যখন প্রথম আমাদের ত্বকের ব্রণের সমস্যা দেখা দেয় তখন আমরা আমাদের চারপাশ থেকে জানা সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি অবলম্বন করি। আর এটাকে আমাদের ত্বকের জন্য ভাল মনে করি, সেটা আসলে আমাদের ত্বকের জন্য ভালো নাকি খারাপ আদৌ কিছু না ব্যবহার করতে থাকি। আর এই কারণেই ব্রেনের অবস্থা খারাপ এর থেকেও খারাপ আকার ধারণ করে। কিন্তু আমাদের মধ্যে বেশিরভাগ মানুষই এটা জানার চেষ্টা করেন না ব্রণ আসলে কেন হয় এবং এর ধরন কি। কারণ ব্রণ ভিন্ন ভিন্ন রকম হয়ে থাকে। যেমন ব্ল্যাকহেডস, হোয়াইটহেডস ছোট পিম্পল আর বড় পিম্পল। একটা বিষয় খেয়াল করে দেখবেন আপনার ত্বকে ব্রণ উঠার পর কালো রঙের কিছু দানা দেখা যায়। এটা এগুলো ব্ল্যাকহেডস এবং হোয়াইটহেডস নামে পরিচিত। ব্ল্যাকহেডস ত্বকের বাইরে এসে অক্সিজেনের সংস্পর্শে কালো রং তৈরি করে আর হোয়াইট হেডস ত্বকের ভিতরে থাকে এবং সাদা বর্ণের হয়ে থাকে। যদিও আমাদের তকে ব্ল্যাকহেডস এবং হোয়াইটহেডস হওয়ার অন্যতম কারণ হলো ব্রণ। কিছু ছোট আকারের ব্রণ ত্বকের ওপর থেকে হয় আবার কিছু ব্রণ ত্বকের গভীরে পৌঁছে যায়। এগুলো আকারে বড় এবং ব্যথাদায়ক হয়। ব্রণ যেমনই হোক না কেন নিচের ধাপগুলো যদি আপনি অনুসরণ করেন তাহলে খুব দ্রুত এই সমস্যা থেকে মুক্তি পেয়ে যাবেন।
|
ব্রণ দূর করার কার্যকরী সহজ উপায় |
ব্রণ কেন হয়
ব্রণ সাধারণত বয়ঃসন্ধিকালে হরমোনের এক্সচেঞ্জের কারণে হয়ে থাকে। আবার কিছু ব্রণ ইনফেকশনের আকার ধারণ করে। আমাদের ত্বকে ছোট ছোট কোষ রয়েছে। এই কোষে ময়লা জমার কারণে ত্বকের ভেতর থেকে রাসায়নিক বর্জ্য বাইরে আসতে পারে না, ত্বকের মধ্যে থেকে যায় পরবর্তীতে সেটা ফুলে ওঠে এবং ত্বকের বাইরের ব্রণ হিসাবে বেরিয়ে আসে। যখন আমরা ভুল করে এই ব্রণ চাপ দিয়ে ফাটিয়ে ফেলি তখন লোম ছিদ্র খুলে যায় এবং বাইরের ব্যাকটেরিয়া সেখানে প্রবেশ করে। তখন এটা আরও অনেক বড় হয়ে যায় এবং বেশি সংক্রমিত হয়।
কিছু ব্রণ আছে যেটা আকারে ছোট, এগুলো ব্যাকটেরিয়ার কারণে হয়ে থাকে। কিছু ব্রণ শক্ত ও বেদনাদায়ক এগুলো ত্বকের বাইরে এসে ফুলে ওঠে। আবার কিছু ব্রণ আছে যেগুলো ত্বকের গভীরে পৌঁছায় সেগুলো বড় এবং ব্যথা দায়ক হয়।
ব্রণ হলে কি খেতে হবে এবং কি খাওয়া যাবেনা
আমাদের ত্বকের ধরন অনুযায়ী হজমক্রিয়া বাইরের ত্বকের সঙ্গে সংযুক্ত। আমরা যা খাই তার সরাসরি প্রভাব ত্বকের উপর পড়ে। তাই খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন ছাড়া ব্রণের হাত থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব। আমাদের প্রতিদিনের খাদ্যাভ্যাস ব্রণের বাড়া কমায় বিশেষ ভূমিকা রাখে। কিছু খাবার আছে যেগুলো খেলে ব্রণ বাড়তে থাকে কিন্তু তা আমরা জানিনা। আবার কিছু খাবার আছে যেগুলো ব্রণের ইনফেকশন কমাতে কাজ করে।
যে খাবারগুলো ব্রণ বৃদ্ধি করে
* চিনি বা চিনি আছে এমন খাবার ব্রণের বৃদ্ধি করে। যেমন কেক, চকলেট, আইসক্রিম, মিষ্টি ইত্যাদি।
* দুধ বা দুধ জাতীয় তৈরি খাবার ব্রণের বৃদ্ধি ঘটায়। যেমন ঘি, চিজ, মাখন, পনির, আইসক্রিম,
চকলেট।
* ভাজাপোড়া বা ময়দা দিয়ে বানানো খাবার ব্রণের বৃদ্ধি ঘটায়। যেমন চিপস, রুটি, পাস্তা, জাঙ্ক ফুড।
আপনার যদি ব্রণের সমস্যা থেকে থাকে তাহলে এগুলো খাওয়া আপনার একদমই উচিত নয়।
এখন কথা হল কেন এই খাবারগুলো খাওয়া যাবেনা, এই খাবার গুলো কিভাবে ব্রণের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
জাঙ্ক ফুড, দুধ বা চিনিজাতীয় খাবার আমাদের শরীরে ইনসুলিন লেভেল কে অনেক বাড়িয়ে ফেলে যার কারণে আমাদের ত্বকের তৈলাক্ততা অনেক গুণ বেড়ে যায়। এবং এই তৈলাক্ততা টক এর বাইরে আসতে পারে না এবং ব্রনের পরিমাণ বেড়ে যায়। আপনার শরীরে ব্রণের সমস্যা না থাকলেও চিনি দিয়ে তৈরি খাবার এবং জাঙ্ক ফুড কম খাওয়া উচিত।
একটা গুরুত্বপূর্ণ কথা আমাদের শরীরে পানির ঘাটতি কারণে সবার প্রথমে ডিহাইড্রেশন তৈরি হয়। যেটা শুধু আমাদের ত্বকের ক্ষতি করে না সারা শরীরের ক্ষতি করে থাকে। আপনার ত্বকে ব্রণ হোক কিংবা না হোক প্রতিদিন আপনাকে তিন থেকে চার লিটার পানি খেতে হবে। পানি আমাদের শরীরের বিষাক্ত টক্সিন নষ্ট করে।
যদি আপনার ত্বকে ব্রণ হয়ে থাকে তাহলে লাইফে কি কি পরিবর্তন আনতে হবে।
যখন আমাদের শরীরে স্ট্রেস হরমোন বেরিয়ে যায় তখন আমাদের দেহের সকল ক্রিয়া খারাপ হয়ে যায়। সেইসাথে চুলের ক্ষতি, দুর্বলতা, ব্রণ, কালো হয়ে যাওয়া, হার্টের রোগ, মাথা ব্যথা, চোখে জ্বালা ইত্যাদি সমস্যার জন্য হয়ে থাকে। এজন্য আমাদের সব সময় পজিটিভ ভাবতে হবে। এছাড়াও সময়মতো খাওয়া রাত না জাগা, পরিমাণমতো ঘুম খুবই জরুরী। সেই সাথে আপনি শারীরিক ব্যায়াম এবং মেডিটেশন করতে পারেন।
রোদ থেকে নিজেকে দূরে রাখুন।
সূর্যের আলোতে থাকা অতি বেগুনি রশ্মি ব্রণের অবস্থা খারাপ থেকেও খারাপ বানিয়ে ফেলে। আপনার যদি ব্রণ থেকে থাকে তাহলে রোদ থেকে যতটা সম্ভব দূরে থাকুন।
ব্রণ হলে সেটাকে চাপ না দেওয়া বা ফাটিয়ে না ফেলা
আমরা যখন ব্রণ কে চাপ দিই তখন সেটা বাইরে ফাটার সঙ্গে সঙ্গে ভেতরের দিকেও ফেটে যায়। যার কারণে ব্যাকটেরিয়া আরো দ্রুত ছড়িয়ে যায়। ফলে ব্রণ আমাদের পুরো মুখে ছড়িয়ে যায়। আর এটাই সবথেকে বড় কারণ ব্রণ দ্রুত বাড়তে থাকার।
আপনার ত্বক সবসময় পরিষ্কার রাখুন আর রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে আপনার ত্বক অবশ্যই ধুয়ে নিবেন। সারাদিন ধুলাবালির ভিতরে থাকার কারণে সেগুলো আমাদের ত্বকের জমতে থাকে। এর কারণে ইনফেকশন হওয়ার আশঙ্কা অনেক বেশি থাকে। এর জন্য ত্বক রাতে অবশ্যই পরিষ্কার করুন।
ব্রণ হলে কোন ধরনের ক্রিম বা হোম রেমেডি ব্যবহার করা উচিত এবং কোনটি ব্যবহার করা উচিত নয়।
ব্রণ আক্রান্ত ত্বকে কি লাগানো যায় এটা থেকে কি লাগানো যায় না এটা জানা জরুরী। ব্রণ আক্রান্ত ত্বকে সাবান, ফেসপ্যাক, ফেয়ারনেস ক্রিম এবং মেকআপ কখনো লাগানো উচিত নয়। কারণ ব্রণ থাকা অবস্থায় এগুলো ব্যবহার করলে মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে আপনার ত্বকের। সাবানের পরিবর্তে আপনি ফেসওয়াশ ব্যবহার করতে পারেন।
ত্বকে লাগানো যাবে এমন কিছু ঘরোয়া পদ্ধতি
ব্রণ আক্রান্ত ত্বকে ব্যবহার করার জন্য ঘরে তৈরি রেমেডি। এর জন্য আপনার প্রয়োজন পড়বে তাজা এলোভেরা, নিম পাতা এবং পুদিনা পাতা। বাজার থেকে কেনা অ্যালোভেরা থেকে গাছ থেকে তাজা এলোভেরা পাতা কেটে নিন। এই রেমেডি তৈরি করার জন্য পুদিনা পাতা এবং নিম পাতা ব্লেন্ড করে পিষে এক চামচ অ্যালোভেরা জেল এর সঙ্গে এক চামচ নিম পাতা এবং এক চামচ পুদিনা পাতা বাটা দিতে হবে। তারপর এই তৈরির করে আপনার মুখে মেখে সারারাত রেখে দিন। সকালে গুলো ধুয়ে পরিষ্কার করে নিন। এই তিনটি উপাদানের ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে সেটা আপনার ব্রণের সমস্যার জন্য খুবই কার্যকরী।