
পান করুন। এরপর বিছানায় শোয়ার সময় গুনতে হবে না। ঘুমিয়ে যাবেন ম্যাজিকের মতো। চলুন
ঝটপট জেনে নেই কোন সেই তিনটি খাবার।
দ্রুত ঘুমানোর উপায় |
১. মৌরি:
মৌরিতে এমন সব উপাদান রয়েছে যা আপনার মানসিক উদ্বেগ স্নায়ুচাপ জনিত সমস্যা এবং বিনিদ্রা জনিত সমস্যা খুব দ্রুত নিরসন করতে পারে। যদি মৌরি রাতে ভালো করে চিবিয়ে খেতে পারেন তাহলে বিছানায় শোয়া মাত্রই ঘুম হবে। এখন যদি আপনার মনে প্রশ্ন আসে, যে আপনি মৌরি খেতে পারবেন কিনা বা শরীরের অন্য কোনো রোগ থাকলে মৌরি খাওয়া যাবে কিনা। তখন আপনাকে এইভাবে উত্তরটা দিতে পারি যে, মৌরিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম, অল্প পরিমাণে সোডিয়াম, জিংক, তামা, ম্যাঙ্গানিজ এবং সেলেনিয়া। এছাড়াও আছে ক্যালসিয়াম, ভিটামিন এ এবং আয়রন। এসব উপাদান গুলো আপনার শরীরে প্রবেশ করামাত্র এমন বিক্রিয়া শুরু করে যে শরীরের অন্যান্য আরো অনেক রোগ দ্রুত ভালো হয়ে যায়। কি কি রোগ ভাল হয় মৌরি খেলে?
মৌরির প্রধান কথাই হল আপনার হজম ক্ষমতাকে অনেক গুণ বাড়িয়ে দেবে। যদি রাতে আপনি মৌরি খান। সেটা আপনার ঘুম যেমন দ্রুত গতিতে আনবে। তেমনি আপনার পেট পরিষ্কার করবে দ্রুতগতিতে। কোষ্ঠকাঠিন্য বা পেটের গ্যাস, বদহজম, এসিডিটির একদম গোড়া থেকে নির্মূল হবে। এছাড়াও মৌরির আরো একটি বিশেষ গুণ হলো মৌরি দৃষ্টিশক্তি বাড়াতে দ্রুত সাহায্য করে। দৃষ্টিশক্তিকে কয়েকগুণ বাড়িয়ে দিতে সাহায্য করবে এই উপাদানটি। মৌরি কিন্তু একটি মসলা। অনেকেই বলবেন মৈরি চেনেন না। তাদের বলছি মৌরিকে অনেকে গুয়ামৌরি বা সাদা জিরা নামে ডেকে থাকেন। পানের সাথে এই মশলাটা খাওয়া হয় অথবা মুখসুদ্ধি হিসেবে হোটেলের এই মসলাটি খাওয়ার পরে দেওয়া হয়। এই মৌরি যদি আপনি খান তাহলে আপনার শরীরের ব্যথা দূর হবে।
বাতের ব্যথা বা আত্থারাইটিসের ব্যথা, হাড় জয়েন্টের ব্যথা এই সব সমস্যা দূর হবে।
ব্লাড প্রেসার নিয়ন্ত্রণে আসবে, হাই কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে আসবে, স্ট্রোকের সম্ভাবনা
একেবারেই থাকবে না। এছাড়া প্রতিদিন মৌরি খেলে আপনার ওজন একদম নিয়ন্ত্রণে থাকবে। যারা
ধূমপান করেন তারা যদি এইভাবে মৌরি খান তাহলে ধূমপানের ইচ্ছা ধীরে ধীরে কমতে থাকবে।
মৌরিতে যে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং ফ্ল্যাভোনয়েড রয়েছে তা ক্যান্সার
প্রতিরোধ করতে পারে। মৌরি এমন একটি খাবার বা এমন একটি মসলা যা আপনার সব রোগের উপশম
ঘটাতে পারবে। ঘুম ভালো হওয়ার জন্য এবং যে যে রোগের কথা বললাম এই সব রোগ থেকে মুক্তি
পাওয়ার জন্য হাফ চা চামচ মৌরি দানা খুব ভালো করে চিবিয়ে চিবিয়ে খেয়ে নিন। অথবা
১ চা চামচ মৌরি দানা এক গ্লাস উষ্ণ পানিতে মিলিয়ে খেয়ে নিন। মৌরি এই নিয়মে খেলে
সারারাত গভীরভাবে ঘুমাতে পারবেন। সকালে উঠে শরীরের কোন ক্লান্তি দুর্বলতা টের পাবেন
না। এই নিয়মে আপনি টানা ছয় মাস পর্যন্ত মৌরি সেবন করতে পারেন। চাইলে তারপরে কিছুদিন
বাদ দিয়ে আবার সেবন করতে পারবেন। কিন্তু ফলাফল পেতে আপনার এক রাতের বেশি সময় লাগবে
না।
২. লবঙ্গ:
লবঙ্গ এমন একটি মসলা বা এমন একটি খাবার যাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, পটাশিয়াম, জিংক। এছাড়াও আছে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, আছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এইসব উপাদান লবঙ্গ করে তুলেছে অনন্য। প্রতিদিন রাতে যদি ঘুমানোর আগে একটি বা দু'টি লবঙ্গ খুব ভালো করে চিবিয়ে চিবিয়ে খেতে পারেন। তাহলে আপনার ঘুম তো ভালো হবেই।
সেই সাথে দূর হবে শরীর থেকে আরো ছোট বড় সকল রোগ। যেমন আপনার ঠান্ডা, সর্দি ,কাশি বদহজম, গ্যাসটিক, কোষ্ঠকাঠিন্য এইসব সমস্যা একেবারে দূর হবে। এছাড়াও শরীরের ব্যথা সেটা পেশীর ব্যথা হোক কিংবা হাড় জয়েন্টের ব্যথা হোক সব ব্যথা দূর হবে। অস্টিওপোরোসিসের ঝুঁকিতে যারা রয়েছেন তারা অবশ্যই লবঙ্গ খাবেন। লবঙ্গ আসলে আপনার শরীরের ব্যথা মানে সবধরনের ব্যথা দূর করে। যেমন দাঁতের ব্যথা দূর করতে লবঙ্গ খুব ভালো কাজ করে। যাদের দাঁতের সমস্যা রয়েছে মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়া বা যেকোন সমস্যা। তারা যদি এইভাবে লবঙ্গ চিবিয়ে খান রাতে তাহলে এই সমস্যা দূর হতে দুই তিন দিনের বেশি সময় লাগবে না। লবঙ্গ আপনার মানসিক স্ট্রেস এবং উৎকণ্ঠাকে নিমেষেই কমিয়ে আনতে পারে। লবঙ্গ খেলে এইজন্য ঘুম তো ভালো হয়ই।
সেই সাথে শরীর এবং
মনের সব ক্লান্তি ঝরে যায়। যৌন শক্তি অনেক গুন বৃদ্ধি পায়। লবঙ্গে এমন এক এনজাইম
রয়েছে যা আমাদের হজম ক্ষমতাকে বহুগুণ বাড়িয়ে দেওয়ার পাশাপাশি ডায়াবেটিস রোগকে
নিয়ন্ত্রণ করে। ডায়াবেটিসে আক্রান্ত যেসব ব্যক্তি আছেন তাদের শরীরে প্রয়োজনীয় ইনসুলিন
তৈরি হয়না। লবঙ্গ শরীরের ভেতরেই এই ইনসুলিন তৈরিতে সাহায্য করে এবং রক্তের সুগারের
মাত্রাকে একদম নিয়ন্ত্রণে রাখে। তাই যদি আপনি যদি লবঙ্গ খান। তাহলে আপনার শরীরে কোন
রোগ থাকবে না। কারণ লবঙ্গ আপনার ব্লাড প্রেসারকে যেমন নিয়ন্ত্রণে রাখে। তেমনি ভাবে
হাই কোলেস্টরেলকে নিয়ন্ত্রণে আনে। তাই হার্ট সুরক্ষিত থাকে এবং লবঙ্গ শরীরের প্রয়োজনীয় অর্গান যেমন কিডনি
লিভার ফুসফুস সবকিছুকে একদম সজীব রাখে। তাই অবশ্যই আপনি ঘুমানোর জন্য লবঙ্গকে বেছে
নেবেন। লবঙ্গের মাথায় যে ফুলটি রয়েছে অবশ্যই ঐ ফুলসহ একটি বা দু'টি লবঙ্গ ভালো করে চিবিয়ে খেয়ে। এক
গ্লাস কুসুম গরম পানি পান করে বিছানায় যান এবং সারারাত নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে কাটান।
লবঙ্গ আপনি দীর্ঘদিন সেবন করতে পারেন। লবঙ্গ
সেবনের কোন পার্শপ্রতিক্রিয়া যেহেতু নেই। নিশ্চিন্তে আপনি লবঙ্গ সেবন করুন এবং সুস্থ
থাকুন।
৩.খেজুর :
ঘুমের জন্য খেজুর কেন খাবেন? আসলে খেজুর এমন একটি শুকনো ফল বা খাবার যা আপনার মানসিক উদ্বেগ দুশ্চিন্তাকে দ্রুতগতিতে হ্রাস করতে পারে এবং সেইসাথে আপনার মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতাকে অনেক গুণ বাড়িয়ে দিতে পারে। যারা নিয়মিত খেজুর খান। তারা বুঝবেন যে আপনাদের শরীরে কেন ক্লান্তি ভর করে না। খেজুর খেলে শরীর এতটাই সুস্থ থাকে যে আপনি সারাদিন কর্মব্যস্ততায় ডুবে থাকলেও আপনার শরীরে কোন ক্লান্তি অনুভব করবেন না।
খেজুরের রয়েছে প্রচুর পরিমাণে
ভিটামিন এবং সেইসাথে ক্যালসিয়াম ,আয়রন এবং প্রোটিন। খেজুর খেলে কোলেস্টরেল একদম নিয়ন্ত্রণে থাকবে।
কারণ খেজুরে কোনতো কোলেস্টরেল থাকেই না সেই সাথে খেজুর খেলে আপনার শরীরের বাড়তি ফ্যাট,
চর্বিও একদম ঝরে যাবে। খেজুরে যে পরিমাণ ক্যালসিয়াম
রয়েছে তা আপনার হাড়কে অনেক বেশী মজবুত করবে।
খেজুর খেলে শিশুদের হাড় দাঁত অনেক শক্ত হওয়ার পাশাপাশি মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা অনেকগুণ
বেড়ে যায়। খেজুর ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে পারে এবং সেইসাথে পেটের সব ধরনের সমস্যা
দূর করতে পারে কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে ডায়রিয়া আমাশয় এমনকি বদহজম, গ্যাস্ট্রিক সমস্যা
নির্মূল করতে পারে এই খেজুর। যকৃতের সংক্রমণে খেজুর খুব উপকারী। ঠান্ডা, সর্দি ,কাশি,
গলাব্যথা সবকিছুতেই এই খেজুর আপনাকে রক্ষা করবে। রক্তশূন্যতাও প্রতিরোধ করে এই খাবারটি।
সেই সাথে আপনার হার্টকে ভালো রাখবে এই ফল। যদি ঘুমাতে যাবার আগে মাত্র চারটি করে খেজুর
খেয়ে নিতে পারেন। তবে সারারাত কাটবে গভীর ঘুমের এবং পরের দিনও সুস্থ শরীরে ক্লান্তিহীনভাবে
পরিশ্রম করতে পারবেন। তবে যাদের ডায়াবেটিস রয়েছে তারা চারটি খেজুর খাবেন না। আপনার ডায়েট প্লান অনুযায়ী এবং অন্য কোন মিষ্টি
ফল খাবার খাচ্ছেন কিনা সেদিকে খেয়াল রেখে একটি বা দুটি খেজুর সতর্কতার সাথে খেতে পারেন।
তবে যাদের ডায়াবেটিস নেই তারা সারা বছরই এই ভাবে চারটি করে খেজুর খাবেন। নিশ্চিন্তে
ঘুমাবেন এবং সুস্থ থাকবেন।
লেখাতে একবার বলেছি ,তারপর আবারও বলছি আপনি এই তিনটি উপাদানের যেকোনো একটি ঘুমের প্রস্তুতি নেবার পরে বিছানায় যাবার আগে গ্রহণ করুন। আপনি চাইলে এই তিনটি উপাদান একসাথেও গ্রহণ করতে পারেন। এতেও আপনার শরীরে কোনো ক্ষতিকর প্রভাব পড়বে না। এই উপাদান তিনটি ভালো করে চিবিয়ে চিবিয়ে খেয়ে নিন। অথবা এর যেকোনো একটি উপাদান খুব ভালো করে চিবিয়ে খেয়ে এক গ্লাস উষ্ণ পানি পান করুন। তারপরে বিছানায়ে যান এবং চোখ বন্ধ করুন। ম্যাজিকের মত আপনার ঘুম চলে আসবে। তবে একটি কথা অবশ্যই আপনাকে মানতে হবে ঘুমের ৫ থেকে ৬ ঘন্টা আগে কোন ধরনের কোমলপানীয় অথবা চা কফি খাবেন না এবং ঘুমানোর আগে এক্সারসাইজ করেন না। ঘুমাতে যাওয়ার অন্তত এক ঘণ্টা আগে আপনার মোবাইল, কম্পিউটার অথবা টিভি দেখা বন্ধ করুন। ঘুম ছাড়া শরীর একদম ভালো থাকেনা । তাই অবশ্যই এই নিয়ম ফলো করুন এবং নিশ্চিন্তে একটি রাত ঘুমিয়ে কাটান।