প্রথমত আমরা যেটি শুনেছি ব্লাক ফাঙ্গাস একটি নতুন রোগ কিন্তু আসলে ব্লাক ফাঙ্গাস নতুন রোগ নয়। এই ফাঙ্গাস ইনফেকশন এর প্রভাব বর্তমানে কিছুটা বেড়ে গেছে ঠিকই কিন্তু এই ফাঙ্গাস ইনফেকশন আগেও হতো, এখনো হচ্ছে। এই ফাঙ্গাসের আসল নাম হচ্ছে Mucormycosis । এই ফাঙ্গাসটি মিউকরলেস ফাঙ্গাসের একটি প্রজাতি। এই ধরনের ফাঙ্গাস কে সব সময় আমাদের পরিবেশে দেখতে পাই। যেমন কোন ফল বা সবজি পচে গেলে সেখানেও কালো রঙের ছত্রাক বা ফাঙ্গাসের সৃষ্টি হয়। তখন এগুলোকে আমরা কালো ছত্রাক বলে থাকি, এগুলোই আসলে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস। আর এই ফাঙ্গাস মানুষের শরীরের রোগ সৃষ্টি করতে সক্ষম। এটি হলো একটি সুবিধাবাদী সংক্রমণ। সাধারণত এই রোগটি হয় না, কিন্তু যখন কোন ছত্রাকটির জন্য সুবিধাবাদী পরিবেশ তৈরি হয় তখনই এই ফাঙ্গাস বা ছত্রাক আক্রমণ করে এবং ইনফেকশন ছড়ায়।
কখন এই সুবিধাবাদী পরিবেশ সৃষ্টি হয় :
যখন মানুষের ইমিউনিটি সিস্টেম দুর্বল হয়ে পড়ে। আগেই বলা হয়েছে এ ধরনের ছত্রাক আমাদের পরিবেশের সর্বত্র পাওয়া যায়। যদি কোনো সুস্থ এবং হেলদি মানুষের শরীরে এটি প্রবেশ করে তাহলে সেই মানুষটির কিছুই হবে না। সে বুঝতেই পারবেনা তার শরীরে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস ঢুকে পড়েছে। এরকম অবস্থায় ছত্রাকটি কোন ক্ষতি করতে পারবেনা, কিন্তু ইমিউনিটি কম যুক্ত মানুষের শরীরে এই ছত্রাক প্রবেশ করলে ছত্রাকটি ইনফেকশন ছড়াতে সক্ষম হবে। ইউনিটি দুর্বল হওয়ার অনেক কারণ হয়, ডায়াবেটিস, ক্যান্সার, বিভিন্ন অরগ্যান যেমন লিভার কিডনি সম্বন্ধিত রোগ ইত্যাদি। কিন্তু ইউনিটি কম থাকলেই এই রোগটি হবে তার কোনো মানে নেই। ইমিউনিটি কম থাকলেও এ রোগটি অনেক বেশি রেয়ার। পরিষ্কার স্থানে থাকলে এই রোগটি কখনোই হবে না। খাবার আগে সবজি ভালোভাবে পরিষ্কার করে নিলে এই রোগের সম্ভাবনা খুবই কম। তবে নিয়মিত নেশা জাতীয় দ্রব্য সেবন করলে এ রোগটি হতে পারে। কম বয়সী হেলদি মানুষের এই রোগটি হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম।
এই ছত্রাক মানবদেহে অনেকভাবে প্রবেশ করতে পারে, শব্দের সাধারণ এবং কার্যকর উপায় হচ্ছে বায়ুর মাধ্যমে।
এইসব ট্রাকের অনেক ছোট ছোট রেনু বায়ুতে উপস্থিত থাকে। আপনি যখন নিশ্বাস নিচ্ছেন তার মাধ্যমে এই রেনুগুলো আপনার ফুসফুস পর্যন্ত পৌঁছে যায়। এবং ফুসফুসের মধ্য থেকে ইনফেকশন ছড়িয়ে আপনাকে সংক্রমিত করে। এছাড়াও খাদ্যের মাধ্যমে ছড়াতে পারে, ধরুন আপনি একটি ফল কিনে আনলেন এবং ফলটিকে রেখে দিয়েছেন এবং সেই ফল সবে নষ্ট হতে শুরু করেছে ফলে এই পাঙ্গাশ ফলটির উপর জন্মাচ্ছে। ভুলবশত আপনি সেই ফলটি খেয়ে ফেললেন। তখন খাদ্যের মাধ্যমে আপনার পাকস্থলীতে ইনফেকশন হতে পারে।
আবার ধরুন আপনার শরীরের কোথাও ক্ষত রয়েছে, ছত্রাকের রেনু গুলো যদি সেখানে এসে পড়ে তাহলে সেখান থেকে ইনফেকশন ছড়াতে পারে। তবে সবচেয়ে সাধারণ ও কার্যকর উপায় হচ্ছে বায়ুর মাধ্যমে। এটি সরাসরি আপনার ফুসফুসকে সংক্রামিত করবে। নাক এবং সাইনাস এরিয়ায় এই ছত্রাক হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এর কারণে অনেক সময় ত্বকের রঙ ফ্যাকাশে হয়ে যায় এবং কালো কালো ছোপ তৈরি হয়। এখান থেকেই এই রোগটির নাম হচ্ছে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস।
এমন নয় যে এই ছত্রাকটি কালো রঙের দেখতে এর লক্ষণের কারণে মুখে কালো ছোপ তৈরি হয় বলে এই রোগের নাম দেয়া হয়েছে ব্ল্যাক ফাঙ্গাস। কিন্তু এর আসল নাম Mucormycosis ।
এই ইনফেকশন চোখ এবং ব্রেনেও হতে পারে যার জন্য মাঝে মাঝে অপারেশনের প্রয়োজন হয়। এই রোগটি হলো 7 দিনের মধ্যে ইনফেকশন ধরা পড়ে যায়। এই রোগের লক্ষণ কি হবে সেটা নির্ভর করে গুজরাটি শরীরের কোন অংশ আক্রমণ করেছে।
যদি সাইনাস এরিয়াতে হয় তাহলে দাঁতে ব্যথা :
*আফছা দেখা
*মাথা যন্ত্রনা
*সর্দি ও জ্বর হবে
*সবচেয়ে স্পষ্ট লক্ষণ হলো মুখে কালো ছোপ পড়বে।
আর যদি ফুসফুসে আক্রমণ করে তাহলে :
*কাশি
*জ্বর
*শ্বাসকষ্ট
*বুকে ব্যথা
*কফ
*রক্ত বমি হবে।
যদি ত্বকে ইনফেকশন হয় তাহলে :
*আক্রান্ত এলাকার পাশে কালো স্পট দেখা যাবে,
*পেটে হলে পেটে ব্যথা,
*জ্বর,
*সর্দি হবে।
তবে প্রথমেই যেটা বলা হয়েছে এই রোগ সবচেয়ে বেশি বায়ুর মাধ্যমে নিঃশ্বাসের দ্বারা সংক্রমিত হয়। তাই প্রথমের সিমটম গুলোকে বেশি মনোযোগ দিতে হবে।