রান্না করতে হোক কিংবা রূপচর্চায় আমাদের অন্যতম একটি পরিচিত উপাদান হলো হলুদ। আমারো ছোট থেকেই হলুদের গুনাগুন সম্পর্কে কমবেশি জানি। শরীরের সমস্যা, ত্বকের সমস্যা, পেটের সমস্যা সবকিছুতেই সমানভাবে কাজ করে হলুদ। এছাড়াও বিভিন্ন অনুষ্ঠান বা শুভ কাজে হলুদের ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
কাঁচা হলুদের উপকারিতা |
কাঁচা হলুদের উপকারিতা
আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় রূপচর্চা কিংবা বিভিন্ন শারীরিক সমস্যার সমাধান করতে হলুদের ব্যবহার হয়ে আসছে। গবেষণায় দেখা গেছে হলুদে প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, এন্টিভাইরাল ও অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান সমূহ রয়েছে। এছাড়াও এন্টিফাঙ্গাল ও অ্যান্টি ডায়াবেটিকাল উপাদানসমূহ হলুদের গুনাগুন কে আরো কিছু বাড়িয়ে দিয়েছে। অনেকেই হলুদ গুঁড়ো দিয়ে কিংবা হলুদ মধু দিয়ে খেয়ে থাকে।
প্রায় ২৫০০ বছর ধরে হলুদের ব্যবহার হয়ে আসছে। হলদে থাকা উপাদানগুলো আপনার স্বাস্থ্যের কার্যকলাপগুলো বাড়িয়ে তোলে, যা আপনার শারীরিক সমস্যা হোক কিংবা ডায়াবেটিসের সমস্যা হোক। হলুদকে রোগ নিরাময় কারী উপাদান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
কাঁচা হলুদের উপকারিতা
হলুদে রয়েছে আয়রন, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন বি ৬, ফাইবার, কপার, পটাসিয়াম ইত্যাদি উপাদানসমূহ। আমাদের দৈনিক খাদ্য তালিকায় হলুদ টাকার ফলে এটি আমাদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলতে সাহায্য করে। তবে নিয়মিত হলুদ খাওয়ার আগে হলুদের উপকারিতা সম্পর্কে আমাদের জানা প্রয়োজন।
হলুদ লিভার পরিশুদ্ধ করে। আমাদের দেহের একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হল লিভার। হলুদের মধ্যে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যেকোনো ধরনের লিভারের রোগের থেকে মুক্তি পেতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গবেষণায় দেখা গেছে হলুদের মধ্যে থাকা কারকিউমিন উপাদান লিভারকে সুরক্ষিত রাখতে পারে। কারকিউমিন মূলত ফ্যাটি লিভারের চিকিৎসা ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এছাড়াও এর মধ্যে থাকা এন্টি ব্যাকটেরিয়াল উপাদান গুলো যেকোনো ধরনের খাবার থেকে হওয়া সংক্রমণকে রোধ করতে সাহায্য করে। ফলে লিভার জাতীয় রোগ হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়। এছাড়া হলুদের মধ্যে থাকা অন্যান্য উপাদান লিভার এর মধ্যে থাকার ক্ষতিকারক টক্সিন গুলো কে বের করে দিতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। ফলে লিভারের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়।
হলুদ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখে। রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান হলো হলুদ। গবেষণায় দেখা গিয়েছে সকালে খালি পেটে যারা কাঁচা হলুদ খেয়ে থাকেন, তাদের শরীরের মধ্যে এমন কিছু উপাদান এর মাত্রা বৃদ্ধি পেয়েছে, যার ফলে ডায়াবেটিস রোগীদের ইনসুলিনের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ফলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। তাই বলা যেতে পারে ডায়াবেটিসের মতো মারাত্মক রোগে যদি আক্রান্ত হতে না চান, তাহলে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে অবশ্যই কাঁচা হলুদ খেতে হবে। হলুদের তাকা কারকিউমিন অ্যান্টি ডায়াবেটিক এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। কারকিউমিন রক্তে তাকা দ্রবীভূত গ্লুকোজের মাত্রা কম করার পাশাপাশি রক্তের মধ্যে উপস্থিত ফ্যাট গুলোকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করে। কারকিউমিন রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা বৃদ্ধি করে যা রক্তের গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
হলুদ ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। কোলন, পেট এবং ত্বকের ক্যান্সারের মতো রোগ নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে হলুদ। হলুদের মধ্যে থাকা প্রতিরক্ষামূলক উপাদানগুলো ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা কম করতে পারে এবং ক্যান্সারের বিস্তারকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। গবেষণায় দেখা গেছে যারা দৈনিক কাঁচা হলুদ খান, তাদের বিভিন্ন ধরনের ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যায়। এছাড়াও হলুদ ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি বন্ধ করে শরীরকে সুস্থ রাখতে পারে।
হলুদ ওজন কমাতে সাহায্য করে। বর্তমানে দেহের অতিরিক্ত ওজন নিয়ে আমাদের মধ্যে অনেকেই সমস্যাই রয়েছে। তবে একটা সামান্য উপাদান দৈনিক গ্রহণের ফলে আপনি আপনার ওজন কে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন। কাঁচা হলুদের মধ্যে থাকা এন্টি ওবিসিটি উপাদান শরীরে বাড়তি মেদ জমতে দেয়না এবং দেহের মেটাবলিজমের হার বাড়িয়ে দেয়। যার ফলে শরীরে বাড়তি মেদ জমার সম্ভাবনা কমে যায়। হলুদের থাকা কারকিউমিন শরীরে ফ্যাট সংরক্ষণকারী কোষগুলি কে বাধা সৃষ্টি করে এবং বিপাক ক্রিয়া নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। যথাযথ খাদ্য নিয়ন্ত্রণ এবং ব্যায়াম করার পাশাপাশি খাদ্যতালিকায় দৈনিক হলুদ রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
হলুদ হৃদযন্ত্র কে সুরক্ষা প্রদান করে। সারা বিশ্বে প্রায় ৩১% মানুষ প্রতিবছর হৃদরোগের কারণে মারা যায়। হলুদের মধ্যে থাকা কারকিউমিন হৃদ রোগ প্রতিরোধ করে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে, উচ্চ রক্তচাপের কারণে হৃদরোগের মতো সমস্যাগুলোকে প্রতিরোধ করতে পারে হলুদ। এছাড়াও হলুদ দেহের খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। নিয়মিত হলুদ খেলে হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা কমে যায়। এছাড়াও কাঁচা হলুদ আপনার হৃদযন্ত্র কে বিভিন্ন ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করে। তাই সুস্থ থাকতে হলে আপনার খাদ্য তালিকায় হলুদ রাখার চেষ্টা করুন।
হজম ক্ষমতার উন্নতি করে হলুদ। গবেষণায় দেখা গেছে যারা নিয়মিত কাঁচা হলুদ খায়, তাদের ক্ষেত্রে হজমে সহায়ক পাচক রসের সংখ্যা কমে যায়। সেইসাথে এসিডিটি, অম্বল, পেটে ব্যথার মতো সমস্যা কমতে থাকে। এছাড়াও হলুদ হজম ক্ষমতা উন্নতি করে লিভার জনিত সমস্যা দূর করে। হলুদের মধ্যে থাকা উপাদানগুলো গ্যাস্ট্রিক এবং আলসারের সমস্যা দূর করতে পারে। তাই হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটাতে চাইলে নিয়মিত হলুদ খাওয়া প্রয়োজন।
হলুদ বাত ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। যেকোনো ধরনের ব্যথা কমাতে হলুদের ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে বাতের ব্যাথা, হাটুর ব্যাথা যে কোন পেশীর ব্যথার ক্ষেত্রে হলুদের ব্যবহার করা হয়ে থাকে। হলুদের মধ্যে থাকা অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি উপাদান গুলো শরীরের ভেতর থেকে ব্যথা নিরাময়ে সহায়তা করে। গবেষণায় দেখা গিয়েছে হলুদের মধ্যে থাকা কারকিউমিন যেকোনো ধরনের প্রদাহ সমস্যা দূর করতে সহায়তা করে। এছাড়াও যারা হৃদ রোগের সমস্যায় ভুগছেন তাদের ক্ষেত্রে হলুদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। হলুদ রক্তে অক্সিজেন প্রেরণ করে যা শরীরের বিভিন্ন অংশে পৌঁছে যেখানে যেখানে ব্যাথা সৃষ্টি হয় সেখানে রক্ত সঞ্চালন করে, যেকোনো ধরনের ব্যথা নিরাময়ে সহায়তা করে।
সর্দি কাশি নিরাময় করে হলুদ। বর্তমানে ঋতু পরিবর্তনের সময় একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হলো সর্দি কাশি। ছোট থেকে বড় প্রায় সকলেই এই সমস্যা লেগেই রয়েছে। কারো কারো আবার এলার্জি সমস্যার কারণে বা জ্বরের কারণে সর্দি হয়ে থাকে। তবে এই সমস্যা থেকে সহজে মুক্তি পাওয়া যায় হলুদের সহায়তায়। হলুদ সর্দি কাশি সারাতে বিশেষ সহায়তা করে। কাঁচা হলুদে থাকা ভিটামিন সি সর্দি কাশি সারাতে বিশেষ কার্যকারিতা করে থাকে। এছাড়াও হাঁপানির মতো শ্বাসজনিত রোগ গুলি কমাতে সাহায্য করে হলুদ। তাই সুস্থ থাকতে হলে সকালে খালি পেটে কাঁচা হলুদ খাওয়ার অভ্যাস তৈরি করুন।