কি হবে যদি পৃথিবীর ঘূর্ণন বন্ধ হয়ে যায়?
প্রথমত আমাদের ওজন বাড়বে. কিন্তু এই চিন্তাটা আমাদের চিন্তার লিস্টে একদম শেষে থাকবে। কেন না পরের কথা গুলো শুনলেই বুঝতে পারবেন। ঘূর্ণন গতি বন্ধ হওয়ার সাথে সাথে ঝড়ের সম্মুখীন হবো আমরা। এটা ভূপৃষ্ঠে থাকা মানুষদের জন্য মর্মান্তিক হলেও জানা সেই সময় বিমানে থাকবে তাদের জন্য কিন্তু ততটা মর্মান্তিক হবে না। আর বিশেষ করে ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনে থাকা অ্যাস্ট্রনটদের বেঁচে থাকার সম্ভাবনা আরও বেশি তবে এই অ্যাস্ট্রোনটের জন্য ভূপৃষ্ঠে তাদের জন্য ওয়েট করার মতো কেউ থাকবে না।
rotation of the earth |
যে বিমানগুলো যাত্রারত ছিল সেই গুলো যখন রানওয়েতে নামবে তখন তারা দেখবে পৃথিবীর সম্পূর্ণ একটি কবর স্থানে পরিণত হয়েছে। কিন্তু মেরুর কাছাকাছি যেসকল লোকেরা বসবাস করে তারা প্রথমেই সব কিছু না বুঝতে পারলেও কিছুক্ষণের মধ্যেই তাদের উপরেও এই প্রভাব এসে পড়বে। প্রথমে তারা সুরক্ষিত থাকলেও কিছুক্ষণের মধ্যে উচ্চ পরিমান হাওয়া প্রচুর গতি বেগে ছুটে আসবে।
পৃথিবীর সব সময় ঘুরে এর ফলে একটি বায়ু প্রবাহ সৃষ্টি হয়ে থাকে এবং যখনই পৃথিবীর ঘূর্ণন বন্ধ করে দেবে সেই গতিবেগের বায়ুপ্রবাহ গুলি অত্যন্ত বেগে পৃথিবীর সাথে সংঘর্ষ করবে। এই বায়ুপ্রবাহ এতটাই ক্ষমতাশালী হবে যে পৃথিবীর মাটি উপড়ে ফেলে দেবে। এর ফলে সৃষ্টি হবে দাবানল, আগ্নেয়গিরির অগ্নুৎপাত। যদি আপনি এই পরিমাণ বুঝতে না পারেন তাহলে কল্পনা করুন জাপানের হিরোশিমা নাগাসাকিতে পারমাণবিক বোমাবর্ষণর্টির ধ্বংসলীলা হয়েছিল তার সাথে 100 গুন করে দিন তবে আপনি ক্ষতির কল্পনা করতে পারবে।এরূপ অবস্থায় পৃথিবীর গ্রাভিটি বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে।
এবার আসি এবার দিন রাত্রির কথায় সাধারণত ২৪ ঘণ্টা একটি দিন পূরণ হয়, কিন্তু এখানে এক একটি দিন মানে ৩৬৪ দিন হয়ে গেছে। পৃথিবীতে এখন তো ঘুরছে না তাই এখন দিন রাতে তফাৎ থাকবেনা। যেখানে দিন ছিল সেখানে এখনো ৩৬৪ দিনের জন্য বা বলা ভালো সারা জীবনের জন্য ঠিক হয়ে যাবে। এবং যেখানে রাত হয়েছিল সেখানে সারা জীবনের জন্য রাত হয়ে যাবে।
এর ফলে কি প্রভাব পড়তে পারে পৃথিবীর উপর পৃথিবীর যে অংশটি দিনের অন্তর্গত মানে যে অংশটি সূর্যের দিকে মুখ করে থাকবে সেই অংশটি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। ওই অংশের তাপমাত্রা এতটাই বেড়ে যাবে যে ওই অংশগুলোতে প্রাণের সঞ্চার ঘটবেই না। কেউ যদি বেঁচে থাকে অর্থাৎ যদি কোন মানুষ বেঁচে থাকতে পারে তাহলে সেও মরে যাবে সূর্যের রেডিয়েশনের কারণে। এতটা সময় সূর্যের দিকে উন্মক্ত থাকার জন্য সেই অংশটিতে শুধুমাত্র অতিবেগুনি রশ্মি নয় অন্যান্য ক্ষতিকর রশ্মি গুলো বেশি প্রভাব ফেলবে। কারন পৃথিবীর ঘূর্ণন বন্ধ হওয়ার জন্য পৃথিবীর ম্যাগনেটিক ফিল্ড পুরোপুরি শূন্য হয়ে যাবে এবং বায়ুমণ্ডলের যে স্তর গুলো আমাদের এইসব রশ্মি থেকে সুরক্ষিত রাখব সেই স্তর গুলির আর কোনো অস্তিত্বই থাকবে না। কিছুক্ষণের মধ্যেই উঠবে কয়েক কিলোমিটার দীর্ঘ সুনামি এবং এইরকম ধ্বংসাশী প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে দিয়ে পৃথিবী থেকে প্রাণ হারিয়ে যাবে। এবং পৃথিবী গ্রহ অন্য গ্রহের মতন শুধুমাত্র একটি পাথরের গ্রহে পরিণত হয়ে যাবে।
কিন্তু সৌভাগ্যের বিষয় হচ্ছে এখনই এরকম কোন ঘটনার সম্ভাবনাই নেই। তবে এটা সত্যি যে পৃথিবীর ঘূর্ণন গতি ধীরে ধীরে কমছে। কিন্তু সেটা পরিমাণে সময়ের তুলনায় অনেক কম। কোন একদিন সত্যিই পৃথিবীর ঘূর্ণন কমে যাবে কিন্তু সেটা হতে অনেক লক্ষ কোটি বছর সময় লাগবে।
আরো পড়ুনঃ মহাকাশে ইন্টারনেট | আর্টেমিস প্রোগ্রাম | Artemis program